যশোরের রাজারহাট দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সর্ববৃহৎ চামড়ার বাজার। শনিবার ছিল এ বাজারে ঈদ পরবর্তী প্রথম হাট। এদিন হাটে ৩৫ হাজারের মতো চামড়া উঠেছিল। বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আগের রাতেই চামড়া নিয়ে হাজির হন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। বাইরে থেকে ব্যাপারীরাও এসেছেন একই সময়ে। তারা অবস্থান নেন বিভিন্ন হোটেলে। এদিন সকাল সাতটা থেকে শুরু হয়ে যায় চামড়া কেনাবেচা।
তবে এদিন সরকার নির্ধারিত দামে কোনো চামড়া কেনাবেচা হয়নি। অধিকাংশ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী লোকসানে চামড়া বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন। গরুর চামড়া মোটামুটি বিক্রি হলেও বিপাকে পড়েন ছাগলের চামড়া বিক্রেতারা। প্রতি পিস ছাগলের চামড়া তিন টাকা ৮৫ পয়সায় বিক্রি করতে দেখা গেছে। আবার কারো কারো ছাগল ও ভেড়ার চামড়ার দাম বলেনি কোনো ব্যাপারীরা। বাজারে এমন কোনো ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী পাওয়া যায়নি যে তার গরুর চামড়ায় ২০০ থেকে ৩০০ টাকা লোকসান হয়নি।
গত ৩ জুন চামড়া খাতের একাধিক সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে কোরবানির পশুর চামড়ার দর নির্ধারণ করে দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সেই অনুযায়ী, ঢাকায় গরুর প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয় ৫৫-৬০ টাকা, যা গত বছর ছিল ৫০-৫৫ টাকা। ঢাকার বাইরে গরুর প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয় ৫০-৫৫ টাকা, যা গত বছর ছিল ৪৫-৪৮ টাকা। এছাড়া খাসির লবণযুক্ত চামড়া ২০-২৫ টাকা এবং বকরির চামড়া ১৮-২০ টাকা নির্ধারণ করা হয়।
রাজারহাটে আসা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, আড়তদার ও ব্যাপারীদের সাথে কথা বলে জানাযায়, বড় গরুর চামড়া ৩১ থেকে ৪০, মাঝারি আকারের ২১-৩০ এবং ছোট আকারের গরুর চামড়া ১৬-২০ বর্গফুটের হয়। সরকার নির্ধারিত দাম অনুযায়ী, যশোরের রাজারহাটে বড় সাইজের লবণযুক্ত একটি গরুর চামড়া বিক্রি হওয়ার কথা কমপক্ষে ১ হাজার ৭০৫ টাকা। মাঝারি সাইজের ২৫ বর্গফুটের একটি লবণযুক্ত চামড়ার দাম হওয়ার কথা ১ হাজার ৩৭৫ এবং ছোট আকারের একটি চামড়ার দাম হয় ৮৮০ টাকা।
অথচ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা জানান, হাটে এদিন সর্বোচ্চ ৯০০ টাকার বেশি দামে গরুর চামড়া বিক্রি হয়নি। সর্বনি¤œ দাম ছিল ৫০ টাকা। ছাগলের চামড়ার অবস্থা ছিল আরও করুন। তোষামোদ করেও পাঁচ টাকায় ছাগলের চামড়া বিক্রি করতে পারেননি অনেক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। অবস্থা এতটায় খারাপ ছিল, যশোরের কেশবপুর থেকে আসা ক্ষুদ্র বিক্রেতা কালীপদ দাস তোষামোদ করে পাপ্পু নামে এক আড়তদারকে তার ৫২ পিস ছাগলের চামড়া পাঁচ টাকা করে কেনার জন্য আকুতি জানান। পাপ্পু ৫২ পিস চামড়া নিয়ে পাঁচ টাকা হিসেবে ৪০ পিসের দাম দেয়ার শর্ত দেন। এতে উপায় না পেয়ে তাতেই রাজি হন। সেই হিসেবে তার এক পিস ছাগলের চামড়ার দাম পড়ে ৩ টাকা ৮৫ পয়সা। এ কারণে বাজারে ছাগলের চামড়ার স্তুপ পড়ে থাকতে দেখা যায়।
খুলনার কয়রা উপজেলার ঘুগরাকাটি থেকে গরুর ১১৭ পিস চামড়া নিয়ে রাজারহাটে আসেন ফটিক দাস। তিনি জানান, তার প্রতি পিস চামড়ায় গড়ে ২০০ টাকা করে লোকসান হয়েছে। ছাগলের চামড়া বিক্রি করেছেন ১০ টাকায়। অথচ একটি চামড়ায় লবণ গেছে ৩০ টাকার। তার উপর চামড়ার দামতো রয়েছেই।
ডুমুরিয়া থেকে গরুর ২০০ পিস চামড়া নিয়ে আসেন কবিরুল ইসলাম। তিনি ৫০০ থেকে ৯০০ টাকায় চামড়া বিক্রি করেন। এ ব্যবসায় তার বড় লোকসান হচ্ছে বলে জানান তিনি। নওয়াপাড়া থেকে ৪৫০ পিস চামড়া নিয়ে আসা অমল সাধু জানান, তিনি ৫০০ থেকে ৮০০ টাকায় গরুর চামড়া বিক্রি করেছেন। তার প্রতি চামড়ায় ২০০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত লোকসান হয়েছে বলে জানান। ৫০ বছর ধরে চামড়া ব্যবসা করছেন পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া গ্রামের রাশেদ আলী। তিনি ২৫০ পিস চামড়া নিয়ে আসেন। তিনি জানান, ১ হাজার ২০০ টাকায় কেনা চামড়া তাকে ৯০০ টাকায় বিক্রি করতে হয়েছে। তার ৩০ হাজার টাকার মতো লোকসান হবে।
রাজারহাটের আড়তদার শেখ হাসানুজ্জামান হাসু বলেন, ভালো চামড়ার ভালো দাম। এবার আবহাওয়ার কারণে চামড়ার মান খারাপ। তাছাড়া, মৌসুমি ব্যবসায়ীরা চামড়া ঠিকমতো কিনতে পারেন না। অনেক সময় তারা চামড়া বেশি দামে কিনে ফেলেন।
চামড়া রপ্তানিকারক কাজী আনিছুর রহমান বলেন, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা আজীবন বলবে লোকসান হয়েছে। কিন্তু তাদের লোকসান হয়না। এটা হলে তারা ব্যবসা থেকে ঝরে পড়তো। তিনি এক ট্রাক ভালো মানের এঁড়ে গরুর চামড়া কিনতে রাজারহাটে এসেছেন বলে জানান।
বৃহত্তর যশোর চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক শেখ আলাউদ্দিন মুকুল বলেন, রাজারহাটে এ বছর চামড়ার দাম ভালো। এদিনের হাটে ৩৫ হাজারের মতো চামড়া উঠেছে। বেচাকেনাও ভালো হয়েছে।
খুলনা গেজেট/কেডি