খুলনা, বাংলাদেশ | ৬ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২১ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ডেঙ্গুতে একদিনের ৯ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১ হাজার ২১৪

বিশ্ব শান্তির একমাত্র গ্যারান্টি ইসলাম

মোহাম্মদ ইউসুফ আলী

সারা বিশ্বে আজ হাহাকার; সর্বত্র শান্তির দরকার; কিন্তু মানুষ পাচ্ছেনা কোন প্রতিকার। শান্তির আশায়, সুখের নেশায় আর কল্যাণের প্রত্যাশায় মানুষ আজ গ্রহণ করছে অশান্তির দাওয়াই। হাজারো প্যাকেজ, প্রোগ্রাম আর কর্মসূচি চলছে আকাশে, বাতাসে, হাওয়ায়। বাস্তব সত্য এটাই, শান্তি নিয়ে অনেক হৈচৈ হলেও শান্তি আসেনি ধরায়। কিন্তু শান্তি কি সেটাও জানেন না অনেক মহাশয়। অথচ শান্তির সংজ্ঞা দিয়েছেন অনেক আগেই বিশ্বের মালিক, শান্তির মালিক মহান আল্লাহ দয়াময়: যারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং তাদের অন্তর আল্লাহর জিকির দ্বারা শান্তি লাভ করে; জেনে রাখো, আল্লাহর জিকির দ্বারাই অন্তরসমূহ শান্তি পায় (সূরা রা’দ: ২৮)। এই আয়াতে পরিস্কার বলা হয়েছে আল্লাহর জিকির দ্বারাই প্রকৃত শান্তি লাভ করা যায়। আল্লাহ প্রতিটি হুকুম তার স্মরণের সাথে পুরা করা নামই প্রকৃত জিকির। এইজন্য হাদিসেও বলা হয়েছে, প্রত্যেক এতেয়াতকারী বা আল্লাহর হুকুম মান্যকারী জাকের (স্মরণকারী)।

ছোট বাচ্চা থেকে শুরু করে রাষ্ট্রের কর্ণধর সবার জন্য মহান আল্লাহ তায়ালা এবং তার মনোনিত রসুল (স.) নির্দিষ্ট কর্মের হুকুম দিয়েছেন এবং তা পালনের তাগিদ দিয়েছেন। শাসককে বলা হয়েছে, প্রজাসাধারণের খেদমত করবে। আর প্রজাদেরকে বলা হয়েছে, ন্যায়পরায়ণ শাসককে সম্মান করবে। সরকারী কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গ ও শাসকশ্রেণীকে বলা হয়েছে, তোমরা জনগণের সামান্যতম মালও আত্মসাৎ করবে না। আর আমাদের শাসক ও কর্মকর্তাদের নীতি হলো, জনগণের সামান্য মালও ছাড়বো না। হাদিসে মানবতার আদর্শ মহানবী বলেন: আমরা কোন ব্যক্তিকে সরকারী পদে নিয়োগ করলাম। অতঃপর সে একটা সূঁচ পরিমাণ অথবা তার চেয়ে বেশী আমাদের কাছে গোপন করল (অর্থাৎ আত্মসাৎ করল)। এক্ষেত্রে সে খেয়ানতকারী গণ্য হবে। সে কেয়ামতের দিন তা নিয়ে হাজির হবে (মুসলিম)। হাদিসে আছে, যে জনগণের খাদেম হয় সে সমাজের নেতা হয়। আর বর্তমানে অবস্থা এমন হয়েছে যে, যেই সমাজের নেতা হয় সেই জনগণের খাদক হয় ।

ইসলামে ছোটদেরকে বলা হয়েছে, বড়দের সম্মান করবে, আর বড়দের বলা হয়েছে ছোটদের  করবে। একথাগুলোই হাদিসে এসেছে এভাবে, যে ব্যক্তি ছোটদের হেয় করেনা, বড়দের সম্মান করে না এবং আলেম বা জ্ঞানী ব্যক্তিদের শ্রদ্ধা করে না সে আমার উম্মতভুক্ত নয় (তারগীব: আহমাদ, হাকিম))। স্বামীকে বলা হয়েছে স্ত্রীর হকের ব্যপারে যত্নবান হবে, আর স্ত্রীকে বলা হয়েছে স্বামীর হক আদায় করবে। ধনীদের বলা হয়েছে গরীবদের সাহায্য করবে, আর গরীবদের বলা হয়েছে ধনীদের মুখাপেক্ষী হবে না, তাদের কাছে কিছু চাবেনা। ইসলামের কি চমৎকার বিধান! হতদরীদ্র ও নিঃস্ব মানুষের পাশে দাঁড়ানোর প্রতি উৎসাহ প্রদান করতে দয়ার নবী (সাঃ) এরশাদ করেন, যদি কোন ব্যাক্তি কোন বস্ত্রহীনকে বস্ত্র দান করবে আল্লাহ তায়ালা তাকে জান্নাতের সবুজ বস্ত্র পরাবেন। যদি কেউ কোন ক্ষুধার্তকে খানা খাওয়ায় আল্লাহপাক তাকে জান্নাতের ফল খাওয়াবেন। আর যদি কেউ কোন পিপাসিতকে পানি পান করাবে মহান আল্লাহপাক তাকে জান্নাতের মোহরযুক্ত পানীয় পান করাবেন (আবু দাউদ, তিরমিজী)। গরীবদের প্রতি নবীর শিক্ষা, করো না ভিক্ষা; মেহনত করো সবে। সন্তানকে বলা হয়েছে, পিতামাতাকে সম্মানকর, যথাসাধ্য খেদমত করো, আর পিতামাতাকে বলা হয়েছে তাদের জন্য সাধ্যমত খরচ করো, ভালোর ব্যবস্থা করো। আর আমাদের তথাকথিত উন্নতবিশ্বের ভদ্র সমাজের (!) কথা হলো, পিতামাতা বৃদ্ধ হলে তাদেরকে ওল্ডহোম বা বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দাও। ঝামেলাটা চুকে যাক।

কিন্তু এ ব্যাপারে মহান আল্লাহতায়ালার হুকুম হলো: পিতামাতার সাথে সদ্বব্যবহার করো। তাদের কেউ অথবা উভয়েই যদি তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনিত হয় তবে তাদেরকে উহ্ শব্দটিও বলো না এবং তাদেরকে ধমক দিও না। বরং তাদের সাথে বিশেষ মর্যাদাসহকারে কথা বলো (সূরা বনী ইসরাঈল: ২৩-২৪)।

আল্লাহর রসুল (স.) হুকুম দিয়েছেন, তোমরা শ্রমিকের মজুরি দিয়ে দাও তার গায়ের ঘাঁম শুকানোর আগেই। আর আমাদের ক্ষেত্রে কি হয়? মজুরি আদায় করতে গিয়ে ঘাঁম বের হয়ে যায়। আমাদের টার্গেট হলো, কিভাবে অধীনস্থদের কাছ থেকে জুলুমের মাধ্যমে হলেও অধিক কাজ নেয়া যায়। আর আমাদের নবীর জীবনের শেষ কথা ছিল এরকম: নামাজ, নামাজ। আর তোমাদের অধীনস্থদের (চাকর-নকর, কর্মচারী, খাদেম, কাজের লোক ইত্যাদি) ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করো (আবু দাউদ)। সাধারণভাবে প্রত্যেক মুসলমানকেই সম্মান করা, ইজ্জত দেয়া ফরজ বা অবশ্য কর্তব্য।

এ ব্যাপারে হাদিসে জোর হুকুম দিয়ে বলা হয়েছে: তোমরা পরস্পরের প্রতি হিংসাপোষণ করো না, নকল ক্রেতা সেজে আসল ক্রেতাকে ধোঁকা দিও না, ঘৃণা-বিদ্বেষ পোষণ করো না, পরস্পর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ো না, একজনের ক্রয়-বিক্রয়ের উপর অন্যজন ক্রয়-বিক্রয় করো না। আল্লাহর বান্দাগণ, তোমরা ভাই ভাই হয়ে থাক। মুসলমান মুসলমানের ভাই। সে তাকে জুলুম করতে পারে না, হীন জ্ঞান করতে পারে না এবং অপমান-অপদস্থও করতে পারে না। ইসলাম শুধু মুসলমানদের জন্য সুখ, শান্তির ব্যবস্থা করেনি, বরং জাতি, ধর্ম, বর্ণ, নির্বিশেষে সকল মানুষকে সুস্থভাবে, নিরাপত্তার সাথে বাঁচার নিশ্চয়তা বিধান করেছে। যদি কোন অমুসলিমের প্রতি জুুলুম করা হয়, তাহলে স্বয়ং রহমাতুল্লিল আলামীন হুজুর (স.) জালেমদের বিরুদ্ধে আল্লাহর কাছে অভিযোগ করবেন বলে হাদিসে বর্ণিত আছে। কত সুন্দর, সত্য, কল্যাণমুখী ও বাস্তবধর্মী ইসলামের প্রতিটি নিয়ম কানুন ! আমরা সবাই জ্ঞানী; বলতে পারি ‚শান্তি-সুখের বাণী। তবে একটা কথাও শুনি; কাজ হবে না কোনটাতেই যদি আল্লা’র হুকুম না মানি। স্লোগান হলো একটি, ইসলাম মানে শান্তি, বিশ্বে শান্তি পেতে হলে ইসলামই শেষ গ্যারান্টি। (লেখক: প্রাবন্ধিক ও অধ্যাপক, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়)

খুলনা গেজেট/এ হোসেন

 




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!