খুলনা, বাংলাদেশ | ১২ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৭ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ১০ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৯৯০
  কিশোরগঞ্জের ভৈরবে বাসা থেকে ২ সন্তানসহ বাবা-মায়ের মরদেহ উদ্ধার
  কুমিল্লায় অটোরিকশায় ট্রেনের ধাক্কায় নিহত বেড়ে ৭

বেড়াতে গিয়ে বহিষ্কার

ক্রীড়া ডেস্ক

বার্মিংহাম কমনওয়েলথ গেমসে বাংলাদেশের অন্য ডিসিপ্লিনের চেয়ে সফল ছিল টেবিল টেনিস। পুরুষ দলগত বিভাগে কোয়ার্টারে উঠে পদকের সম্ভাবনা জেগেছিল। টিটির নারী খেলোয়াড়রাও দেশবাসীকে জয় উপহার দিয়েছিল। সেই নারী দলের খেলোয়াড় সোনাম সুলতানা সোমা ও সাদিয়া রহমান মৌ নারী দ্বৈত বিভাগে অংশ না নিয়ে বেড়াতে গিয়ে দেশের সম্মানহানি করেছেন।

গত পরশু বাংলাদেশ টেবিল টেনিস ফেডারেশনের কার্যনির্বাহী কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে কমনওয়েলথ গেমসে অংশ নেওয়া দুই নারী টেবিল টেনিস খেলোয়াড়কে শৃঙ্খলাজনিত কারণে আন্তর্জাতিক ও ঘরোয়া প্রতিযোগিতা থেকে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত এসেছে।

টেবিল টেনিস ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক শেখ মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘৫ আগস্ট আমাদের দ্বৈত ও মিশ্র ইভেন্টের খেলা ছিল। সেদিন তারা দুইজন না খেলে বাইরে ছিলেন। ফলে ম্যাচটি ওয়াকওভার হয়। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের সম্মানহানি হয়েছে। এ জন্য কার্যনির্বাহী কমিটির সর্বসম্মতিক্রমে ওই দুই খেলোয়াড়কে আন্তর্জাতিক ও ঘরোয়া পর্যায়ে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।’

ফেডারেশন আনুষ্ঠানিকভাবে নিষিদ্ধ করার আগে দুই খেলোয়াড়কে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেবে। ফেডারেশন তাদেরকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে জবাব দিতে বলবে যে, কেন তাদেরকে ঘরোয়া প্রতিযোগিতায় দুই বছর ও আন্তর্জাতিক খেলায় তিন বছর নিষিদ্ধ করা হবে না। দুই খেলোয়াড়ের কাছ থেকে উত্তর পাওয়ার পরই ফেডারেশন আনুষ্ঠানিকভাবে নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত নেবে।

এবারই প্রথমবারের মতো কমনওয়েলথে অংশ নেয়। বাছাই পর্বে নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণ করে তারা বার্মিংহাম কমনওয়েলথে গিয়েছে। সেখানে গিয়ে কয়েকটি ম্যাচ জিতলেও শেষ পর্যন্ত এই ওয়াকওভার ঘটনায় বেশ অপ্রীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।

টেবিল টেনিস ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম বার্মিংহাম কমনওয়েলথ গেমসে বাংলাদেশ দলের ম্যানেজার ছিলেন। ওয়াকওভারের ঘটনাটি তিনি বর্ণনা করলেন এভাবে, সোমা ৪ তারিখ সকালে একটি ম্যাচ জিতেছিল। ইনজুরির জন্য বিকেলের ম্যাচে ওয়াকওভার দেয়। অলিম্পিকের চিকিৎসক (শফিকুর রহমান) তাকে দেখে বলেছিল বিশ্রাম নিলে পরের দিন খেলতে পারবে। পরের দিন সকালে আমাকে জানায় তারা লন্ডন যেতে চায়। আমি তৎক্ষণাৎ তাদের না করি এবং বিষয়টি শেফ দ্য মিশনকে অবহিত করি।’

তিনি বলেন, ‘বিকেলে খেলা থাকায় সকালে সর্বশেষ অবস্থা জানার জন্য শেফ দ্য মিশন (আব্দুর রকিব মন্টু) চিকিৎসককে পাঠাতে চান। সোমা-মৌ কেউই ফোন ধরেননি। খেলার সময় ঘনিয়ে আসছিল আমি অসংখ্যবার ফোন করেছি। তারা ফোন রিসিভ করেননি। মৌ অনেক পরে ফোন করে বলেছিল, ‘আপুর (সোমা) মন খারাপ আমরা আশপাশেই আছি।’ পরে ফেসবুক পোস্ট থেকে জানতে পারি তারা লন্ডনে আত্মীয়ের বাসায় বেড়াতে গিয়েছিল। টেবিল টেনিসের এই ঘটনা গেমসে যাওয়া অনেকেই জানেন। শেফ দ্য মিশনের রিপোর্টে টিটির এই বিষয়টি বিশেষভাবে থাকবে।’

কমনওয়েলথের মতো গুরুত্বপূর্ণ গেমসে খেলা বাদ দিয়ে আত্মীয়ের বাসায় বেড়াতে যাওয়া অত্যন্ত বড় অপরাধ। সেই সময় তাদের শাস্তির আওতায় না এনে তাদেরকে তুরস্কে ইসলামিক সলিডারিটি গেমসে পাঠানোর কারণ সম্পর্কে সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘ওই সময়ে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়নি কারণ তাদেরই তুরস্কে খেলার কথা। তাদের সব কিছু তুরস্কে প্রস্তুত ছিল। ওই মুহূর্তে তাদের বাদ দিলে তুরস্কেও বাংলাদেশ দলের ওয়াকওভার হয়ে যেত, যেহেতু আমাদের রেজিস্ট্রেশন ছিল। তাই ইসলামিক গেমস শেষে দেশে ফিরেই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

সোমা এবং মৌ একে অন্যের খালাতো বোন। খেলা বাদ দিয়ে কেন তারা বেড়াতে গেলেন যেখানে গেমস ভিলেজের বাইরে অনুমতি ছাড়া বের হওয়াই নিষেধ। এই বিষয়ে দুই খেলোয়াড়ের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়ায় তাদের প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

তবে টিটি অঙ্গনে তাদের দুজনের ঘনিষ্ঠ কয়েকজনের কাছ থেকে জানা গেছে, ফেডারেশনের আনুষ্ঠানিক চিঠি না পাওয়া পর্যন্ত দুজনের কেউ এ বিষয়ে মন্তব্য করবেন না। তাদের ঘনিষ্ঠ একজনের বক্তব্য, সোমা আগের দিন ইনজুরিতে ছিল। ৫ আগস্ট খেলার মতো পরিস্থিতি ছিল না। মৌয়ের ফুপা বার্মিংহাম ভিলেজ থেকে ১০-১২ মিনিটে দূরত্বে এক জায়গায় নিয়ে গিয়েছিলেন। তাদের আবার কিছুক্ষণ পর ভিলেজে পৌঁছে দেন। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করা ছবিতে চেক ইন লন্ডনের দেওয়া।

গত পরশু ফেডারেশনের সভায় শাস্তির সিদ্ধান্ত হয়েছে। দুই খেলোয়াড়ের শৃঙ্খলার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হলেও এই বিষয়ে আলাদা আলোচ্য সূচি ছিল না। কারো মতে, বিবিধের মধ্যে আলোচনা হয়েছে আবার কেউ বলেছেন কমনওয়েলথ ও ইসলামিক সলিডারিটি গেমসের পর্যালোচনা আলোচ্য সূচিতেই এই শাস্তির সিদ্ধান্ত এসেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ফেডারেশনের নির্বাহী কমিটির একজন বলেন, ‘সরাসরি এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে একটি তদন্ত কমিটি করে বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট খেলোয়াড়, গেমসে থাকা আরও কয়েকজনের সঙ্গে আলোচনা করে পদক্ষেপ নেওয়া যেত।’

অন্যদিকে ফেডারেশনের সভায় এমনটাও আলোচনা হয়েছে যে, অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে ৪ তারিখ বিকেলে ওয়াক‌ওভার দিয়েছিল সেই খেলোয়াড় পরের দিন চিকিৎসক বা ফিজিও সহযোগিতা নেয়নি। আবার ৭ আগস্ট তুরস্কে ইসলামিক গেমসে একই খেলোয়াড় ভালো খেলে বিস্ময়েরও সৃষ্টি করেছে।

ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক নিজে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী হওয়ায় শৃঙ্খলার বিষয়ে ছাড় দিতে নারাজ, ‘সবার ওপরে শৃঙ্খলা। এর আগে ক্যাম্প না করার কারণে অনেক তারকা খেলোয়াড়রা বাদ পড়েছে। কমনওয়েলথে যেটা ঘটেছে সেটা অনেক বড় অপরাধ। এরপরও তাদের আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য ৭২ ঘণ্টা সময় দেওয়া হচ্ছে।’

বাংলাদেশ টেবিল টেনিস ফেডারেশন শৃঙ্খলা বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনকে অবহিত করবে। আন্তর্জাতিক গেমসগুলোতে বাংলাদেশ দল অলিম্পিকের মাধ্যমে অংশগ্রহণ করে। অলিম্পিকের বর্তমান কমিটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা শৃঙ্খলার ব্যাপারে খুবই সচেতন বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!