বাঙালির প্রানের উৎসব পহেলা বৈশাখ এর বাকি আর মাত্র কয়েকটা দিন। এ উৎসবকে বরণ করতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন ছোট-বড় সব বয়সের মানুষ। পহেলা বৈশাখের আনন্দকে ধরে রাখতে দেশের বিভিন্ন স্থানে আয়োজন করা হয় বৈশাখী মেলার। এ মেলা ও সংস্কৃতি পালনে চাই মাটির তৈরী রং-বেরংয়ের নকশা করা সব জিনিসপত্র। আর তাই পহেলা বৈশাখকে সামনে রেখে মাটির আসবাবপত্র তৈরীতে ব্যস্ত সময় পার করছেন পালপাড়ার কারিগরেরা।
গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উজেলার হিরন গ্রামের পালপাড়া। পহেলা বৈশাখকে সামনে রেখে পাল সম্প্রদায়ের নারী –পুরুষের দক্ষ হাতে সুনিপুন নৈপুন্যে তৈরী হচ্ছে ঐতিহ্যের নানা সামগ্রী। মাটির বউ-পুতুল, হাতি, ঘোড়া, কাঠাল, কলশ, সরা, সখের হাড়ি, দেব-দেবীর মুর্তিসহ তৈরী হচ্ছে নিত্য প্রয়োজনীয় তৈজস পত্র। আর এসব মাটির তৈরী জিনিসপত্র ছাড়া যেন বাঙালির প্রানের উৎসব জমেই না। এসব তৈজস পত্র নেয়া হবে জেলার বিভিন্ন মেলায়। বৈশাখী মেলায় এমন বর্নিল মৃৎশিল্পের কদর থাকায় মৃৎশিল্পিরাও তাদের পণ্য নিয়ে আসেন মেলায়।
মাটির কারিগর অনাদি পাল বলেন, সামনে বৈশাখী মেলা। তাই দিন রাত পরিশ্রম করে মাটির খেলনা, হাড়ি, পুতুল তৈরি করছি। বৈশাখী মেলায় বিক্রি করার জন্য এসব তৈরি করছি।
মৃৎশিল্পি মিলন পাল বলেন, আমাদের বাড়ির বেশিরভাগ লোকই এই মৃৎশিল্পের সংগে জড়িত। একসময় মাটির তৈরি এসব জিনিসপত্রের চাহিদা থাকলেও আধুনিকতার ছোঁয়ায় মানুষ এখন আর মাটির তৈরি জিনিসের দিকে ঝুঁকছেন না। এখন আমরা মৌসুমী কারিগর হয়ে গেছি। বিশেষ করে চৈত্রের শেষেই কাজের ধুম পড়ে। এ ছাড়া বাকি মাসগুলোতে তেমন একটা বেচাকেনার মুখ দেখতে পাইনা। তাই সংসারে অভাব অনটন লেগেই থাকে।
শান্তনা পাল বলেন, গত দুই বছর করোনা মহামারির কারণে বিভিন্ন পার্বন ও মেলা বন্ধ ছিল। তখন আমরা এসব মাটির তৈরি সামগ্রী বিক্রি করতে পারিনি। তখন আমাদের দুর্বিষহ কষ্টে সংসার চলেছে। এবছর মেলা হলে আমরা আমাদের তৈরি পণ্য বিক্রি করতে পারলে আমরা সাচ্ছন্দে দিনাতিপাত করতে পারব। আমরা চাই আমাদের এই মাটির শিল্পের সুদিন ফিরে আসুক। বেচেঁ থাকুক মাটির শিল্প। ঐতিহ্যবাহি এ পেশা টিকে থাকুক যুগের পর যুগ।
গোপালগঞ্জ বিসিক এর সহকারী মহাব্যবস্থাপক গৌরব দাস বলেন, বাংলা নববর্ষ বাঙালির একটা ঐতিহ্য। এ ঐতিহ্যকে ধারন করে প্রতি বছর যে বৈশাখী মেলা হয় সে মেলার মুল আকর্ষণই মৃৎশিল্প। মাটির বউ-পুতুল, হাতি, ঘোড়া, কাঠাল, কলশ, সরা, সখের হাড়ি এসবই গ্রামবাংলার ঐতিহ্য ধরে রেখেছে। এ মাটির শিল্পিরা তাদের মাটির তৈরী জিনিসপত্র তৈরীতে দিন রাত পরিশ্রম করে যাচ্ছে । সময়ও চলে এসেছে। বৈশাখী মেলাকে ঘিরেই তারা তাদের কার্যাক্রম করে থাকে। এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে তাদের কোন আর্থিক বা যে কোন সহযোগিতা লাগে তাহলে বিসিক তাদের পাশে থাকবে।
খুলনা গেজেট/ এস আই