খুলনা, বাংলাদেশ | ৪ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৯ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  রাজধানীর উত্তরা থেকে সাবেক খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম গ্রেপ্তার
  ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ৬ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১০৮৩
  ১৬ ডিসেম্বর ঘিরে কোনো ধরণের হামলার শঙ্কা নেই : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

বেনাপোল মুক্ত দিবস আজ

শার্শা প্রতিনিধি

আজ ৩ ডিসেম্বর (শনিবার), বেনাপোল মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এইদিন মিত্রবাহিনীর সহযোগিতায় মুক্তিযোদ্ধাদের প্রবল প্রতিরোধের মুখে বেনাপোল, শার্শা এলাকা ছেড়ে পিছু হটতে থাকে পাক বাহিনী এবং তাদের দোসররা। আশ্রয় নেয় শার্শার আমড়াখালি সদর ও পরের দিন আঞ্চলিক সদর দপ্তর নাভারনে। এর আগে ডিসেম্বর ২ তারিখ রাতে বেনাপোল বাজার থেকে আড়াই কিলোমিটার উত্তর পশ্চিম পাশে রঘুনাথপুর গ্রাম ছেড়ে পালায় পাক বাহিনী এবং তাদের দোসররা। আশ্রয় নেয় প্রায় ৩ কিলোমিটার পুর্বে পোড়াবাড়ি নারানপুর মাঠ পাড়ার ব্যাটালিয়ন সদরে।

৩ ডিসেম্বর দুপুরের দিকে দু‘পক্ষের সম্মুখ যুদ্ধে ও মুহুর্মুহু কামানের গুলিতে তছনছ হয়ে যায় নারানপুরে পাক সেনাদের চৌকি। মিত্রবাহিনীর সহযোগিতায় মুক্তিযোদ্ধাদের প্রবল প্রতিরোধের মুখে আগেরদিন পাক সেনারা রঘুনাথপুর ইপিআর ক্যাম্প ছেড়ে রাতের আঁধারে পালিয়ে বাঁচে। পাকসেনাদের পিছু হটার খবর পেয়ে বেনাপোলের ওপারে ভারতের বনগাঁর জয়ন্তিপুর থেকে সোজা রঘুনাথপুরের পাশের গ্রাম মানিকিয়ায় ছুটে আসেন মিত্র বাহিনীর ক্যাপ্টেন মিঃ রায়সহ দু‘দেশের উদ্ধর্তন সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা। তাদের নির্দেশে ৩ ডিসেম্বর দুপুরের দিকে দু‘জন মুক্তিযোদ্ধা ৪টি গ্রেনেড নিয়ে রেকি করতে যায় নারানপুর ব্যাটালিয়নের আশপাশে।

ক্ষুধায় কাতর মুক্তিযোদ্ধাদের ঘরে ডেকে নিয়ে ইউসুফ নামের এক লোক পেটভরে খেতে দেয় দুধ মুড়কি আর চিড়ে। খাওয়া শেষে ঘর থেকে নামার সাথে সাথে পাকবাহিনী তাদেরকে ঘিরে ফেলে। জীবন নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে পাশের কোদলা নদীতে। মুক্তিযোদ্ধাদের লক্ষ্য করে পাকবাহিনী বৃস্টির মত ছুড়তে থাকে গুলি। খবর চলে যায় ২ কিলোমিটার দুরে ৩ প্লাটুন সৈন্য নিয়ে মানিকিয়া গ্রামে অবস্থানরত মিত্র বাহিনীর কমান্ডার মিঃ রায়ের নিকট। বেনাপোলের ওপারে জয়ন্তিপুরে তখন ৫ নং সেক্টরের সাব সেক্টর কমান্ডারের দায়িত্বে বর্তমান জ্বালানি উপদেস্টা তৌফিক ইলাহী।

উনার সাহসিকতায় সেদিন শুরু হয় প্রবল প্রতিরোধ যুদ্ধ। প্রচন্ড গোলাগুলির খবরে ভীত সন্তস্থ পাক বাহিনী পুটখালি, শিকড়ি বটতলা, বেনাপোল কাস্টমস হাউজ এলাকা ছেড়ে রাতের আঁধারে পিছু হেটে আশ্রয় নেয় যশোর-বেনাপোল সড়কের আমড়াখালি কোম্পানির সদর দপ্তরে। এভাবেই শক্রমুক্ত হয় বন্দর নগরী বেনাপোল। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে মুক্তির আনন্দে উচ্ছ্বসিত মুক্তিযোদ্ধা-জনতার ঢল নামে বেনাপোলে। পাড়া মহল্লায়ও চলে খন্ড খন্ড আনন্দ মিছিল। মুক্তির আনন্দে ‘জয় বাংলা’ শ্লোগানে ফেটে পড়ে গোটা বেনাপোলের মানুষ।

সংঘবদ্ধ মিত্রবাহিনীর সহযোগিতায় দ্বিগুন সাহস নিয়ে চলতে থাকে একের পর এক অপারেশন। ৪ ডিসেম্বর শার্শা ও নাভারন এবং ৫ ডিসেম্বর ঝিকরগাছা দখলমুক্ত হয়। আর ৬ ডিসেম্বর মুক্ত হয় যশোর জেলা। এদিন পাকসেনারা ঝিকরগাছা ছেড়ে আশ্রয় নেয় খুলনার শিরোমনি ক্যাম্পে।

এভাবেই ৩ ডিসেম্বর বেনাপোল এবং ৫ ডিসেম্বর ঝিকরগাছা এলাকা দখলদার পাকবাহিনীর কাছ থেকে স্বাধীন হবার গল্প শোনাচ্ছিলেন স্থানীয় দুর্গাপুর গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা দীন মোহাম্মদ ওরফে দীনো ও বেনাপোল মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার শাহ আলম।

বেনাপোলের মুক্তিযোদ্ধা দীন ইসলাম ও শাহ আলম জানান, ৮নং সেক্টরের অধীনে যুদ্ধে অংশ নেওয়া বীরদের বলিষ্ঠ প্রতিরোধের মুখে বেনাপোল ও শার্শা থেকে শুরু হয়ে সমগ্র যশোর এলাকা শক্রমুক্ত হয়।

খুলনা গেজেট/ এমএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!