খুলনা, বাংলাদেশ | ৭ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২২ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ডেঙ্গুতে একদিনের ৯ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১ হাজার ২১৪

বেনাপোল বন্দরে আমদানিকৃত পন্যাগার ভাড়ায় ধ্বস : রাজস্ব ঘাটতি ১১ কোটি টাকা

বেনাপোল প্রতিনিধি

গেল ২০১৯-২০ অর্থ বছরে বেনাপোল বন্দরে ভারত থেকে আমদানি করা পণ্যের পণ্যগার ভাড়ায় এবার ধ্বস নেমেছে। ২০১৯-২০ অর্থ বছরে পন্যাগার ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছিল ৯৫ কোটি ৮ লাখ টাকা। তার বিপরীতে আদায় হয়েছে ৮৪ কোটি ১৯ লাখ টাকা। অর্থ্যাৎ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১১ কোটি ৬ লক্ষ টাকার রাজস্ব কম আদায় হয়েছে। অর্থ বছরের এ সময়ের মধ্যে ভারত থেকে আমদানি হয়েছে ১৭ লাখ ৭৮ হাজার ৬২৮ মেট্রিক টন বিভিন্ন ধরনের পণ্য। এর আগে ২০১৮-১৯ অর্থবছর ভারত থেকে আমদানির পরিমাণ ছিল ১৮ লাখ ৩৬ হাজার ৯৫৩ মেট্রিক টন পন্য।

বেনাপোল বন্দর পরিচালক (ট্রাফিক) আব্দুল জলিলের কাছে রাজস্ব আদায়ের বিষয়টি জানতে চাইলে ১১ কোটি ৬ লক্ষ টাকা রাজস্ব ঘাটতির বিষয়টি তিনি নিশ্চিত করেছেন।

বন্দর সূত্রে জানা যায়, ভারত থেকে আমদানিকৃত পন্য প্রথম অবস্থায় বেনাপোল বন্দরের ওয়ারহাউজ (পণ্যগারে) রাখা হয়। এসময় ওই সমস্ত আমদানি পণ্য রক্ষণাবেক্ষণ ও পণ্যগার ভাড়া বাবদ বন্দর কর্তৃপক্ষ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নির্ধারিত পরিমানে রাজস্ব আদায় করে থাকে।

বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাজেদুর রহমান জানান, বেনাপোল বন্দরের বর্তমান ধারণ ক্ষমতা প্রায় ৫০ হাজার মেট্রিক টন। তবে এখানে সব সময় পণ্য থাকে প্রায় দেড় লাখ মেট্রিক টন। চাহিদার অনুপাতে জায়গা না থাকায় ভারত থেকে আমদানিকৃত মূল্যবান সামগ্রী রাখতে হয় খোলা আকাশের নিচে। এতে সুবিধা বঞ্চিত হয়ে অনেক ব্যবসায়ীরা এ বন্দর ছেড়ে বাণিজ্য করছেন অন্য বন্দরে। ফলে এ বন্দর কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব অর্জনে ব্যর্থ হচ্ছে।

বেনাপোল আমদানি-রফতানি কারক সমিতির সভাপতি মহসিন মিলন বলেন, ‘এ পথে রাজস্ব আয় বাড়াতে হলে বন্দরের অবকাঠামো উন্নয়ন বাড়াতে হবে। এছাড়া বন্দরে বার বার রহস্যজনক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় অনেক ব্যবসায়ী পুঁজি হারিয়ে পথে বসেছেন। বন্দর কর্তৃপক্ষ তাদের কোনো ক্ষতিপূরণ না দেয়ায় তারা এ বন্দর ছেড়েছেন।’

বেনাপোল ট্রান্সপোর্ট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আজিম উদ্দীন গাজী বলেন, ‘পণ্য ছাড়করণের ক্ষেত্রে বৈধ সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত না হওয়ায় আমদানি কমে যাওয়াও এর একটি কারণ। এতে রাজস্ব দিন দিন ঘাটতি হচ্ছে।’

বেনাপোল বন্দর পরিচালক (ট্রাফিক) আব্দুল জলিল বলেন, ‘করোনার কারণে প্রথমত আড়াই মাস ধরে আমদানি বন্ধ ছিল। এজন্য রাজস্ব ঘাটতি হয়েছে। আর ইতিমধ্যে বেনাপোল বন্দরে অনেক অবকাঠামো উন্নয়ন হয়েছে। এছাড়া আরো যে উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে এর মধ্যে বন্দরে সিসি ক্যামেরা স্থাপন, উঁচু প্রাচীর নির্মাণ বন্দরের চারদিকে ও নতুন জায়গা অধিগ্রহণ। এসব উন্নয়ন কাজ সমাপ্ত হলে বেনাপোল বন্দর বিশ্বের কাছে একটি আধুনিক বন্দর হিসাবে পরিচিতি পাবে। তখন আমদানি বৃদ্ধির পাশাপাশি রাজস্ব ও রাড়বে।’

বেনাপোল বন্দর থেকে ভারতের কলকাতা শহরের দূরত্ব মাত্র ৮৩ কিলোমিটার। তিন ঘণ্টায় একটি পণ্যবাহী ট্রাক আমদানিকৃত পণ্য নিয়ে পৌঁছাতে পারে কলকাতা শহরে। ঠিক একই সময় কলকাতা থেকে পণ্যবাহী ট্রাক পৌঁছায় বেনাপোল বন্দরে। যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়াতে এ পথে ব্যবসায়ীদের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে আগ্রহ রয়েছে। দেশে স্থলপথে যে পণ্য আমদানি হয় তার ৭০ শতাংশ হয়ে থাকে বেনাপোল বন্দর দিয়ে। প্রতিবছর এ বন্দর দিয়ে প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকার পণ্য আমদানি হয়ে থাকে। যা থেকে সরকার প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয় করে। আমদানি পণ্যের মধ্যে শিল্পকারখানার কাঁচামাল,গার্মেন্টস, তৈরি পোশাক, কেমিক্যাল ও বিভিন্ন ধরনের খাদ্যসামগ্রী রয়েছে। তবে এপথে আমদানি কমলেও দিন দিন বাড়ছে রপ্তানি বাণিজ্য।
এছাড়া বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারতে প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা মূল্যের বিভিন্ন পণ্য রফতানি হয়ে থাকে। এ বছর ১০ হাজার কোটি টাকার পণ্য ভারতে রফতানি হওয়ার কথা ছিল। রফতানি পণ্যের মধ্যে পাট ও পাটজাত পণ্য, তৈরি পোশাক, কেমিক্যাল, বসুন্ধরা টিসু, চালের কুড়া, মেহেগনী ফল, মাছ ও অক্সিজেনসহ প্রায় ৩০ প্রকারের পণ্য রয়েছে।




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!