রাজস্ব ফাঁকি রোধে বেনাপোল কাস্টমস হাউসে ব্যাপক সংস্কার ও নতুন নতুন আইন প্রণয়ন করায় ৩৫টি পণ্য চালানের বিপরীতে ১ কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি ধরা পড়েছে। রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগে ২ কোটি ২৫ লাখ টাকার জরিমানা আদায় করেছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। ফলে গত অর্থবছরের সেপ্টেম্বর মাসের তুলনায় চলতি অর্থবছরের সেপ্টেম্বরে ১৭১ কোটি টাকার রাজস্ব বেশি আদায় হয়েছে।
সোমবার বিকালে বেনাপোল বন্দর ব্যবহারকারী সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস ও কাস্টমস কর্মকর্তাদের সঙ্গে একাধিক বৈঠকে কঠোর অবস্থানের কথা জানান বন্দরের নতুন কমিশনার আজিজুর রহমান।
বেনাপোল বন্দর দিয়ে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে আমদানি-রফতানি বাণিজ্যে গতিশীলতা, দ্রুত পণ্য খালাস ও রাজস্ব ফাঁকি রোধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে বেনাপোল কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। কাস্টমস সূত্র জানায়, রাজস্ব ফাঁকির সঙ্গে জড়িত আমদানিকারক ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদের কালো তালিকাভুক্ত করে তাদের পণ্য চালান শতভাগ পরীক্ষা করা হচ্ছে। আর যাদের বিরুদ্ধে রাজস্ব ফাঁকির কোনও অভিযোগ নেই, তাদের পণ্য চালান ‘ডি’ মার্কের মাধ্যমে কোনও পরীক্ষা ছাড়াই খালাস দেওয়া হচ্ছে।
কেমিক্যাল জাতীয় পণ্যের চালান কেমিক্যাল ল্যাবে পরীক্ষা করার পর ফলাফলের ভিত্তিতে শুল্কায়ন করে খালাস দেওয়া শুরু হয়েছে। বন্দরে ওয়েইং স্কেলের ওজনের ভিত্তিতে পণ্যের শুল্কায়নের বিষয়ে বলা হয়, বন্দরে স্কেলগুলোতে একেকটির ওজন একেকরকম হওয়ায় জটিলতা দেখা দিচ্ছে। এটি অবশ্যই বিবেচনায় নেওয়া হবে। এটিকে পুঁজি করে কেউ স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা করলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠকে কমিশনার আজিজুর রহমান জানান, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নির্দেশে বেনাপেল বন্দর দিয়ে সাইড ডোর রেল কার্গো কন্টেইনার কার্গো চালু হয়েছে। সেই সঙ্গে রেল টার্মিনাল ইয়ার্ড তৈরিরও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। স্থলপথে যেখানে প্রতিদিন ৫০০ থেকে ৬০০ ট্রাক পণ্য আমদানি হতো বেনাপোল বন্দর দিয়ে সেখানে বর্তমানে করোনাভাইরাসের প্রভাব থাকলেও প্রতিদিন ৩৫০ থেকে ৪০০ ট্রাক মালামাল আমদানি হচ্ছে বন্দর দিয়ে।
ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, পেট্রাপোল বন্দর এলাকায় কালিতলা পার্কিংয়ে আমদানি পণ্য বোঝাই ট্রাক থেকে ২০০০ টাকা করে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। দুই দেশের ব্যবসায়ীরা ওপারে বনগাঁও এলাকায় একটি অশুভ, অপশক্তি সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে।
যদিও বেনাপোল বন্দর দিয়ে বছরে ৩০ হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য সম্পন্ন হয়ে থাকে ভারতের সঙ্গে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড চলতি অর্থবছরে বেনাপোল কাস্টমস হাউসের জন্য ৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকার রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।
ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে বেনাপোল-যশোর হাইওয়ে ৬ লেন ও বেনাপোল চেকপোস্ট থেকে বেনাপোল বাজার পর্যন্ত এলিভেটেড ট্রেন চালু, আইসিডি চালুসহ বাইপাস সড়ক ৪ লেন করার জোর দাবি করা হয়।
কাস্টমস সূত্র জানায়, চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে জুলাই-অক্টোবর পর্যন্ত ৯৯৮ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় হয়েছে। যা গত বছরের থেকে ১৭১ কোটি টাকা বেশি, অর্থাৎ ২০ দশমিক ৬৭ শতাংশ বেশি। একই সময়ে গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ৮২৭ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় হয়েছিল বেনাপোল কাস্টমস হাউসে।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান স্বজন জানান, নতুন কমিশনার আজিজুর রহমান বেনাপোলে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে রাজস্ব ফাঁকি রোধে ব্যাপক কড়াকড়ি আরোপ করায় রাজস্ব আদায় বেড়েছে। কিন্তু বেনাপোলের মতো অন্যান্য বন্দরেও কড়াকড়ি করতে হবে। তা না হলে ব্যবসায়ীরা এই বন্দর থেকে মুখ ঘুরিয়ে নেবে।
কাস্টমস কমিশনার আজিজুর রহমান জানান, বেনাপোল বন্দরে রাজস্ব ফাঁকি রোধে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি অনিয়ম ধরা পড়েছে। তাদের কাছ থেকে রাজস্ব পরিশোধ করে ২০০ পারসেন্ট জরিমানা আদায় করা হয়েছে।
খুলনা গেজেট/এনএম