লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে বিয়ের দাওয়াত খেয়ে নারী-শিশুসহ অন্তত ৮০ জন অসুস্থ হয়েছেন বলে জানা গেছে। তাদের মধ্যে ৩০ জনকে রায়পুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে।
শুক্রবার (১৯ জানুয়ারি) রাত থেকে পেটব্যথা ও বমি হওয়ায় রোগীরা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে একজনকে লক্ষ্মীপুর সদরের ১০০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার রায়পুর উপজেলার কেরোয়া ইউনিয়নের উত্তর কেরোয়া এলাকার বসু পাটোয়াটী বাড়ির সাইফুল ইসলামের ছেলে মো. নাদিম ও চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার চরদুখিয়া ইউনিয়নের চরমান্দারী এলাকার তফাদার বাড়ির মৃত তোফায়েল আহাম্মদের মেয়ে তানিয়া আক্তারের বিয়ে হয়। কনের বাড়িতে আয়োজিত বিয়ের অনুষ্ঠানের খাবার খাওয়ার পর থেকে অসুস্থ হতে থাকে বরপক্ষের লোকজন।
শুক্রবার রাত ৮টার দিকে রায়পুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায়, পেটে ব্যথা নিয়ে ৩০ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। কেউ কেউ চিকিৎসা নিয়ে ফিরে গেছেন। হাসপাতালে ভর্তি হওয়াদের মধ্যে ১৫ জন নারী ও ৯ শিশু এবং ৬ জন পুরুষ রয়েছে।
রায়পুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক বাহারুল আলম বলেন, বিয়েবাড়িতে দাওয়াত খেয়ে খাদ্যে বিষক্রিয়ার কারণে বমি ও পেটব্যথা নিয়ে হাসপাতালে এখন পর্যন্ত ৪০ জন রোগী এসেছিলেন। তাদের মধ্যে ৩০ জনকে ভর্তি করা হয়েছে। অন্যরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে ফিরে গেছেন। রবিউল আহাম্মেদ নামের একজনের অবস্থা খারাপ হওয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে লক্ষ্মীপুর ১০০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। রাত ৮টায় আরও কয়েকজনকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
মাইনুল ইসলাম (৫২) নামের এক রোগী বলেন, ‘দাওয়াত খেয়ে আসার পর থেকে পেটব্যথা শুরু হয়। বিকেল ৫টার দিকে বাড়িতে ১৫-২০ জনের পাতলা পায়খানা ও বমি হতে থাকে। অবস্থা বেশি খারাপ হলে রাতেই হাসপাতালে ভর্তি হই। প্রথমে ভেবেছিলাম শুধু আমার পেটে সমস্যা হয়েছে। পরে জানতে পারলাম, ওই অনুষ্ঠানে যারা এসেছিল, প্রায় সবার একই অবস্থা।’
বরের ভাই মো. মাসুম বলেন, ‘দু-একজনের সমস্যা হলে বিষয়টি স্বাভাবিক ছিল। যখন শুনলাম প্রায় সবারই এ সমস্যা হয়েছে, তখন বিষয়টি স্বাভাবিক মনে হচ্ছে না। তবে মেয়ে পক্ষেরও ৩০ জন লোক অসুস্থ হয়েছে বলে শুনেছি। বিয়ের অনুষ্ঠানে তারা ১৫০ জনের মতো অংশ নিয়েছেন। এর মধ্যে ৪০ জনই অসুস্থ হয়েছেন। দাওয়াতে অংশ নেওয়া সবাই গরুর মাংস খেয়ে অসুস্থ হয়েছেন। আমিসহ যারা গরুর মাংস খাননি, তাদের সমস্যা হয়নি। দুর্ব্যবহার করায় সাংবাদিকদের কাছে ক্ষমা চেয়েছি।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা বাহারুল আলম বলেন, বিয়েবাড়িতে দাওয়াত খেয়ে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া সবাই খাদ্যে বিষক্রিয়ার কারণে বমি ও পেটব্যথা নিয়ে হাসপাতালে এসেছেন। বিষয়টি তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে উপজেলা স্যানিটারি ইন্সপেক্টরসহ একজন স্বাস্থ্য সহকারীকে ওই বাড়িতে পাঠিয়ে বিষয়টি তদন্ত করছেন। হাসপাতালে ভর্তি হওয়া অনেকেরই অবস্থা বর্তমানে ভালো। কয়েকজনকে চিকিৎসা শেষে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি তারা গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখছেন।