যশোরের রাজারহাট থেকে প্রায় নয় কেজি ওজনের ৬০টি স্বর্ণের বারসহ প্রাইভেটকার ফেলে পালানোর ঘটনায় জড়িত ছিলেন বেনাপোলের একাধিক মামলার আসামি নাসিরুদ্দিন ওরফে গোল্ড নাসির ও গাড়ির মালিক শফিক। সিআইডির তদন্তে উঠে এসেছে এ তথ্য। এ মামলায় সিআইডি পুলিশ ওই দু’জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট জমা দিয়েছে।
অভিযুক্তরা হলেন, বেনাপোলের পুটখালী গ্রামের মৃত বুদো সরদারের ছেলে নাসিরুদ্দিন ওরফে গোল্ড নাসির ও কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার পাঁচগাছিয়া গ্রামের মোবারকের ছেলে শফিক। মামলার তদন্ত শেষে আদালতে এ চার্জশিট জমা দিয়েছেন সিআইডি পুলিশের ঢাকার ইন্সপেক্টর আশরাফুল ইসলাম। তদন্তে উঠে আসে রাজারহাট থেকে উদ্ধার হওয়া ওই সোনা ছিলো নাসিরের। এছাড়া ওই গাড়িটি চালাচ্ছিলেন শফিক নিজে।
মামলা সূত্রে যানা যায়, স্বর্ণের একটি চালান ভারতে পাচারের উদ্দেশ্যে একটি সাদা রঙের প্রাইভেটকারে (ঢাকা মেট্টো-গ-৩৫-৯৫৭৭) ঢাকা থেকে যশোরে আসছে বলে গোপন সংবাদে জানতে পারে বিজিবি। তাৎক্ষণিক খুলনা সেক্টরের অধীনস্ত যশোর ব্যাটালিয়ন (৪৯ বিজিবি) এবং খুলনা ব্যাটালিয়ন (২১ বিজিবি) যশোরের রাজারহাট এলাকায় যৌথ অভিযান পরিচালনা করে। বিজিবি ওই কার দেখে সন্দেহ হওয়ায় তা ধাওয়া করে। বিজিবিকে দেখে ওই প্রাইভেটকার ফেলে পালিয়ে যায় আসামিরা। পরে বিজিবি বিশেষ কায়দায় লুকানো অবস্থায় ওই গাড়ি থেকে প্রায় নয় কেজি ওজনের ৬০টি সোনার বার উদ্ধার করে। তৎকালীন সময়ে যার দাম ছিল আট কোটি ৯৭ লাখ ৪০ হাজার টাকা।
এ ঘটনায় যশোর ৪৯ ব্যাটালিয়নের হাবিলদার জয়নাল আবেদীন বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন। মামলাটি তদন্তে নামে সিআইডি পুলিশের বিশেষ টিম। তারা গাড়ির কাগজপত্র বাছাই করে মালিকের সন্ধানে নামেন। অনুসন্ধানে উঠে আসে ২০২২ সালের ১৪ ডিসেম্বর শাহ আলম নামে একজনের কাছ থেকে ১৭ লাখ ৮৫ হাজার টাকায় গাড়িটি কেনেন শফিক। এরপর শফিকের মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে কললিস্ট যাচাই বাছাই করেন। এরমাঝে ২০২৩ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর অস্ত্র, গুলিসহ আটক হন গোল্ড নাসির। পরে নাসিরের সাথে শফিকের সম্পৃক্ততা পায় সিআইডি পুলিশ। এমনকি ঘটনার আগে তাদের দু’জনের সাথে ৪৪ বার মোবাইলে কথা হয়। সেসব কললিস্ট ও অবস্থানের সার্বিক অনুসন্ধানে উঠে আসে ওই সোনার চোরাচালানের সাথে জড়িত হচ্ছে নাসির ও শফিক। এ বিষয়ে শফিককে একাধিকবার নোটিশ দিলেও কর্ণপাত করেন না তিনি। মামলাটি তদন্ত করে ওই দু’জনকে অভিযুক্ত করে সোমবার আদালতে সিআইডি পুলিশ চার্জশিট জমা দেয়।
এদিকে, স্থানীয়রা জানান গোল্ড নাসিরের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। সম্প্রতি তিনি যশোর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে জামিনে মুক্ত হয়েছেন। জামিনে বের হয়ে ফের অস্ত্র-সোনাসহ নানা ধরণের অবৈধ ব্যবসার সাথে যুক্ত হয়েছেন। রাজনীতির ভোলপাল্টে তিনি এসব অপকর্ম করে বেড়াচ্ছেন। এছাড়া প্রায়ই তাকে যশোর কেন্দ্রীয় কারাগার প্রাঙ্গণে যাতায়াত করতে দেখা যাচ্ছে। এমনকি যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের কয়েকজন কর্মকর্তার সাথে তার দহরম মহরম রয়েছে। যা নিয়ে কারাগারে নানা গুঞ্জন চলছে।
খুলনা গেজেট/কেডি