মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার (ইসি) ও লেখক মাহবুব তালুকদার।
এর আগে শুক্রবার (২৬ আগস্ট) বাদ জুমা জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জুমার নামাজ শেষে জানাজা পড়ান বায়তুল মোকাররমের খতিব হাফেজ মুফতি মাওলানা মো. রুহুল আমিন।
জানাজায় অংশ নেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল, ঢাকা জেলা প্রশাসক শহীদুল ইসলামসহ বিশিষ্টজন ও সাধারণ মানুষ।
জানাজার আগে কাজী হাবীবুল আওয়াল বলেন, ‘আমার কাছে তার পরিচয় একজন লেখক হিসেবে। ইতিহাস নিয়ে বেশ ভালো কিছু লেখা লিখেছেন। উনি লেখক হিসেবেই যেন বেঁচে থাকেন।’
মাহবুব তালুকদারের কানাডাপ্রবাসী ছেলে শোভন মাহবুব বলেন, ‘আমার বাবা নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তার কথা ও কাজে কেউ যদি কষ্ট পেয়ে থাকেন তাহলে তাকে মাফ করে দেবেন।’
উল্লেখ্য, মাহবুব তালুকদার ক্যানসারসহ বার্ধক্যজনিত বেশকিছু রোগে ভুগছিলেন। কিছুদিন আগে তিনি এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছিলেন। শারীরিক অবস্থা ভালো হওয়ায় সেখান থেকে বাসায় ফেরেন। তারপর গত বুধবার হঠাৎ অক্সিজেন স্যাচুরেশন কমে যাওয়ায় বেলা সাড়ে ১১টায় তাকে ইউনাইটেড হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
চিকিৎসক জানান, তার ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮০ বছর।
মাহবুব তালুকদার নেত্রকোণার পূর্বধলা উপজেলায় ১৯৪২ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। তিনি নবাবপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক, ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করেন।
তিনি ছিলেন আধুনিক বাংলা সাহিত্যের একজন প্রখ্যাত কবি ও শিশু সাহিত্যিক। মাহবুব তালুকদার কর্মজীবনের শুরুতে দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় সাংবাদিকতার পাশাপাশি শিক্ষকতা করতেন। তৎকালীন জগন্নাথ কলেজ, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) স্থাপত্য বিভাগে ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে শিক্ষকতা করেন।
১৯৭১ সালে মাহবুব তালুকদার মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন এবং মুজিবনগর সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয়ে চাকুরিতে যোগ দেন। পরবর্তীতে সরকারি চাকরির ধারাবাহিকতায় বঙ্গবভনে পাঁচ বছর অবস্থানকালে বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতি আবু সাঈদ চৌধুরীর বিশেষ কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ পান মাহবুব তালুকদার। এরপর রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদউল্লাহর জনসংযোগ কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহকারী প্রেস সচিব হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।
এছাড়া শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৯ সালে তিনি অতিরিক্ত সচিব হিসেবে চাকরি থেকে অবসর গ্রহণের আগ পর্যন্ত বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থায় কাজ করেছেন। শিশু সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য ২০১২ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কারও পেয়েছেন। ২০১৭ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারিতে মাহবুব তালুকদার, কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বে গঠিত পাঁচ সদস্যের বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের সদস্য হিসেবে রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ কর্তৃক নিয়োগ পান।
মাহবুব তালুকদার ব্যক্তি জীবনে নীলুফার বেগমের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তার তিন সন্তানের মধ্যে বড় মেয়ে ডা. আইরিন মাহবুব বাবা-মায়ের সঙ্গেই থাকেন। আর দুই সন্তানের একজন কানাডায় ও আরেকজন আমেরিকায় থাকেন।