প্রথম লেগে ৩-১ গোলের জয় ছিল রিয়াল মাদ্রিদের৷ তাতে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শেষ চারে উঠতে হলে চেলসিকে রিয়ালের মাটিতে করতে হতো অবিশ্বাস্য কিছু৷ এক, দুই, তিন গোল করে সে অবিশ্বাস্য কাজটা প্রায় করেই বসেছিল চেলসি, আর রিয়াল চলে গিয়েছিল খাদের কিনারায়।
তখনই রিয়াল করল গোল। যোগ করা অতিরিক্ত সময়ে বেনজেমা জাদু দেখালেন আরও একবার। তাতে ৩-২ গোলে হেরেও সামগ্রিক লড়াইয়ে ৫-৪ ব্যবধানের জয় নিয়ে রিয়াল চলে যায় চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শেষ চারে।
আগের লেগে ৩-১ গোলে হারের পর চেলসির সামনে সমীকরণ ছিল কমপক্ষে দুই গোলে জেতার, তাও ‘অন্তত’ খেলাটা অতিরিক্ত সময়ে নিতে হলে। এমন সমীকরণ সামনে রেখেও অবশ্য চেলসি নেহায়েত ভড়কে যায়নি। বরং ঠাণ্ডা মাথায় আক্রমণ শানিয়েছে শুরু থেকে।
তার সুফলটা মিলেছে ১৫তম মিনিটে। মাঝমাঠ থেকে আসা বলে দারুণ একটা পাস এলো মেসন মাউন্টের কাছে। প্রথম ছোঁয়াতেই গোল। চেলসির প্রয়োজন ছিল তেমন কিছুরই। বিরতিতে গেল এই এক গোলের লিড নিয়ে, আরও কমপক্ষে এক গোল, সোজাসাপ্টা হিসেবের জন্য দুই, এমন সমীকরণ মাথায় নিয়ে।
থমাস টুখেল এদিন দলকে নামিয়েছিলেন ৪-৩-১-২ ছকে। যা মাঝমাঠে সংখ্যাধিক্য দিচ্ছিল দলটিকে। এ পর্যন্ত যা ম্যাচের লাগাম হাতে রাখতে দারুণ সহায়তা করছিল চেলসিকে।
বিরতি থেকে ফিরে কিছু পরেই কর্নার থেকে অ্যান্টোনিও রুডিগার করলেন গোল। রিয়ালের মাঠে রূপকথা রচে দেওয়া থেকে আর মাত্র এক গোলের দূরত্বে তখন চেলসি। ৭১ মিনিটে সেটা করেও বসেছিল দলটা, তবে মার্কোস আলনসোর সে গোল বাতিল হলো পরে ভিএআর যাচাইয়ের পর। সে গোল অবশ্য মিনিট চারেক পর পেয়েই গেল চেলসি, টিমো ভের্নার রীতিমতো রিয়াল রক্ষণকে ঘোল খাইয়ে করলেন তৃতীয় গোলটা। তাতে ২০১৯ সালের দ্বিতীয় রাউন্ডের স্মৃতি ফিরে ফিরে আসছিল সান্তিয়াগো বের্নাবিউতে। সেবার যে ঠিক একই ঢঙয়ে আয়াক্স আমস্টারডামের কাছে প্রথম লেগে জয়ের পর নিজেদের মাঠে হেরেছিল রিয়াল!
তবে তা হয়নি এবার। ‘ফ্লুক’ তো একবারই হয়! অন্তত যাদের ট্রফি কেসে আছে ১৩ চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, তাদের সাথে অবশ্যই।
ম্যাচের আগে বিশালকার এক টিফো শোভা পাচ্ছিল বের্নাবিউর গ্যালারিতে, যাতে লেখা ছিল ‘নো উয়েগেস কন এল রেই’, যা বাংলায় দাঁড়ায়, রাজাদের সঙ্গে কোনো ছেলেখেলা নয়।
এতক্ষণ চেলসি তা-ই করছিল বটে, বিশেষ করে তৃতীয় গোলটা যে কোনো দলের মনোবলই ভেঙে চুরমার করে দেওয়ার কথা। রিয়ালের তা হয়নি। ‘রাজারা’ যখন ফিরল রাজসিক রূপে, তখন আর পাত্তাই পেল না চেলসি। সেই ফেরার শুরু ম্যাচের ৮০ মিনিটে। লুকা মদ্রিচের মুগ্ধতা ছড়ানো এক পাস প্রথম ছোঁয়াতেই চেলসির জালে জড়ালেন রদ্রিগো গোয়েজ। ৩-১ ব্যবধান নিয়ে রিয়াল খেলাটাকে নিয়ে গেল যোগ করা অতিরিক্ত সময়ে।
বিরতি থেকে ফিরেই কারিম বেনজেমার গোল। ম্যাচের স্কোরলাইন ৩-২ হলেও রিয়াল ততক্ষণে পেয়ে গেছে সামগ্রিক লড়াইয়ে ৫-৪ গোলের অগ্রগামিতা। চেলসি রণে ভঙ্গ দেয়নি তখনো। মাঝমাঠের দখলটা কাজে লাগিয়ে আক্রমণ শানিয়েই গেছে শেষতক। তবে হ্যাভার্টজ, ভের্নার, কিংবা বদলি হিসেবে আসা জর্জিনিওরা সে সুযোগ পারেননি কাজে লাগাতে। তাই ম্যাচজুড়ে ছড়ি ঘুরিয়ে, ৩-২ গোলে জিতেও সামগ্রিকভাবে ৫-৪ গোলের হারের বিষাদ সঙ্গী হয়েছে চেলসির। আর চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ধ্রুপদী রাতে রিয়াল চলে গেছে তাদের ১৪তম শিরোপার আরও একটু কাছে, প্রতিযোগিতার শেষ চারে।