মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্যের জেরে ভারতজুড়ে চলছে বিক্ষোভ। তবে উত্তর প্রদেশে যারা বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন কর্তৃপক্ষ তাদের বাড়ি ভেঙ্গে দিচ্ছে। এছাড়া দেশজুড়েই চলছে ব্যাপক ধরপাকড়। উত্তর প্রদেশের স্থানীয় কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
খবরে জানানো হয়, কাশ্মীরেও গ্রেপ্তার চলছে। সেখানে এক তরুণ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও পোস্ট করলে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ভিডিওতে তিনি নবী অবমাননার দায়ে বহিষ্কার হওয়া বিজেপি নেত্রী নূপুর শর্মাকে শিরশ্ছেদের হুমকি দিয়েছিলেন। আপলোডের পর দ্রুত ভিডিওটি ইউটিউবে ছড়িয়ে পড়ে। পরে অবশ্য ইউটিউব কর্তৃপক্ষ ভিডিওটি সরিয়ে নেয়।
ভারতের বেশ কয়েকটি রাজ্যেই গত কয়েক দিন ধরে বড় ধরনের বিক্ষোভ এবং ধরপাকড় চলছে। এমনকি কয়েকটি জায়গায় মুসলমান ও হিন্দুদের মধ্যে দাঙ্গার ঘটনা ঘটেছে। কোথাও কোথাও পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘাত হয়েছে।
রয়টার্স জানিয়েছে, উত্তর প্রদেশ পুলিশ রোববার পর্যন্ত তিনশ’র বেশি মানুষকে গ্রেপ্তার করেছে। উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ প্রশাসনকে যে কোনও ধরনের অবৈধ বিক্ষোভের চেষ্টা গুঁড়িয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। গত সপ্তাহে হওয়া দাঙ্গায় যারা উস্কানি দিয়েছে তাদের বাড়িঘরও তিনি গুঁড়িয়ে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানান রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র।
রোববার পুলিশের উপস্থিতিতে দাঙ্গায় উস্কানি দেয়ার অভিযোগে এক ব্যক্তির বাড়ি গুঁড়িয়ে দেয়া হয়। ওই ব্যক্তির মেয়ে একজন মুসলিম অধিকার আন্দোলনকর্মী। ওই রাজ্যের আরও দুই বাসিন্দার বাড়িও প্রশাসন ভেঙ্গে দিয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, গত শুক্রবার জুমার নামাজের পর তারা পাথর ছুঁড়ে ছিলেন। আদিত্যনাথের উপদেষ্টা মৃত্যুঞ্জয় কুমার টুইটারে একটি ছবি পোস্ট করেন। এতে দেখা যায়, বুলডোজার দিয়ে একটি বাড়ি ভাঙ্গা হচ্ছে। এর ক্যাপশনে তিনি বলেন, প্রতি শুক্রবারের পর শনিবার আসে। যদিও বিরোধীদের অভিযোগ, আদিত্যনাথ সরকার বিক্ষোভ থামাতে যা করছে তা অসাংবিধানিক।
রোববার জিন্দাল জানিয়েছে, তার পরিবারকে অব্যাহতভাবে হত্যার হুমকি দেয়া হচ্ছে। নয়া দিল্লিতে তার বাড়ির কাছে একটি বোমাও নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে। এই ইস্যুতে এখনও কোনো মন্তব্য করেননি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। শুক্রবারের নামাজের পর ভারতের অন্তত ৯টি রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় বিশাল বিশাল বিক্ষোভ হয়। ঝাড়খণ্ডের রাঁচিতে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে ২ জন নিহত হন। পরিস্থিতি মোকাবেলায় ভারতের বিভিন্ন এলাকায় ১৪৪ ধারাও জারি হয়।
উল্লেখ্য, নূপুর বিজেপির মুখপাত্র ছিলেন। মহানবীকে নিয়ে তার করা মন্তব্যের জেরেই ভারতজুড়ে ও ভারতের বাইরে প্রধানত মুসলিম দেশগুলোতে প্রতিবাদের ঝড় বয়ে যাচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কয়েকটি দেশ ওই বিতর্কিত মন্তব্যের জন্য ভারতকে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চাইতে বলেছে, অনেকে ভারতীয় দূতকে তলব করেছে। কোথাও কোথাও ভারতীয় পণ্য বর্জনের দাবিও উঠেছে। ভারত সরকার এই বিতর্ককে ঠাণ্ডা করতে চেষ্টা করছে। তারা বলছে, এমন মন্তব্য দেশের ‘বিচ্ছিন্ন কয়েকজনের দৃষ্টিভঙ্গি’। সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি এই বক্তব্যে প্রতিফলিত হয়নি। ক্ষোভ প্রশমিত করতে বিজেপিও এরই মধ্যে নূপুরের সদস্যপদ স্থগিত এবং তার পক্ষে সাফাই গাওয়া নবীন কুমার জিন্দালকে বহিষ্কার করেছে। দিল্লিতে তাদের বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অবমাননাকর পোস্ট দেয়ায় কানপুরে বিজেপির এক যুবনেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে তাতে আন্দোলন থামছে না। মুসলিমদের দাবি নূপুর শর্মাকে গ্রেপ্তার করতে হবে।