খুলনা, বাংলাদেশ | ১৯ ফাল্গুন, ১৪৩১ | ৪ মার্চ, ২০২৫

Breaking News

  ভারতের বিভিন্ন কারাগারে এক হাজার ৬৭ জন বাংলাদেশির নাম পাওয়া গেছে, সেখানে গুমের শিকার কেউ আছে কিনা অনুসন্ধান চলছে : গুম সংক্রান্ত তদন্ত কমিশন
  তারেক রহমান ও গিয়াস উদ্দিন আল মামুনের অর্থপাচার মামলার রায় ৬ মার্চ : আপিল বিভাগ
গুলিস্তানের ভবন বিস্ফোরণ

বিস্ফোরণের কারণ অস্পট, ৫তলার অনুমোদনে ৭তলা!

গেজেট ডেস্ক

পুরান ঢাকার গুলিস্তানের সিদ্দিক বাজারে বিস্ফোরণে বিধ্বস্ত ক্যাফে কুইন ভবনের চতুর্থ তলা থেকে ওই ভবনের একটি নকশার অনুলিপি পাওয়া গেলেও ভবনের মূল নকশাটি এখনও খুঁজে পায়নি রাজউক।

নকশার ওই অনুলিপির বরাত দিয়ে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) কর্মকর্তারা বলছেন, ১৯৮৩ সালের ওই নকশা অনুযায়ী ভবনটি পাঁচ তলা পর্যন্ত করার অনুমোদন ছিল।

রাজউক কর্মকর্তারা বৃহস্পতিবার (০৯ মার্চ) পুলিশ সঙ্গে নিয়ে সাত তলা ওই ভবনের চতুর্থ তলায় ভবন মালিকের বাসায় যান। সেখান থেকে তারা ভবনটি ১০ তলা পর্যন্ত করার আরেকটি নকশা পান। তবে ওই নকশায় রাজউকের কোনো সিল বা স্বাক্ষর নেই। ফলে ১০ তলা পর্যন্ত করার জন্য ভবন মালিক আবেদন করেছিলেন কি না, তা নিশ্চিত হতে পারছেন না রাজউক কর্মকর্তারা।

পুলিশ এর আগে জানিয়েছিল, ভবনের মূল মালিক রেজাউর রহমান ১০ তলা ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা নিলেও ১৯৯২ সাল পর্যন্ত কেবল বেইজমেন্ট ও প্রথমতলার কাজ সম্পন্ন হয়েছিল। ২০০৪ সালে ভবনটিকে ৭ তলায় উন্নীত করা হয়।

তৃতীয় তলায় একসময় ক্যাফে কুইন নামে একটি খাবার হোটেল ছিল, বেশ কয়েক বছর আগে তা বন্ধ হয়ে যায়। ওই হোটেলের কারণে স্থানীয়রা ভবনটি চেনেন ক্যাফে কুইন ভবন নামে।

২০১১ সালে রেজাউরের মৃত্যুর পর বাণিজ্যিক ভবনটির মালিকানা পান তার তিন ছেলে, দুই মেয়ে ও স্ত্রী। তিন ভাইয়ের মধ্যে মো. ওয়াহিদুর রহমান ও মতিউর রহমান ঢাকায় ওই ভবনেই থাকেন, তারাই ভবনের দেখাশোনা করেন।

ওয়াহিদুর ও মতিউরের পাশাপাশি ওই বনের একটি স্যানিটারি পণ্যের দোকান মালিক আ. মোতালেব মিন্টুকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ বলেছে, এতবড় দুর্ঘটনার দায় ভবনের মালিকসহ সংশ্লিষ্ট কেউ এড়াতে পারে না।

সাত তলা ওই ভবনে মঙ্গলবার বিকালে বড় ধরনের বিস্ফোরণে এ পর্যন্ত ২২ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন শতাধিক মানুষ, তাদের মধ্যে ২৩ জন এখনও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

রাজউকের অথরাইজড অফিসার রঙ্গন মণ্ডল বৃহস্পতিবার বলেন, নকশায় থাকা স্মারক নম্বর অনুযায়ী তারা রাজউকের রেজিস্ট্রার বইয়ে খোঁজ করেছেন। সেখানে যে তথ্য পাওয়া গেছে তাতে ওই ভবনটির ৫ তলা পর্যন্ত অনুমোদন ছিল বলে নিশ্চিত হয়েছেন তারা।

“ফাইলটা যে রাজউকে জমা হয়েছিল আমরা নিশ্চিত হয়েছি। ৫ তলা পর্যন্ত কমার্শিয়াল পারমিশন ছিল। নকশার এন্ট্রি ঠিক আছে। নকশাটা অনুমোদনের পর আমরা আরেকটি এন্ট্রি করি, সেটাও ঠিক আছে। কিন্তু নকশার যে মূল কপি, যেটা আমাদের ফাইলে থাকে সেটা এখনও খুঁজে পাইনি। আমরা এখনও খুঁজছি।”

তিনি বলেন, “আমার আরেকটি বিষয় জেনেছি। ২০০৩ সালে আমাদের রেকর্ড রুমের প্রায় ১০ হাজার নথি উইপোকা নষ্ট করে ফেলেছিল। ওই ১০ হাজার নথির মধ্যে এটাও পড়েছে কি না আমরা নিশ্চিত না। আমরা সকাল থেকে ফাইলটা খুঁজছি, কিন্তু কোনো চিহ্ন পাওয়া যাচ্ছে না।”

রাজউকের অঞ্চল-৫ এর পরিচালক হামিদুল ইসলাম বলেন, রাজউকের রেকর্ড শাখায় রাতেও নকশাটির খোঁজ করছেন তারা। শুক্রবার এবং শনিবারও খোঁজা হবে।

“আমরা ভবনের নকশার একটি অনুলিপি এবং নকশা অনুমোদনের জন্য টাকা জমা দেওয়ার একটি রশিদ পেয়েছি। মূল নকশা পাওয়ার জন্য আমরা সার্চ করছি। আমরা প্রত্যেকটি ফাইলই খুঁজে দেখছি। আগামীকাল এবং পরশু আমাদের জন্য অফিস খোলা।”

বৃহস্পতিবার রাজউকে গিয়ে দেখা যায়, পুলিশের গোয়েন্দা শাখার কর্মকর্তারা ভবন মালিক রেজাউর রহমানের মেয়ের জামাই মোহাম্মদ শোয়েবকে নিয়ে এসেছেন। তার কাছেও ভবনের নকশার বিষয়ে খোঁজখবর করেন তারা।

শোয়েব পরে বলেন, তার শাশুড়ি শামসুন্নাহার তাকে জানিয়েছেন, ভবনের সব কাগজপত্র ক্যাফে কুইন ভবনের চার তলায় আছে। সেখানে ভবন মালিকের পরিবার থাকত। ভবনে না গেলে কাগজপত্র পাওয়া যাবে না।

“তিনি (শাশুড়ি) এখন আমার বাসায় আছেন। তিনি বলেছেন কাগজ সব জায়গামত আছে। ভবন সিল করা, সেজন্য আমরা সেখানে যেতে পারছি না।”

পরে দুপুরের দিকে রাজউকের কর্মকর্তারা গোয়েন্দা পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে ওই ভবনে যান। সেখানে নকশার ওই অনুলিপি পাওয়া যায়। তবে মূল নকশা পাওয়া যায়নি।

অনুলিপির স্মারক নম্বর অনুযায়ী রাজউকের রেকর্ড রুমে নকশার খোঁজ করেন কর্মকর্তারা। ১৯৮০ সাল থেকে ২০০০ সালের পর্যন্ত নথিপত্র ঘেঁটেও ক্যাফে কুইনের মূল নকশা তারা পাননি।

ওই ভবনের জমির দলিল অনুযায়ী, জমিটির মালিক ছিলেন জনৈক তুলশী চরণ কেউট। তার স্ত্রী যশোদা এবং পুত্র তারাপদ জমিটি বিক্রি করেন সাহাবুদ্দিন মিয়ার কাছে। ১৯৫৫ সালের ১২ মে জমিটি ৪ হাজার টাকায় সাহাবুদ্দিন মিয়ার কাছ থেকে কিনে নেন রেজাউর রহমান (দলিলে লেখা রেজিয়ার রহমান)।

দলিল অনুযায়ী ভবনটি সাড়ে তিন কাঠার। সামনের দিকে ভবনটি ৩২ ফুট চওড়া, আর দৈর্ঘ্যে ৫২ ফুট। ভবনের সামনে সড়ক থাকায় সেখানে ফাঁকা জায়গা আছে। কিন্তু অন্য তিন পাশে কোনো ফাঁকা জায়গা নেই। অন্য ভবনের সঙ্গে লাগোয়া।

ভবনে কেন বিস্ফোরণ ঘটল তা এখনও স্পষ্ট না হলেও পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের ধারণা, এটা দুর্ঘটনা, নাশকতা নয়। সেক্ষেত্রে বেজমেন্টে গ্যাস জমে সেখানে বিস্ফোরণ ঘটতে পারে বলেই কর্মকর্তারা ধারণা করছেন।

খুলনা গেজেট/কেডি




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!