পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতাসীন তৃণমূল দলে এবার বড়সড় ভাঙন। আর এই ভাঙন আশঙ্কা আরো তীব্রতর হল শুক্রবার তৃণমূল মন্ত্রিসভার গুরুত্বপূর্ণ সদস্য শুভেন্দু অধিকারীর পদত্যাগের ঘটনাকে কেন্দ্র করে। এদিন তিনি পরিবহন মন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগপত্র পৃথক পৃথক ভাবে রাজ্যপাল জগদীশ ধনকড় ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির কাছে পাঠিয়ে দেন।
শুধু তাই নয়, এর আগে তিনি রাজ্য সরকারের জেড প্লাস নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রত্যাখ্যান করেন। ইতিমধ্যেই তিনি পরিবহণ মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ হুগলি রিভার ব্রিজ কমিশনের চেয়ারম্যান পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন। এমনকি হলদিয়া ডেভলপমেন্ট অথোরিটির চেয়ারম্যান পদ থেকেও পদত্যাগ করেছেন। পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক মহল মনে করছে, শুভেন্দুর কেবল বিধায়ক পদ ও তৃণমূলের প্রাথমিক সদস্যপদ ছাড়া আর কিছুই রইল না।
রাজনৈতিক মহল এখন মনে করছেন, শুভেন্দু যেভাবে একের পর এক তৃণমূল সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলি ছাড়ছেন তাতে তৃণমূলের বড়সড় ভাঙন শুধু সময়ের অপেক্ষা । তার সঙ্গে রয়েছে অনেক মন্ত্রী, বিধায়ক ও সাংসদ। রাজনৈতিক পর্যবক্ষেকরা মনে করছেন, শুভেন্দু যদি ষাট থেকে সত্তর জন বিধায়ককে নিয়ে চলে যান সেক্ষেত্রে তৃণমূল সরকারের অস্তিত্ব নিয়ে ঘোর আশঙ্কা রয়েছে।
এই নভেম্বরের শেষে ও ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ও বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা পশ্চিমবঙ্গ সফরে আসছেন। তার আগে শুভেন্দুর এই একের পর এক পদত্যাগ তার বিজেপিতে যোগদানকে ইঙ্গিতময় করে তুলছে। রাজ্যের রাজনৈতিক মহলের দাবি, শুভেন্দুর অনুগামী সিরাজ খান বিজেপিতে যোগদান করেছেন। তার অনুগামীদের মধ্যে অন্যতম কোচবিহারের তৃণমূল বিধায়ক মিহির গোস্বামী ইতিমধ্যে দিল্লি চলে গেছেন বিজেপিতে যোগ দিতে।
সিঙ্গুরের জমি আন্দোলনের প্রাণপুরুষ বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য আজ বিদ্রোহী। তিনিও দল ছাড়ার পথে। একের পর এক বিদ্রোহ তৃণমূলকে কার্যত বড়সড় ভাঙনের পথে নিয়ে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে । পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে একটা সঙ্কটের কালো মেঘ।
বিগত কয়েক মাস তৃণমূলের সঙ্গে শুভেন্দু অধিকারীর বনিবনা হচ্ছিল না। তার অনুগামীরা তৈরি করেন ‘আমরা দাদার অনুগামী’ নামে একটি বিকল্প সংগঠন । তৃণমূল সুপ্রীমো মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিকে তোয়াক্কা না করে সংগঠনটি শুভেন্দুর নেতৃত্বে জেলায় জনসংযোগ সভা করছিল। তাতে কাতারে ভিড় হচ্ছিল। সিঙ্গুর ও নন্দীগ্রাম কৃষি জমি আন্দোলন২০১১ সালে তৃণমূলকে ক্ষমতায় আসতে সাহায্য করে। নন্দীগ্রাম কৃষি জমি আন্দোলনের প্রধান কারিগর শুভেন্দু অধিকারী । আজ সেই শুভেন্দু নানান গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে পদত্যাগ তৃণমূলকে অনেকটাই ব্যাকফুটে ফেলে দিল বলে রাজনৈতিক মহল মনে করছে।
তার এই পদত্যাগ প্রসঙ্গে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি ও লোকসভার বিরোধী দলনেতা অধীররঞ্জন চৌধূরী বলেন, তৃণমূল তাসের ঘরের মত ভেঙে যাবে। শুভেন্দুর পদত্যাগ তার একটি ইঙ্গিত ।
খুলনা গেজেট/কেএম