খুলনা, বাংলাদেশ | ১৭ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ৩১শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

Breaking News

  প্রাথমিক শিক্ষকদের তিন দফা দাবি আদায়ে আগামী ২৩ জুন থেকে আমরণ অনশনের ঘোষণা
  ২০০ ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদলসহ চীনা বাণিজ্যমন্ত্রী ঢাকায়, কাল সেমিনার
  ২১ জুন ঢাকায় জনসভার অনুমতি চেয়ে ডিএমপিতে আবেদন জামায়াতের

বেহাল সড়ক আর জলাবদ্ধতায় নাকাল সাতক্ষীরা পৌরবাসি

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাতক্ষীরা

প্রয়োজনীয় সংস্কারের অভাবে সাতক্ষীরা পৌরসভার অভ্যন্তরীণ অধিকাংশ সড়ক জনসাধারণের চলাচল অযোগ্য হয়ে পড়েছে । বিশেষ করে সাতক্ষীরা পোস্ট অফিস মোড় থেকে সরকারি কলেজ হয়ে পুরাতন সাতক্ষীরা হাটখোলা পর্যন্ত সড়কটির পিচ উঠে গিয়ে খানা-খন্দে পরিণত হয়েছে অনেক আগেই। এই সড়ক দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে পৌরবাসীরকে চরম ভোগান্তির শিকার হতে হয়। এছাড়া সড়কটি খানাখন্দে পরিণত হওয়ায় প্রতিনিয়ত ঘটছে ছোটখাটো সড়ক দুর্ঘটনা।

শহরের পোস্ট অফিস মোড় হতে পুরাতন সাতক্ষীরা হাটখোলা পর্যন্ত সড়কটি সংস্কারের দাবিতে ইতিপূর্বে কয়েকবার মানববন্ধন করেছে জেলা নাগরিক কমিটি। প্রয়োজনীয় সংস্কারের অভাবে মৌসুমের স্বাভাবিক বৃষ্টিতে সড়কটির অধিকাংশ স্থান পানিতে তলিয়ে গেছে। তলিয়ে গেছে সাতক্ষীরা সরকারি কলেজ মাঠ। সেখানে জলাবদ্ধতায় নাকানিচুবানি খাচ্ছে পথচারী সাধারণ মানুষ। চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।

শুধু সাতক্ষীরা সরকারি কলেজ রোড নয়, এই রোডের মতো পৌরসভার অভ্যন্তরীণ অধিকাংশ রোডই খানা-খন্দে পরিণত হয়েছে। চলাচলের অযোগ্য পড়েছে পুরাতন সাতক্ষীরা থেকে বাগানবাড়ি হয়ে ঘুড্ডির ডাঙ্গি পর্যন্ত সড়কটি। একই সাথে সাতক্ষীরা ডে-নাইট কলেজ মোড় থেকে চালতেতলা বাজার, চালতেতলা বাজার থেকে কুখরালি, বাঙালের মোড় থেকে গড়েরকান্দা, গড়েরকান্দা থেকে কুখরালি, পুরাতন সাতক্ষীরার হরিতলার মোড় থেকে সুলতানপুর আবুলের মোড়, হরিতলা থেকে বাটকেখালি মেঝমিয়ার মোড় পর্যন্ত রাস্তায় একেবারে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। এছাড়া শহরের কামালনগর, ইটাগাছা, পলাশপোল, মুনজিতপুর, সুলতানপুর, মেহেদীবাগ, বদ্দিপুর, কাটিয়া, রসুলপুরসহ প্রত্যেকটি এলাকার অভ্যন্তরীণ অধিকাংশ সড়কের অবস্থা খুবই খারাপ । এসব সড়কগুলির পিচের আস্তরণ উঠে ইটের খোয়া বের হয়ে পরিণত হয়েছে খানা-খন্দে। রাস্তার যখন এই দশা তখন শ্রাবণের বৃষ্টি নাগরিকদের জীবনে এনে দিয়েছে আরেকদফা দুর্ভোগ।

এদিকে মৌসুমের স্বাভাবিক বৃষ্টিতেই সাতক্ষীরা শহরে সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। বেহাল সড়ক আর জলাবদ্ধতায় নাকাল পৌরবাসি। বৃষ্টির কারণে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন শতশত পরিবার। পানি নিষ্কাশনে সাতক্ষীরা পৌরসভা কর্তৃপক্ষকে কোন ব্যবস্থা গ্রহণের আলামত দেখা যায়নি। চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন নিম্ন আয়ের সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ।

সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটির যুগ্ম সচিব আলী নূর খান বাবুল পৌরবাসির দুর্ভোগের বর্ণনা দিয়ে বলেন, সাতক্ষীরার অন্যতম প্রধান সড়ক সাতক্ষীরা সার্কিট হাউস মোড়, জেলা পরিষদ মোড় হতে বাসটার্মিনাল খুলনা রোড়, সার্কিট হাউস মোড় থেকে এসপি বাংলো মোড় পর্যন্ত সড়কের অবস্থা খুবই খারাপ। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষের চলাচল এসব অভ্যন্তরীণ সড়কগুলোতে। কিন্তু বৃষ্টি শুরু হলেই যেন রাস্তা আর সাগরের মধ্যে তফাৎ পাওয়া যায় না। পাশে ড্রেনের কালো, দুর্গন্ধযুক্ত পানি আর বৃষ্টির পানি একাকার হয়ে রাস্তার পাশে ঢেউ খেলছে। এতে করে চরম বিপাকে পড়েছেন এই রাস্তা দিয়ে চলাচল করি সাধারণ জনগণ।

পৌরসভার আভ্যন্তরীণ সড়কের দুর্ভোগের চিত্র তুলে ধরে সিপিবি নেতা কমরেড আবুল হোসেন বলেন, সাতক্ষীরা প্রথম শ্রেণির পৌরসভা হওয়া সত্ত্বেও নেই কোনো পরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা। হাল্কা বৃষ্টি হলে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। সামান্য বৃষ্টিতে সাতক্ষীরা পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায় সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। তলিয়ে গেছে রাস্তা-ঘাট। এতে চলাচলে মারাত্মক দুর্ভোগে পড়ছেন পৌরবাসী।

কলেজ শিক্ষক ইদ্রিস আলী বলেন, টানা কয়েকদিনের স্বাভাবিক বৃষ্টিতে শহরের অধিকাংশ রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। পৌরসভার প্রায় তিন ভাগের এক ভাগ পানিতে থৈথৈ করছে। শহরের কামালনগর এলাকায় অপরিকল্পিত মৎস্য ঘেরের কারণে বন্ধ হয়ে গেছে পানি নিষ্কাশনের পথ। এতে চলাচলে ভোগান্তিতে পড়েছে সাধারণ পথচারী। পানি নিষ্কাশনের কার্যকর কোনো ব্যবস্থা না থাকায় বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে রাস্তা-ঘাট। অনেকের বাড়ির উঠানেও জমেছে পানি।

বৃষ্টিতে সাতক্ষীরা সরকারি কলেজ মাঠসহ সড়ক তলিয়ে গেছে। একে তো সড়কটি চলাচলের অযোগ্য, তার ওপর বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় চলাচলে মারাত্মক ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন মানুষজন। বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

কামালনগর এলাকার অ্যাডভোকেট আল মাহমুদ পলাশ জানান, তাদের এলাকাতেও পানি জমে গেছে। ড্রেন বন্ধ হয়ে আছে। নিষ্কাশনের কোনো পথ নেই। রাস্তার ওপর পানি জমেছে। প্রতিবছরই এই অবস্থার সৃষ্টি হয়। ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি আরও বলেন, দিন আসে দিন যায়, বদলায় অনেক কিছু। শুধু বদলায় না সাতক্ষীরার পৌরবাসির দুর্ভোগের চিত্র।

সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আবুল কালাম আজাদ বলেন, সাতক্ষীরা পৌরসভায় কার্যকর কোনো ড্রেনেজ ব্যবস্থা নেই। এতে সামান্য বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এমনিতেই পৌরসভার রাস্তাঘাটের বেহাল দশা। তার ওপর বর্ষা মৌসুমে পানি জমে দুর্ভোগ কয়েক গুণ বেড়ে যায়। এসব বিষয়ে পৌর কর্তৃপক্ষ নির্বিকার!

এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা পৌরসভার মেয়র (ভারপ্রাপ্ত) ফিরোজ হাসান বলেন, পৌরসভায় বড় কোনো বরাদ্দ পাওয়া যায় না। সামান্য যে বরাদ্দ আসে এবং পৌরসভার নিজস্ব কিছু আয় থেকে মাঝে-মধ্যে বিভিন্ন ওয়ার্ডে ড্রেন সংস্কার করা হচ্ছে। তবে সাড়ে ৩ কোটি টাকার একটি প্রকল্প পাশ হয়েছে। শিগগিরই সড়কের কাজ এবং ড্রেনেজ কাজ শুরু হবে।

খুলনা গেজেট/এএজে




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!