পবিত্র ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে বেনাপোল পোর্ট থানাধীন সীমান্তবর্তী পুটখালী গ্রামে গড়ে উঠেছে উটের খামার। এসব উট বৈধপথে আমদানি করা হয়েছে কিনা, সে বিষয়ে প্রশাসনিক তদন্ত দাবি করছেন এলাকাবাসী। সীমান্তবর্তী এলাকায় এমন দৃষ্টিনন্দন খামার যেমন বিস্ময় তৈরি করেছে, তেমনি উটগুলোর উৎস নিয়ে তৈরি হয়েছে রহস্য।
মরুভূমির উট এখন দেখা যাচ্ছে বেনাপোলের সীমান্তবর্তী এই গ্রামে। বিশাল আকৃতির সাতটি উট রয়েছে এ খামারে। সম্প্রতি ২৪ লাখ টাকায় বিক্রি হয়েছে এ খামারের একটি উট। এমন খবর ছড়িয়ে পড়লে খামারটির প্রতি মানুষের কৌতূহল আরো বেড়ে যায়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, খামারের মালিক বিগত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের যশোর-১ শার্শা আসনের সাবেক এমপি আফিল উদ্দিনের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত পুটখালী গ্রামের ‘গোল্ড’ নাসির।
স্থানীয়ভাবে তিনি ‘সোনা ও অস্ত্র চোরাচালানের গডফাদার’ হিসেবে পরিচিত। গরু, ছাগল, ষাঁড়ের পাশাপাশি এবার উটের খামার করেছেন তিনি। খামারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, উটগুলো সৌদি আরব থেকে বৈধভাবে আমদানি করা হয়েছে। তবে এলাকাবাসীর ধারণা, এসব উট চোরাইপথে ভারত থেকে আনা হয়েছে।
খামারের ম্যানেজার আল আমিন জানান, নাসির ভাই দুই বছর আগে সাতটি উট সৌদি আরব থেকে এনে এখানে লালনপালন করে বড় করেছেন। ইতোমধ্যে একটি উট ২৪ লাখ টাকায় বিক্রিও হয়ে গেছে। বাকি ছয়টি চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করা হবে। উটগুলো চট্টগ্রামে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। একটি উটে ১৩ থেকে ১৪ মণ মাংস হয়ে থাকে। আগে থেকে নাসিরের বাণিজ্যিক গরুর খামারও রয়েছে। সেগুলো এখন কোরবানির জন্য পুরো প্রস্তুত। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ক্রেতারা আসছেন খামারে। খামারের মালিক নাসির এলাকার বাইরে আছেন। মাঝেমধ্যে এখানে আসেন বলে তিনি জানান।
খামার শ্রমিক মতিয়ার জানান, প্রতিটি উটের উচ্চতা ১২ থেকে ১৫ ফুট। উটগুলোকে সকালে গোসল করানো হয়, এরপর খাওয়ানো হয় ছোলা, ভুট্টা এবং ঘাস। প্রতিটি উটের জন্য রয়েছে আলাদা খাদ্য তালিকা ও সময়সূচি।
এ বিষয়ে এলাকাবাসী জানান, সৌদি আরব থেকে এ উট আনা হয়নি। ভারতের রাজস্থান থেকে উট চোরাইপথে এনে খামারে তোলা হয়েছে। কারণ সীমান্তের ইছামতি নদীর এপাশে বেনাপোলের পুটখালী আর ওপাশে বনগাঁর আংরাইল সীমান্ত। আর গোল্ড নাসির এলাকায় বিগত দিনে দাপটের সঙ্গে চোরাচালানি কাজ করেছে। নাসিরের কাছে ভারত থেকে উট আনা সহজ ছিল।
তথ্যানুযায়ী, খামারের মালিক ‘গোল্ড’ নাসির অতীতে একাধিকবার সোনা ও অস্ত্রসহ বিজিবি ও র্যাবের কাছে আটক হন। ২০২৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি রামনগর এলাকায় প্রাইভেট কার থেকে ৪২টি সোনোর বার উদ্ধার করে বিজিবি। এরপর একই বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর দুটি বিদেশি পিস্তল, একটি ওয়ান শুটারগান, তিনটি রিভলবার ও ১৯ রাউন্ড গুলিসহ র্যাবের কাছে আটক হন নাসির। ওই মামলায় প্রায় ১৯ মাস কারাগারে থাকার পর কয়েক মাস আগে নাসির জামিনে বের হন।
শার্শা উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা তপন কুমার সাহা উটের খামারের বিষয়ে বলেন, ‘সীমান্ত এলাকায় এ ধরনের খামার এটাই প্রথম। এটি বেশ ব্যয়বহুল ও ব্যতিক্রমী উদ্যোগ। খামারের মালিক দাবি করেছেন, সৌদি আরব থেকে উটগুলো আনা হয়েছে। তবে আমরা বিষয়টি যাচাই-বাছাই করছি এবং নিয়মিত পরিদর্শন করছি।’
খুলনা গেজেট/এএজে