খুলনা, বাংলাদেশ | ১৩ কার্তিক, ১৪৩১ | ২৯ অক্টোবর, ২০২৪

Breaking News

  দেশে ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ৩ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১১৯৭
  খুলনার খালিশপুরের আলোচিত জাহিদ হত্যা মামলায় ৫ জনের মৃত্যুদন্ড, খালাস ৭

বোরোর মাঠে ব্লাস্টের আক্রমণ, দিশেহারা কৃষক

নিতিশ সানা,  কয়রা

অনাবৃ‌ষ্টি‌-অ‌তিবৃ‌ষ্টির পাশাপা‌শি ডিজেল-সা‌র-শ্রমিকের মজুরি বৃ‌দ্ধিতে এবার আমন চা‌ষে বেগ পে‌তে হ‌য়ে‌ছে উপকূলীয় অঞ্চল কয়রার চা‌ষি‌দের। আমনের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে বো‌রো আবা‌দে আগ্রহ বাড়‌লেও ফলনের মুখে মাজ্রা ও ব্লাস্টের আক্রমণে দিশেহারা কৃষক। ফলন ভালো হলেও ছত্রাক জাতীয় ব্লাস্ট রোগের কারণে ক্ষেতের কাঁচা-পাকা ধান নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। উৎপাদন খরচ নিয়ে হিম‌সিম খে‌তে হ‌চ্ছে চাষিদের। অনেক কৃষকদের অভিযোগ কৃষি অফিসের পরামর্শ না পেয়ে কোম্পানি ও কীটনাশক ব্যাবসায়ীদের কাছ থেকে পরামর্শ নিচ্ছেন তারা।
উপজেলা কৃষি অধিদপ্তরের সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ৪ হাজার ৮৪৮ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রায় ৪ হাজার ৯২৫ হেক্টর জমিতে চলতি মৌসুমে  হাইব্রিড ইস্পাহানী -৬,ইস্পাহানী -৮,তেজগোল্ড এবং উপশি ব্রি ৬৭,ব্রি ২৮,ব্রি ৮১,ব্রি ৮৬,বিনা ১০ জাতের ধান আবাদ হয়েছে।
আমনের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ব্যাংক থেকে ৫৫ হাজার টাকা লোন করে প্রতি বিষা জমি দুই হাজার টাকা করে লিছ নিয়ে  সাড়ে তিন বিঘা জমিতে বোরো চাষ করেন মহারাজপুর গ্রামের কৃষক কামরুল ইসলাম। ডিজেল, সার-কিটনাশক ও শ্রমের মূল্য বৃদ্ধির  কারনে প্রতি বিঘা জমিতে প্রায় ১৫ হাজার টাকা করে সাড়ে  ৩ বিঘা জমিতে প্রায় ৫০ হাজার টাকা করচ হয়েছে। বোরোর ফলনও ভালো হয়েছিল। কিন্তু হাঠাৎ মাজড়া ও ব্লাষ্ট রোগ লাগায় তার ২ বিঘা জমির ধান পুরোটায় নষ্ট হয়েছে। বাকী এক বিঘার অবস্হাও খুব একটা ভালো না।এখন খরচের টাকা তোলা নিয়ে  চিন্তায় আছেন কামরুল ইসলাম।
এসময় তিনি আরও বলেন,ধানে প্রথমবার সার দেওয়ার ২৫ দিন পর থেকে পাতা ফ্যাকাসে হতে শুরু করে।এসময় আমি বুঝে উঠতে না পেরে শুধু বিষ প্রয়োগ করি।তাতে কোন কাজ না হওয়ায় অফিসের লোকের সহযোগীতা না পাওয়ায় ক্ষেত দেখাতে কোম্পানির লোক ডেকে আনি।কোম্পানির লোক আসলে জানতে পারি ধানে ব্লাষ্ট রোগ লেগেছে।
একই গ্রামের কৃষক আব্দুস সালাম জানান, আমন ধান ভালে হওয়ায় দুই হাজার টাকা করে প্রতি বিষা জমি লিছ নিয়ে দুই বিষা জমিতে এবছর প্রথম বোরো ধান রোপন করি।কৃষি অফিসের সহযোগীতা না পাওয়া ও পূর্বের  কোন অভিজ্ঞাতা না থাকায় মাজরা ও ব্লাষ্টের আক্রমণে আমার অধিকাংশ ধান ক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে।
শুধু কামরুল ইসলাম কিংবা কৃষক আব্দুস সালাম নয় এরকম অবস্হা কয়রার অধিকাংশ কৃষকের। এমতাবস্থায় বোরো রোপণের খরচ তোলা নিয়ে শংঙ্কায় কৃষকেরা।অপরদিকে কৃষি কর্মকর্তাদের সহযোগীতা না পাওয়ায় কৃষকের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সাধক ঢালী বলেন, কম সময়ে ফলন বেশি হওয়ায় ব্র্রি-২৮ জাতের ধানের প্রতি কৃষকের আগ্রহ বেশি। ব্লাস্ট রোগ শুধু ব্রি-২৮ জাতের ধানেই হয়। এই রোগ হলে ধানগাছের পাতা কালো ও শীষ শুকিয়ে নষ্ট এবং অল্প সময়ের মধ্যে ক্ষেতের প্রায় সব ধান চিটা হয়ে যায়। আর কোনো ক্ষেতে এই রোগ হলে পাশের ভালো ধান ক্ষেতে ওষুধ না দিলে রাতারাতি ব্লাস্ট রোগ ওই সব ক্ষেতের ধানও নষ্ট করে দিতে পারে। কারণ ব্লাস্ট রোগটি মূলত আবহাওয়াজনিত কারণে বাতাসের সঙ্গে ছড়ায়। দিনে গরম রাতে ঠাণ্ডা অথবা রাতে গরম দিনে ঠাণ্ডা অর্থাৎ তাপমাত্রা ওঠানামা করলে রোগটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা অসীম কুমার দাস বলেন, হঠাৎ আবহাওয়া পরিবর্তনের ফলে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হওয়ায় ব্লাস্টের জন্য উপযুক্ত সময়। তবে ব্রি-২৮ জাত ও উফশি জাতের কিছু  ধানের জন্য ক্ষতিকর। আমাদের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা মাঠ পর্যায়ে ব্লাস্টের প্রচার প্রচারণা চালাচ্ছে। এছাড়  একটি টিম মাঠে মাঠে কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছে।  তবে আবহাওয়া ঠিক না হওয়া পর্যন্ত ব্লাস্ট নির্মূলে কঠিন হবে।
খুলনা গেজেট/কেডি




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!