খুলনা, বাংলাদেশ | ৭ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২২ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ডেঙ্গুতে একদিনের ৯ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১ হাজার ২১৪

বিশ্ব বাঘ দিবস ও আমাদের রয়েল বেঙ্গল টাইগার

ড. খ. ম. রেজাউল করিম

পৃথিবীর সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ বাঘের আবাসস্থল হিসেবে আকর্ষণীয় ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনের রয়েছে আলাদা পরিচিতি। এখানকার বিচিত্র প্রজাতির প্রাণির কথা বলতে গেলে সবার প্রথমেই বলতে হয় রাজসিক প্রাণি রয়েল বেঙ্গল টাইগার-এর কথা। মূলত বাঙালির ইতিহাস, সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য আর ঐতিহ্যের ধারায় রয়েল বেঙ্গল টাইগার এমন প্রাণি যা অহংকার, গর্ব, আনন্দ, ভয় আর সম্মানের প্রতীক।

বিশাল আকৃতি, শক্তি, হিংস্রতা, রাজকীয় চলাফেরা আর দাম্ভিক আচার-আচরণের জন্য এ বাঘের খ্যাতি রয়েছে সারা বিশ্বে। বলা হয় সুন্দরবন রক্ষায় সরকারি নিয়োগপ্রাপ্ত বনরক্ষক থাকলেও এ বনের প্রকৃত পাহারাদার রয়েল বেঙ্গল টাইগার। জানা যায় লন্ডনের রয়েল পরিবারের একজন দক্ষ শিকারী সুন্দরবনের বাঘ শিকারে বীরত্বের পরিচয় দেন। ফলে তিনি উচ্চ প্রশংসিত এবং পুরস্কৃত হন। সেই থেকেই বাংলার বাঘের সাথে রয়েল শব্দটি যোগ হয়।

বাঘ অভিযোজনবান্ধব প্রাণি। উষ্ণমন্ডলীয় বন থেকে শুরু করে ম্যানগ্রোভ জলাভূমি, পত্রমোচী বন সর্বত্রই বাঘ বাস করতে পারে। উপমহাদেশের অতুষ্ণ বনাঞ্চল থেকে রাশিয়ার হিমশীতল দূরপ্রাচ্যেও বাঘ বাস করে। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বাঘের নাম সাইবেরিয়ান ক্যাট, যার বাস সাইবেরিয়াতে। বাঘ বাংলাদেশের আদি প্রাণি নয়।

জানা যায়, বাঘ মধ্য-এশিয়া থেকে হিমালয় পর্বত ডিঙিয়ে আসামের উত্তরাঞ্চল হয়ে ভারতে প্রবেশ করে। ভারতীয় উপমহাদেশের সমতল ভূমিতে এসে এরা তৃণভোজী শিকারোপযোগী প্রাণি অধ্যুষিত বিভিন্ন বনাঞ্চলে আস্তানা গড়ে তোলে। বাংলাদেশ তারমধ্যে অন্যতম। আজ থেকে প্রায় ৫ হাজার বছর আগের মহেঞ্জোদারোর ঐতিহাসিক প্রমাণপঞ্জিতে বাঘের উল্লে¬খ আছে। তবে গত শতাব্দীর ৫০ ও ৬০ এর দশকে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বনাঞ্চলের উপর যে অত্যাচার হয়েছে, তাতে অন্যান্য প্রাণির পাশাপাশি বাঘেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়। তবে এখনো পৃথিবীর ১৪টি দেশে কমবেশি বাঘ দেখতে পাওয়া যায়। এক সময় বাংলাদেশের প্রায় সব জায়গায় বাঘ পাওয়া যেত। বর্তমানে বাঘের বসবাসের জন্য বনের খন্ডাংশ, পাহাড়, ঘাসের জমি এবং জলাভূমি সবই কমে আসছে। এখন বাঘ টিকে আছে শুধুই সুন্দরবনে বিপন্ন প্রজাতির প্রাণি হিসেবে।

বর্তমান পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বনাঞ্চলে বাঘের মোট সংখ্যা ৭ হাজারেরও কম। এদের মধ্যে ভারত-বাংলাদেশের সুন্দরবন হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে ঘনবসতির বাঘের আবাসভূমি। তারমধ্যে ভারতে ৪৭১৫টি এবং বাংলাদেশে আছে প্রায় ৪০০টি বাঘ। তবে সুন্দরবনেও বাঘের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে কমে যাচ্ছে। বনবিভাগ সূত্রে জানা যায়, ২০০৪ সালের বাঘশুমারী অনুযায়ী সুন্দরবনে পূর্ণ বয়স্ক বাঘের সংখ্যা ৪১৯টি। সরকারি সূত্র মোতাবেক বর্তমানে সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা মাত্র ১১৪টি ।

রয়েল বেঙ্গল টাইগার বা বাংলার বাঘ বাংলাদেশের জাতীয় পশু। রয়েল বেঙ্গল টাইগারের দেহবর্ণ গাঢ়-হলুদ এক লালচে হলুদ, তাতে লম্বা-কালো ডোরা পিছন ও উরুতেই বেশি। পেটের দিক সামান্য সাদাটে। হলুদ রঙের লেজে অনেকগুলি কালো বেড়, আগা কালো। কানের পিছন কালো রঙের, তাতে একটি স্পষ্ট সাদা দাগ। চোখের মণি গোল। নখর থাবার ভিতরে থাকে। কমলা-লাল ও হালকা বাদামী রঙের পশমী কোটের উপর লম্বা কালো ডোরা কাটা চকচকে শরীর। কখনো কখনো কাল এবং উজ্জ্বল শ্বেতকায় রংয়ের বাঘ দেখা যায়। পুরুষ বাঘের দের্ঘ্য ২.৫ মিটার থেকে ৩ মিটার আর স্ত্রী বাঘের দৈর্ঘ্য ২ মিটার থেকে ২.৭৫ মিটার লম্বা হয়ে থাকে। একটি পূর্ণবয়সী পুরুষ বাঘের ওজন সাধারণত ১৫০-২২৫ কেজি এবং বাঘিনীর ওজন ১০০-১৫০ কেজি হয়ে থাকে। শুধু ওজনে নয় বাঘিনী পুরুষ বাঘের চেয়ে আকারেও ছোট।

এছাড়া বাঘের রয়েছে শানিত চোখ আর সজাগ কান, যা কোন শিকারের পক্ষে ফাঁকি দেয়া কঠিন। বাঘের শোনার শক্তি, দৃষ্টি শক্তি, বিশেষ করে অত্যন্ত কম আলোয় অসাধারণ। এদের চোখে টেপোট্যাম নামে এক ধরনের আলোক স্পর্শকাতর স্তর আছে, যার মাধ্যমে বাঘ মানুষের চেয়ে অন্ধকারে ছয়গুণ বেশি দেখতে পায়।

মূলত সুন্দরবনের বাঘের আলাদা গাম্ভীর্য, চলন, অভ্যাস, মেজাজ প্রভূতির স্বাতন্ত্র্য থাকার কারণে বলা হয় রয়েল বেঙ্গল টাইগার। এরা অতি চঞ্চল প্রাণি, এক জায়গায় বেশিক্ষণ স্থিও থাকে না, ঘুমায় না, সারাক্ষণ হাটাহাটি করে। এরা সাধারণত নিঃসঙ্গ, কখনও জোড়ায় থাকে। একটি পূর্ণ বাঘ ও বাঘিনী প্রজননক্ষম হয় যথাক্রমে ৪ ও ৩ বছর বয়সে। বাঘ ও বাঘিনীর শারীরিক সক্ষমতার চূড়ান্তে পৌছায় ৭ বছর বয়সে। বাঘিনী একসাথে ২-৫টি বাচ্চা প্রসব করে থাকে। বাচ্চারা মূলত মায়ের যত্নেই ৪-৫ মাস লালিত-পালিত হয়। সাধারণত বাচ্চারা এক বছর বা তারও বেশি সময় মায়ের সাথে কাটায়। বাঘ এতই নির্মম প্রাণি যে, অনেক সময় বাবা বাঘ ক্ষুধার জ্বালায় তার নিজের বাচ্চাদেরও খেয়ে থাকে। তাই বাচ্চাদের জীবন বাঁচাতে মা বাঘ বাবা বাঘ থেকে বাচ্চাদের লুকিয়ে রাখে।

বাঘ মাংসাশী প্রাণি। প্রাকৃতিক পরিবেশে বাঘের জীবন অত্যন্ত কষ্টসাধ্য। তাকে শিকার করে খেতে হয়। এরা স্বভাবে অনেকটা লাজুক প্রকৃতির হলেও শিকার ধরার জন্য ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করে এবং সুযোগ বুঝে শিকারের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। একটি সুস্থ সবল বাঘ প্রতিদিন ৪০ কিলোমিটার এলাকা বিচরণ করে শিকার সংগ্রহ করে থাকে। বাঘ সাধারণত পিছন বা একপাশ থেকে আক্রমন করে। সব শিকারই বাঘ মুখে তুলে নেয়। এরা এতই শক্তিশালী যে, নিজের চেয়ে দ্বিগুণ বড় জন্তুও অনায়াসে শিকার করতে পারে। আর লভ্য শিকারের সংখ্যার ওপরই একটি এলাকায় বাঘের সংখ্যা নির্ভর করে। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতিদিন একটি পূর্ণ বয়স্ক বাঘের গড়পড়তা ১০-১৫ কেজি খাবার প্রয়োজন হয়। এরা প্রধানত নিশাচর, মাঝারি ও বড় আকারের স্তন্যপায়ী জন্তু শিকার করে থাকে। বাঘ খাদ্য হিসেবে প্রায় সব ধরনের মরা-পচা প্রাণিসহ মানুষ, গরু, ছাগল, ভেড়া, মহিষ, কুকুর, হরিণ, বুনো শুকর ও সজারু, বেজী, মাছ, কাঁকড়া, সাপ ও ব্যাঙ প্রভৃতি খেয়ে থাকে।

সাধারণত বৃদ্ধ এবং বন্যজন্তু শিকারে অক্ষম বাঘদের ভিতরেই মানুষ খেকো বাঘ দেখা যায়। কারণ শরীরের শক্তি কমে গেলে যখন দ্রুতগামী হরিণ, শুয়োরসহ অন্যান্য প্রাণি ধরতে পাওে না, তখন বাঘ মানুষ শিকার করে। সুন্দরবনে কেবল কতিপয় বাঘ মানুষ শিকার করে থাকে আর অধিকাংশ বাঘই আক্রমণ করে না। বাঘ সাধারণত প্রতিহিংসা পরায়ণ হয়ে, অত্যন্ত সহজ শিকার মনে করেই মানুষ শিকার করে। তবে আত্মরক্ষার্থে প্রয়োজনে আক্রমণ করে। আর একবার বাঘ মানুষখেকো হলে তখন কেবল মানুষই খায়, অন্য প্রাণি ধরতে যায় না। মানুষ খেকো বাঘ সাধারণত দাপটের সাথে হাটে, সাধারণ বাঘ তা করে না।

সুন্দরবনের সাথে বাঘ যতটা জড়িত, অন্য কোন বনের সাথে সেই সম্পৃক্ততা নেই। বাংলাদেশের সুন্দরবন হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে ঘনবসতির বাঘের আবাসভূমি। আর কোন একক বনে এত বাঘ নেই। সুন্দরবনের প্রাকৃতিক পরিবেশ, আয়তনের বিশালতা, নদ-নদীর পর্যাপ্ততা, বনের গভীরতা, শিকারের সহজলভ্যতা বাঘ বসবাসের জন্য খুবই উপযোগী, যা অন্য বনে পাওয়া যায় না। সে কারণেই একক বন হিসেবে সুন্দরবনেই সব থেকে বেশি সংখ্যক বাঘ বাস করে। আগে বাঘের সংখ্যা সুন্দরবনে অত্যধিক ছিল। বর্তমান পৃথিবীতে বাঘের ৮টি উপজাতির মধ্যে তিনটিই (বেলিনিজ, ক্যাসপিয়ান, জাভান) বিলুপ্ত। কমে আসছে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের সংখ্যাও। এক পরিসংখ্যানে দেখা যায় সুন্দরবনে দীর্ঘ ৩৩ বছরে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বাঘ বাড়েনি বরং কমেছে।

ইউএনডিপির হিসাবমতে, সুন্দরবন থেকে বছরে অন্তত ২০টি করে বাঘ কমে যাচ্ছে। অন্য এক হিসেব মতে, প্রতিবছর গড়ে ৮-১০টি বাঘ বিভিন্ন কারণে মারা যায়। তবে বন বিভাগের সূত্রমতে এ সংখ্যা ৪-৫টি। বন বিভাগ ও বিশেষজ্ঞরা বাঘের মৃত্যুর জন্য ৮টি কারণকে চিহ্নিত করেছেন। যথা-প্রাকৃতিক দুর্যোগ, ঝড়-জলোচ্ছাস ও বন্যা-লবণাক্ততা, লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত বনের ঘনত্ব কমে যাওয়া, খাদ্য সংকট, বার্ধক্যজনিত, পুরুষ বাঘ কর্তৃক বাচ্চা খেয়ে ফেলা, ফাঁদ পেতে ও খাবারের সাথে বিষ মিশিয়ে হত্যা, লোকালয়ে প্রবেশের পর গ্রামবাসী কর্তৃক পিটিয়ে হত্যা ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাব বাঘের অস্তিত্বকে বিপন্ন করে তুলেছে।

এক জরিপে দেখা যায় গণপিটুনি, রোগে ভুগে এবং বিভিন্ন কারণে বিগত দুই যুগে ৬০টি বাঘের মৃত্যু হয়েছে। আর ১৯৮৩-২০০৩ সময়ে সুন্দরবন এবং তৎসংলগ্ন এলাকায় বিভিন্ন কারণে ৫৫টি বাঘ মারা যায়। তবে বন বিভাগের তথ্যমতে, ১৯৯৮ সাল থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত সুন্দরবন এবং তৎসংলগ্ন পার্শ্ববর্তী এলাকায় বিভিন্ন কারণে ১৬টি বাঘ মারা গেছে। সুতরাং দেখা যায়, ক্রমান্বয়ে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে সুন্দরবনের বিরল প্রজাতির বিশ্বখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগার।

বাংলাদেশের সুন্দরবনে বাঘের দীর্ঘমেয়াদী সংরক্ষণের জন্য বাংলাদেশ বন বিভাগ ও মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ উদ্যোগে ‘সুন্দরবন বাঘ প্রকল্প’ নামে একটি প্রকল্প গঠন করা হয়। এর মুখ্য উদ্দেশ্য হলো সমম্বিত গবেষণা, দক্ষতা তৈরি ও সংরক্ষণ বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করা। এ প্রকল্পের অংশ হিসেবে বাঘের সংরক্ষণ ‘কলারিং পদ্ধতি’ প্রয়োগ তথা সুন্দরবনের দু’টি বাঘের গলায় ক্যামেরা ঝুলিয়ে দেয়া হয়, যার মাধ্যমে বাঘের আবাস্থলের প্রকৃতি, বসতির চাহিদা, আচরণ, চলাফেরার ধরণ, শিকারের হার, মানুষ বহনের ক্ষমতা প্রভৃতি সম্পর্কে জানা যায়। বস্তুত ‘কলারিং পদ্ধতি’র মাধ্যমে অর্জিত তথ্য বাঘ সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ‘কলারিং পদ্ধতি’ ব্যবহারের মাধ্যমে রাশিয়াতে বাঘের সংখ্যা ১০০ থেকে ৪০০তে উন্নীত করা সম্ভব হয়েছে। দ্বিতীয়ত: এই পদ্ধতি ব্যবহারের ফলে স্থানীয় জনগণ ও পশুসম্পদকে বাঁচানো সম্ভব। কারণ এ পদ্ধতির মাধ্যমে জানা যায়, বাঘ কখন, কোথায় অবস্থান করে। ফলে স্থানীয় জনগণকে বিপদজনক এলাকা সম্পর্কে পূর্বে ধারণা প্রদান করে আসন্ন বিপদ থেকে তাদের রক্ষা করা যায়। জানা যায় ‘কলারিং পদ্ধতি’ চালুর পর থেকে সুন্দরবনে কোন বাঘ অস্বাভাবিকভাবে মারা যায়নি।

এ গবেষণার মাধ্যমেই জানা যায়, সুন্দরবনে বাঘের ঘনত্ব অন্যান্য অঞ্চলের চেয়ে বেশি; যা বাঘ সংরক্ষণের জন্য গুরুত্বপুর্ণ বিবেচিত হয়। এ প্রকল্প চালুর পূর্বে ২০০৭ সালেও সুন্দরবনে আরো একটি প্রকল্প পরিচালনা করা হয়। তখন বৈজ্ঞানিকভাবে শব্দ জরিপের মাধ্যমে সুন্দরবনের বাঘের সংখ্যা নির্ণয় করা হয়। এই গবেষণা প্রতি দুই বছর অন্তর করার মাধ্যমে বাঘের সংখ্যা বেড়েছে না কমেছে, সংরক্ষণ প্রক্রিয়া কেমন চলছে, কোন উন্নয়ন দরকার কিনা তা জানা যায় ইত্যাদি।

বন্যপ্রাণী বা জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণসংশ্লিষ্ট আর্ন্তজাতিক কনভেনশন যেমন-সাইটিস, রামসার কনভেনশন, সিবিডি, ওর্য়াল্ড হেরিটেজ কনভেনশন ও জিটিএস-এর অন্যতম সদস্য বাংলাদেশ। এসব আন্তর্জাতিক কনভেনশন বা সংস্থার বন্যপ্রাণি সংরক্ষণ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের প্রেক্ষাপট এবং জাতীয় পর্যায়ে দেশের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের প্রেক্ষাপট এক ও অভিন্ন। সেই প্রেক্ষাপটে চুক্তি স্বাক্ষরকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ সরকার বন্যপ্রাণি সংরক্ষণে অঙ্গীকারাবদ্ধ। সে জন্য বন্যপ্রাণি ও বন্যপ্রাণির অবস্থান সংরক্ষণে সরকার ও জনগণ সবারই দায়বদ্ধতা রয়েছে। বন্যপ্রাণি সংরক্ষণে দেশে বিদ্যমান আইন, সময় ও উন্নত বিশ্বের সাথে চলতে গিয়ে এ আইনগুলোর সংস্কার আশু প্রয়োজন। বন্যপ্রাণি বিপন্ন হলে আমাদের অস্তিত্ব শুধু বিপন্ন নয়, ধ্বংসও হবে। বিপন্ন বন্যপ্রাণি ও উদ্ভিদের আর্ন্তজাতিক বাণিজ্য কনভেনশন বিধিমালার ১নং পরিশিষ্টে এবং বাংলাদেশ (বন্যপ্রাণী) (সংরক্ষণ) (সংশোধন) বিধি-১৯৭৪-এর অন্তর্ভূক্ত। বাঘ সংরক্ষণের জন্য প্রয়োজন অবাধ শিকার বন্ধের ব্যবস্থা, ভক্ষ্য শিকারগুলির সুরক্ষা ও সংখ্যাবৃদ্ধি, মানুষ-বাঘ সংঘাত বন্ধের জন্য ক্ষতিগ্রস্থ লোকদের ক্ষতিপূরণ প্রদান।

বাঘ সংরক্ষণে কতিপয় সুপারিশ তুলে ধরা হলো- সুন্দরবনে অবাঞ্চিত ব্যক্তি ও শিকারীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা; বন বিভাগকে আরো শক্তিশালী ও সংগঠিত করা; আধুনিক অস্ত্র ও তথ্যপ্রযুক্তিসহ উন্নতমানের বন নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা; প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যসূচিতে বন্যপ্রাণি সংরক্ষণ বিষয়ক অধ্যায় সংযোজন করা; গণমাধ্যমের মাধ্যমে বণ্যপ্রাণি সংরক্ষণে ব্যাপক প্রচারাভিযান চালানো এবং সুন্দরবন নির্ভর মানুষের সংখ্যা হ্রাস এবং তাদেরকে অন্যান্য বিকল্প পেশায় নিয়োজিত করা।

বাঘ সুন্দরবনের প্রতিবেশের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। এর সুরক্ষা বনের প্রতিবেশকে সুরক্ষিত করে। দিন দিন ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে বিশ্বের অন্যতম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনের বিরল প্রজাতির বিশ্বখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগার।

সুন্দরবনের বাঘের সংখ্যা হ্রাস গেলে স্বাভাবিকভাবেই হরিণসহ অনান্য প্রাণির সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যাবে। ফলে বনের প্রাকৃতিক ভারসাম্য বিনষ্ট হতে পারে। বাঘকে সুন্দরবনের বনজ সম্পদসহ অন্যান্য প্রাণিকুলকে সংরক্ষণের জন্য বিশেষ প্রয়োজন। বাঘ বাংলাদেশের জাতীয় পশু। বনের অভিভাবক হিসেবে বাঘের সংরক্ষণ প্রয়োজন, যা পরিবেশ, সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্য ও মানব জীবনযাত্রাকে রক্ষা করবে। আমাদের উচিত সকলে মিলে সুন্দরবনকে বাঁচানো। তাহলেই বাঁচবে আমাদের প্রকৃতি ও পরিবেশ তথা দেশ।

লেখক : সমাজ গবেষক ও শিক্ষক, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ সরকারি মাইকেল মধুসুদন কলেজ, যশোর।

খুলনা গেজেট/এমএম




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!