রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির আজকের মহাসমাবেশ ঘিরে রাজধানীতে ব্যাপকভাবে গ্রেপ্তার ও ধরপাকড় চলছে বলে অভিযোগ করেছে দলটি। পুলিশের এই অভিযানে গ্রেপ্তার অন্তত ৪৪৭ জনকে গতকাল বৃহস্পতিবার (২৭ জুলাই) ঢাকার আদালতে হাজির করা হয়। তাদের মধ্যে ৯৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ভবঘুরে, অভ্যাসগত অপরাধী বা কোথাও একত্র হওয়ার বিষয়ে সন্তোষজনক ব্যাখ্যা না দিতে পারার অভিযোগে।
রাজধানীর ধানমন্ডি, বংশাল ও কোতোয়ালি থানার পুলিশ এই ৯৬ জনকে ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪, ৫৫ ও ১৫১ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে বৃহস্পতিবার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে নেয়। পরে তাদেরকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত।
ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারায় বলা হয়েছে, সন্দেহের বশবর্তী হয়ে পরোয়ানা ছাড়া যেকোনো ব্যক্তিকে পুলিশ গ্রেপ্তার করতে পারবে। ৫৫ ধারা অনুযায়ী, ভবঘুরে, অভ্যাসগত অপরাধে জড়িত ব্যক্তিকে বিনা পরোয়ানায় পুলিশের গ্রেপ্তারের ক্ষমতা রয়েছে। ১৫১ ধারার ভাষ্য হলো, আমলযোগ্য অপরাধের ষড়যন্ত্রের কথা জানতে পারলে পরোয়ানা ছাড়াই যেকোনো ব্যক্তিকে পুলিশ গ্রেপ্তার করতে পারবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ভাষ্য, বেশ কিছুদিন ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী দলের রাজপথে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি হলেও বড় কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। তবে দুই দলের কর্মসূচি ঘিরে হঠাৎ রাজধানীজুড়ে পুলিশি তৎপরতা ও শত শত গ্রেপ্তারের ঘটনাকে কেউ কেউ রাজনৈতিক দৃশ্যপটের নতুন মোড় বলে মনে করছেন। চলমান রাজনৈতিক সংকট উত্তরণে বিভেদরেখা আরও স্পষ্ট হওয়ার শঙ্কা কারও কারও।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রহমান বলেন, বিএনপিসহ একটি অশুভ রাজনৈতিক শক্তি দেশে নৈরাজ্যকর অবস্থা সৃষ্টির জন্য ষড়যন্ত্র করে আসছে। তারা আন্দোলন ও সমাবেশের নামে জ্বালাও-পোড়াও, গাড়ি ভাঙচুর ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড সংঘটিত করে থাকে। এটাই দেশের মানুষের দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেমন তাদের জায়গা থেকে দৃষ্টি রাখবে, আমরাও রাজনৈতিকভাবে এগুলো মোকাবিলার পাশাপাশি সন্ত্রাস-নৈরাজ্যের অপচেষ্টার বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিরোধ গড়ে তুলব।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, দেশের এমন কোনো সেক্টর নেই, যেখানে ক্ষমতাসীন সরকার ধ্বংস করেনি, দলীয়করণ করেনি। সীমাহীন লুটপাট আর অর্থ পাচারের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করা হয়েছে। একটা সময়ে শান্তিপূর্ণ জনতা ঘুরে দাঁড়ায় এবং গণঅভ্যুত্থান সৃষ্টি করে। সরকারের কোনো ভয়ভীতি আর নির্যাতন গণঅভ্যুত্থানকে ঠেকাতে পারবে না। জনগণ এখন জীবন দিতেও প্রস্তুত।
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশ কর্মসূচি ঘিরে হঠাৎ করে পুরোনো ও নতুন গায়েবি মামলায় পুলিশ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করছে।
রাতের আঁধারে বিএনপির নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তারের অভিযোগের বিষয়ে গতকাল সাংবাদিকদের ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক বলেন, কোনো রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে অভিযানে নামেনি পুলিশ। এ ধরনের কোনো অভিযোগও নেই। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে দেখব। যাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে, তারা সন্দেহভাজন বা নিয়মিত মামলার আসামি। অনেকে ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি। আশুরা উপলক্ষে এটি ডিএমপির নিয়মিত অভিযান। ২০১৫ সালে তাজিয়া মিছিলে বোমা হামলা হয়েছিল। এটি আমাদের নিয়মিত অভিযানের অংশ, এটি চলবে।
খুলনা গেজেট/এসজেড