খুলনা, বাংলাদেশ | ১ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৬ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  সাবেক বিচারপতি মোহাম্মদ ফজলুল করিম মারা গেছেন
  ভারতে হাসপাতালে আগুন লেগে ১০ শিশুর মৃত্যু

বৈধ-অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে যৌথ অভিযান মধ্যরাতে

গেজেট ডেস্ক

যৌথ অভিযান

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর সারা দেশের বিভিন্ন থানায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ চালায় বিক্ষুব্ধরা। প্রাণ বাঁচাতে অস্ত্র ও গোলাবারুদ ফেলে থানা থেকে পালিয়ে যান পুলিশ সদস্যরা। এতে সহজেই থানাগুলোতে থাকা অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ লুটপাট করে নিয়ে যান অনেকে। এসব অস্ত্রশস্ত্র দুর্বৃত্তদের হাতে চলে যাওয়ায় দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

এ পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে লুট হওয়া অস্ত্র জমা দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। তা না হলে অবৈধ অস্ত্র ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়। এরপরও তেমন সাড়া না মেলায় লুট হওয়া অস্ত্র এবং অন্যান্য অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান চালানোর ঘোষণা দেওয়া হয়।

মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) শেষ হয়ে গেছে সব ধরনের অস্ত্র জমা দেওয়ার সময়সীমা। রাত ১২টা থেকে (৪ সেপ্টেম্বর) অস্ত্রগুলো উদ্ধারে মাঠে নামবে যৌথ বাহিনী।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, পুলিশের লুণ্ঠিত অস্ত্র উদ্ধার, স্থগিত কিন্তু জমা দেওয়া হয়নি এমন অস্ত্র জব্দ এবং অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারসহ এর কারবারি ও ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বিশেষ করে গণ-আন্দোলনে রূপ নেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় যাদের হাতে অস্ত্র দেখা গেছে, যারা অবৈধ অস্ত্র প্রদর্শন ও নির্বিচারে গুলি বর্ষণ করেছেন এবং যারা অস্ত্র মামলার আসামি তাদের সবাইকে ধরা হবে। আজ রাত ১২টার পর থেকে শুরু হবে এই অভিযান।

পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, যৌথ অভিযানে অংশ নেবে সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিজিবি, আনসার, কোস্ট গার্ড ও র‌্যাব।

কোটা সংস্কার আন্দোলন দমনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি অস্ত্র হাতে দেখা গেছে আওয়ামী লীগসহ এর অঙ্গ সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের। তাদের গুলিতে অনেক ছাত্র-জনতা হতাহত হন। বৈধ অস্ত্রের ব্যবহার যেমন হয়েছে, তেমনি দেখা গেছে অবৈধ অস্ত্রের প্রদর্শনী
অস্ত্র জমা দেওয়া সংক্রান্ত জারি করা নির্দেশনার মধ্যে বিভিন্ন থানা থেকে লুটপাট করা অস্ত্র যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে বৈধ অস্ত্রের কথাও। গত ১৫ বছরে বেসামরিক জনগণকে দেওয়া বৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স স্থগিত করেছে সরকার। আজ মঙ্গলবারের মধ্যে গুলিসহ এসব আগ্নেয়াস্ত্র সংশ্লিষ্ট থানায় জমা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কোটা সংস্কার আন্দোলন দমনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি অস্ত্র হাতে দেখা গেছে আওয়ামী লীগসহ এর অঙ্গ সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের। তাদের গুলিতে অনেক ছাত্র-জনতা হতাহত হন। বৈধ অস্ত্রের ব্যবহার যেমন হয়েছে, তেমনি দেখা গেছে অবৈধ অস্ত্রের প্রদর্শনী। আন্দোলনকালে এ সংক্রান্ত অনেক ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

সাবেক সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার আগে ও পরের তিন দিনে রাজধানীসহ দেশজুড়ে প্রায় পাঁচশ থানায় হামলা হয়। লুটপাট করা হয় অস্ত্র ও গোলাবারুদ। পুড়িয়ে দেওয়া হয় থানাসহ নানা স্থাপনা ও পুলিশের যানবাহন। এসব ঘটনায় পুলিশের প্রায় সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। অন্তবর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর ধীরে ধীরে চালু হতে থাকে সব থানার কার্যক্রম। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশ সদরদপ্তর থেকে বিজ্ঞপ্তি জারি করে লুট হওয়া অস্ত্র জমা দিতে আহ্বান জানানো হয়।

এদিকে, যৌথ বাহিনীর কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়নের কৌশল নির্ধারণের জন্য মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) এক সমন্বয় সভা করে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।

ডিএমপি কমিশনার মো. মাইনুল হাসানের সভাপতিত্বে ডিএমপি সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত সমন্বয় সভায় ডিএমপি, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা, সেনাবাহিনী, বিজিবি, র‌্যাব ও আনসারের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

এ ব্যাপারে ডিএমপি কমিশনার মাইনুল হাসান বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ ও প্রাণহানি ঘটে। শেষ তিন দিন (শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতা ছাড়ার আগে-পরে) থানা, ফাঁড়িসহ পুলিশের বেশ কিছু স্থাপনায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। অনেক জায়গায় অস্ত্রসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম ও নথি লুট হয়।

তিনি বলেন, গত ২৫ আগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত বেসামরিক জনগণকে দেওয়া আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স স্থগিত করে ৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে গোলাবারুদসহ আগ্নেয়াস্ত্র সংশ্লিষ্ট থানায় জমা দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়।

নির্দেশনা অনুযায়ী ৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে নির্ধারিত স্থানে আগ্নেয়াস্ত্র জমা না দিলে তা অবৈধ অস্ত্র হিসেবে গণ্য হবে। তাছাড়া, কোনো ব্যক্তির কাছে পুলিশের লুণ্ঠিত অস্ত্র ও গোলাবারুদ রক্ষিত থাকলে ৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে থানায় জমা দেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়। অন্যথায় তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পুলিশের কী পরিমাণ অস্ত্র লুট হয়?

পুলিশের লুট হওয়া অস্ত্রের পরিমাণের বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ সদরদপ্তরের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) ইনামুল হক সাগর বলেন, সারা দেশের থানাগুলো থেকে কত অস্ত্র ও গোলাবারুদ লুট হয়েছে এর পরিসংখ্যান তৈরির কাজ চলছে। আশা করছি আজকের (মঙ্গলবার) মধ্যে কাজ শেষ হবে। সেটি জানিয়ে দেওয়া হবে।

কী পরিমাণ অস্ত্র উদ্ধার হলো?

লুট হওয়া অস্ত্র ও গোলাবারুদের মধ্যে গত রোববার (১ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত বিভিন্ন ধরনের তিন হাজার ৮৮০টি অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে। গোলাবারুদের মধ্যে গুলি দুই লাখ ৮৬ হাজার ৩৫৩ রাউন্ড, টিয়ারশেল ২২ হাজার ২০১টি ও সাউন্ড গ্রেনেড দুই হাজার ১৩৯টি উদ্ধার হয়েছে।

কয়েকটি গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, কেবল রাজধানীর বিভিন্ন থানা থেকে এক হাজার ৮৯৮টি অস্ত্র লুট করা হয়। এর মধ্যে গত ২৪ আগস্ট পর্যন্ত ৪৫৩টি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। বাকি এক হাজার ৪৪৫টি অস্ত্র এখনো উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।

এআইজি সাগর বলেন, লাইসেন্স স্থগিত করা হয়েছে এমন ৩৫টি অস্ত্র ও ১১৬৯ রাউন্ড গুলি জমা পড়েছে।

অস্ত্র উদ্ধার, অবৈধ অস্ত্র কারবারি ও এর অবৈধ ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিশেষ করে অবৈধ অস্ত্র কারবারি ও অস্ত্র মামলার আসামিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন পুলিশ সদরদপ্তরের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) ইনামুল হক সাগর।

এ বিষয়ে ঢাকার বাইরের জেলা রংপুরের জেলা প্রশাসক (ভারপ্রাপ্ত) মোছা. শাহনাজ বেগম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের এখানে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত সমন্বয় সভা করেছি। আজকের মধ্যে যারা অস্ত্র গোলাবারুদ জমা দেবেন, তাদের ধন্যবাদ। কিন্তু যারা দেবেন না বা দেননি তাদের তালিকা করা হবে। সেটি নিয়ে আমরা নীতিগত সিদ্ধান্ত ও ব্যবস্থা গ্রহণে বৈঠক করব। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সে তথ্য জানানো হবে।

তিনি বলেন, অভিযান তো রাত থেকেই শুরু হচ্ছে। অভিযানে অস্ত্র মামলার আসামি, বৈধ অস্ত্রের অবৈধ ব্যবহারকারী, অবৈধ অস্ত্রের কারবারি ও ব্যবহারকারীদের গ্রেপ্তার করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

খুলনা গেজেট/কেডি




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!