শনিবার ভোর রাত এবং সকালের ভারী বর্ষণে তলিয়ে গেছে তেলিগাতি কুয়েট রোডে অবস্থিত খুলনা সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ, গভঃ ল্যাবরেটরী হাইস্কুল, খুলনা মহিলা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রসহ পার্শ্ববর্তী এলাকাসমূহ। পানিতে তলিয়েছে বণিক পাড়া, বুচিতলা গাজীবাড়ী মসজিদের সামনে থেকে ল্যাবরেটরী হাইস্কুলের মোড় পর্যন্ত সড়ক। ভোগান্তিতে পড়েছে সাধারণ মানুষ। গভঃ ল্যাবরেটরি হাই স্কুলের সামনে অবস্থিত প্রতিভা প্রি ক্যাডেট স্কুলের সামনের সড়কে পানিতে তলিয়ে গেছে। স্কুলের ৬ শতাধিক কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীসহ সড়কটি দিয়ে যাতায়াতকারী মহিলা, শিশু, বয়োবৃদ্ধসহ সাধারণ পথচারীদের ভোগান্তি হচ্ছে।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. মিজানুর রহমান খুলনা গেজেটকে বলেন, প্রতিদিন সকালে শত শত শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখরিত হয় ল্যাবরেটরি হাইস্কুল মোড় ও তৎসংলগ্ন সড়ক সমূহ। কিন্তু প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে স্কুলের সামনের সড়কসহ ল্যাবরেটরী হাইস্কুলের মোড় পানিতে তলিয়ে যায়। জলাবদ্ধতা ও সড়কের নির্মাণ কাজ বিলম্বিত হওয়ায় জনভোগান্তি চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি প্রত্যাশা করছি।
গভঃ ল্যাবরেটরী হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক আবু হানিফ বলেন, প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে আমাদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। স্কুলের মূল ভবনের নিচ তলার কক্ষগুলোতে পানি ঢুকে যায়। বর্ষা মৌসুমের পুরা সময় স্কুলের খেলার মাঠ পানিতে তলিয়ে থাকে। ছাত্র-ছাত্রীদের খেলাধুলা, অ্যাসেম্বেলি সব বন্ধ থাকে। মাঠে জমে থাকা পানি বের হতে পারে না। মাঠের উত্তর পাশে কুয়েট আইটি পার্ক চার ফুট উঁচু এবং পার্কের সীমানা প্রাচীর আমাদের স্কুলের সীমানার সাথে মিশিয়ে নির্মাণ করার ফলে পানি নিষ্কাশন বন্ধ হয়ে গেছে। এ ব্যাপারে যথাযথ কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার অবহিত করেও কোন ফল পাওয়া যায়নি ‘।
সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ, খুলনার উপাধ্যক্ষ রহিমা খাতুন বলেন, প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে আমাদের চরম দুর্ভোগে পোহাতে হয়। বর্ষায় আমাদের মূল একাডেমিক ভবন, বিজ্ঞান ভবন, শিক্ষার্থীদের আবাসিক ভবন সভা প্রতিষ্ঠানের মাঠ পানিতে তলিয়ে গেছে। ভবনের নীচ তলার কক্ষগুলিতে পানি জমে থাকার কারণে প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে সেগুলো ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। কিছুদিন আগেও বর্ষার পানিতে ভবনের নিচতলায় পানি জমেছিল। আজ সকালে স্কাউটসের একটা অনুষ্ঠানের জন্য গত কয়েকদিন ধরে প্রশাসনিক ভবনের নিচতলার একটি কক্ষ লেবার দিয়ে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে রেখেছিলাম। আজ সকালে এসে দেখি সেটি পানিতে তলিয়ে গেছে। সুতরাং বাধ্য হয়ে আমরা ভবনের দোতলার একটি কক্ষে অনুষ্ঠানটি সম্পন্ন করেছি।
তিনি বলেন, প্রতি চিঠিতে কর্তৃপক্ষকে আমরা বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে যাওয়ার বিষয়টি অবহিত করি। কিন্তু কোন ফল মিলছে না।
কলেজের গেটম্যান আব্দুস সাত্তার বলেন, সকালে ডিউটিতে এসে দেখি কলেজের মাঠ পানিতে থৈ থৈ করছে। কলেজের নীচতলা পানিতে তলিয়ে গেছে। কলেজের প্রশাসনিক ভবনে যেতে হলে হাঁটু পানি ডিঙ্গিয়ে যেতে হচ্ছে। ভোগান্তির স্বীকার হচ্ছে সবাই।
তিনি বলেন, আমি দশ বছর এখানে চাকরি করছি। প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে একই চিত্র দেখতে পাই। পানি নিষ্কাশনের সঠিক ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় বৃষ্টির পানি জমে থাকে।
কলেজের হোস্টেলের ডাইনিংয়ে কাজ করা নান্টু হাওলাদার বলেন, কলেজের নীচতলার সর্বত্র পানি জমেছে। ডাইনিংয়ের নিচতলায়ও পানি জমেছে। সকাল থেকে ডাইনিং এর খাওয়া-দাওয়া বন্ধ রয়েছে।
অফিস সহকারি মো. হাবিবুর রহমান বলেন, সকালে অফিসে এসে মেইন গেট থেকে হাঁটুর উপর পর্যন্ত কাপড় তুলে তারপর প্রশাসনিক ভবনে ঢুকতে হয়েছে। কলেজের ভবনের নীচতলার সবগুলো ক্লাস রুমে পানি ঢুকেছে। মাঠেও পানি জমেছে। কলেজের ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী সবাইকে প্রশাসনিক ভবনে আসা-যাওয়া করতে দুর্ভোগ হচ্ছে।
কলেজের সামনে সড়কের স্থানীয় ওষুধ ব্যবসায়ী মো. আকবর হোসেন বলেন, গভঃ ল্যাবরেটরি হাইস্কুলের পাশ দিয়ে উচ্চ মাধ্যমিক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের পিছন থেকে যে ড্রেনটা রয়েছে সেটি দিয়ে সঠিকভাবে পানি নিষ্কাশন না হওয়ার কারণে প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে এসব এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়। এছাড়া কুয়েট কর্তৃপক্ষ নতুন ক্যাম্পাসের জমি বালি দিয়ে ভরাট করে উচু করার কারণে এই এলাকার পানি নিষ্কাশন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। যার কারণে বর্ষা মৌসুমে অল্প বৃষ্টিতেই রাস্তাঘাট, ড্রেন সব তলিয়ে যায়। ইতিপূর্বে আড়ংঘাটা ও দৌলতপুর থানাধীন কার্তিকুল, সর্দারডাঙ্গা, মধ্যদাঙ্গা, কালিবাড়ি, মহেশ্বরপাশা , বনিকপাড়া, খানাবাড়ি, তেলিগাতী এলাকার সমস্ত বৃষ্টির পানি একই ড্রেন দিয়ে নিষ্কাশন হয়ে বিল ডাকাতিয়ায় চলে যেত। কিন্তু কুয়েটে নতুন ক্যাম্পাস বালি দিয়ে উঁচু করার কারণে এবং ল্যাবরেট স্কুলের সামনে কালভার্টের একাংশ ভেঙ্গে রাখার ফলে পানি নিষ্কাশন বাধাগ্রস্থ হচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দা মো. সোলায়মান শেখ বলেন, গভঃ ল্যাবরেটরি হাইস্কুলের ডান দিক থেকে যে ড্রেনটি সোজা বিলের ভিতর চলে গেছে। ড্রেনটি দিয়ে সঠিকভাবে পানি নিষ্কাশন হলে বৃষ্টির পানিতে সমস্ত এলাকা তলিয়ে যেত না।
পানি নিষ্কাশনের ব্যাপারে এলাকাবাসী যথাযথ কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।
খুলনা গেজেট/ লিপু/এএজে