অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় এখন ব্যাংকের মাধ্যমে বেশি পরিমাণ রেমিট্যান্স আসছে। রপ্তানি আয়ও বেশ ভালোর দিকে বলে দাবি করছে সরকার। তবুও দেশের ব্যাংকগুলোতে মার্কিন ডলারের সংকট। পরিস্থিতি সামাল দিতে বাড়তি দামে রেমিট্যান্সের মার্কিন ডলার কিনছে বেশিরভাগ ব্যাংক। তবুও কোনোভাবেই এই সংকট থেকে বের হতে পারছে না ব্যাংকগুলো।
আজ সোমবার (১৯ মে) দেশের ব্যাংকগুলো এক ডলার বিক্রি করছে ১২২ টাকায়, কিনছে ১২১ টাকায়। খোলাবাজারে (মানি এক্সচেঞ্জ হাউস) এক ডলার বিক্রি করছে ১২৭ টাকায়, কিনছে ১২৬ টাকায়। খোলাবাজারে ডলার পাঁচ টাকা বেশি দরে কেনাবেচা হচ্ছে।
মানি এক্সচেঞ্জ হাউসে ডলার পাঁচ টাকা বেশিতে কেনাবেচার প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান জানান, এটা রীতিমত অন্যায়। এতবেশি দরে ডলার কেনাবেচার কোনো সুযোগ নেই, এ বিষয়টি আমরা দেখছি। যারা এসব কাজ করছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। ব্যাংক থেকে এতবেশি দরে মানি এক্সচেঞ্জে ডলার কেনাবেচা হচ্ছে, এটা প্রমাণিত হলে মানি এক্সচেঞ্জকে অর্থদণ্ড করা হবে। অভিযোগ গুরুতর হলে লাইসেন্স বাতিলও হতে পারে।
সরেজমিনে দেখা যায়, ব্যাংকে চলছে ডলারের সংকট। কিন্তু বাইরে তেমনটি নেই। কিছু ব্যাংকে ডলার পেলেও চাহিদার অনেক কম পাচ্ছেন গ্রাহক। এতে ব্যাংকে বাজার দরে ডলার ঠিকঠাক বেচাকেনা হলেও ব্যাংকের বাইরে খোলাবাজারে লাগামহীন দরে বেচাকেনা হচ্ছে। এতে এখন গুনতে হচ্ছে প্রতি ডলারের জন্য পাঁচ টাকা বেশি। যদিও বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, ডলারের দাম যাতে অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে না যায়, সে জন্য কঠোর নজরদারি করা হচ্ছে। পাশাপাশি অতি জরুরি প্রয়োজনে ডলারের চাহিদা মেটাতে রিজার্ভ থেকে ৫০ কোটি ডলার দিয়ে তহবিল গঠন করা হয়েছে।
মতিঝিলে আদমজী কোর্ট ভবনে কথা হয় হামজা ব্যাপারীর সঙ্গে। তিনি বলেন, বড় ছেলে বিদেশে যাবে, ডলার প্রয়োজন। ব্যাংকে চাহিদা অনুযায়ী ডলার পাচ্ছি না। প্রয়োজন দুই হাজার ৫০০ ডলার। ব্যাংক দিচ্ছে ২০০ ডলার, বেশি জোর দিলে ৩০০ ডলার। মানি এক্সচেঞ্জগুলোতে ঘুরছি। এখানে ব্যাংক থেকে অনেক বেশি দর চাইছে। ডলারে পাঁচ টাকা বেশি চাইছে। এক ডলার চাইছে ১২৭ টাকা।
কথা হয় ব্যবসায়ী আবির হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ব্যবসার কারণে ডলার কিনতে হচ্ছে। এলসিসহ নানা কাজে ডলার লাগে। ব্যাংকে এখন আগের মতো চাহিদা অনুসারে ডলার পাই না। যা পাই, তা অতি অল্প। তাই ডলারের জন্য সবসময় খোলাবাজারে আসতে হয়। অবশ্য এখানে বেশি দর দিয়ে কিনছি। কিন্তু কী আর করার এখন, ব্যবসা চালিয়ে যেতে হবে।
বেশি দরে ডলার বেচাকেনা প্রসঙ্গে জনতা ব্যাংকের সিনিয়র কর্মকর্তা বেনজীর আহমেদ বলেন, চাহিদার তুলনায় ডলার কম। তারপর সাধ্য মতো চেষ্টা করছি গ্রাহকদের অভাব মেটাতে। তিনি বলেন, যেসব গ্রাহকের কাছ ডলার আছে, তারা বেশি দর পেতে খোলাবাজারে বিক্রি করছে। ফলে গ্রাহকদের সেই ডলার আমরা পাচ্ছি না। আবার যেসব গ্রাহক আমাদের কাছে আসছে ডলার কিনতে, ডলার সংকটের কারণে তাদের চাহিদা অনুযায়ী ডলার দিতে পারছি না। তাই অনেকটা নিরুপায় হয়ে বেশি দরে খোলাবাজার থেকে ডলার কিনতে হচ্ছে গ্রাহকদের। একই প্রসঙ্গে উত্তরা ব্যাংকের সিনিয়র কর্মকর্তা আল আমিন মুন্সি বলেন, চাহিদার তুলনায় ডলার কম। গ্রাহকদের চাহিদা অনুসারে দেওয়ার চেষ্টা করছি। অনেক ক্ষেত্রে পারছি না।
এদিকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে দীর্ঘ দর কষাকষির পর সম্প্রতি মার্কিন ডলারের দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে পরিবর্তন এনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ডলার কেনা ও বেচার ক্ষেত্রে দর কী হবে, তা ব্যাংক ও গ্রাহকের ওপর ছেড়ে দিয়েছে। অর্থাৎ ডলারের দর এখন বাজার ভিত্তিক। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের তদারকি জোরদার আছে। আইএমএফের ঋণের শর্তপূরণের অংশ হিসেবে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। যদিও এ পদ্ধতি পুরোপুরি বাজার ভিত্তিক হবে কিনা, তা নিয়ে এখন প্রশ্ন রয়েছে অনেকের।
খুলনা গেজেট/এমএনএস