বাংলাদেশ নতুন করে উত্তাল হয়ে ওঠার খবর আবারও উঠে এসেছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে। এতে স্থান পেয়েছে শিক্ষার্থীদের সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবি।
শনিবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী দৈনিক নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল ‘প্রাণঘাতী ক্র্যাকডাউনের কয়েক সপ্তাহ পর আবারও প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ’। এতে আরও বলা হয়, কারফিউ এবং যোগাযোগ মাধ্যমের ওপর বিধিনিষেধ শিথিল হওয়ার পর থেকেই আগের বিক্ষোভের ভয়াবহ দমনপীড়নের ঘটনায় ক্ষোভের আগুন আরও একবার জ্বলতে শুরু করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ভয়াবহ সরকারি দমনপীড়নের ছাত্র আন্দোলনকে ছত্রভঙ্গ করে দেওয়ার মাত্র কয়েক সপ্তাহ পরই নতুন বিক্ষোভে বাংলাদেশ উত্তাল হয়ে উঠছে। গত মাসের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ দমনে ছাত্রদের ওপর হামলার পর সরকার ছাত্র নেতাদের আটক এবং অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের মতো মামলায় প্রায় ১০ হাজার লোককে গ্রেপ্তার করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, কোটা নিয়ে সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে ছাত্রদের প্রাথমিক দাবি পূরণ হয়েছে। তবে ক্র্যাকডাউন এখন জনগণকে আরও ক্ষুব্ধ করে তুলেছে। তারা ক্র্যাকডাউনে ২০০ জনেরও বেশি লোকের মৃত্যুর জন্য জবাবদিহির আহ্বান জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর ১৫ বছর শাসনকালের মধ্যে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছেন। শনিবার ঢাকা কলেজের কাছে জড়ো হওয়া একদল বিক্ষোভকারী স্লোগান দেয়, ‘বুকের ভেতর দারুণ ঝড়, বুক পেতেছি গুলি কর।’
এর আগে বিক্ষোভে অংশ নিয়ে অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান বলেছেন, যে কর্তৃপক্ষ এই ক্র্যাকডাউন চালিয়েছে সেই কর্তৃপক্ষই ন্যায়বিচার করবে বলে বিশ্বাস করা যায় না। তিনি বলেন, ‘আপনি কীভাবে একজন খুনির কাছে হত্যার বিচার আশা করতে পারেন? এই হত্যাকাণ্ড রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায়, রাষ্ট্রীয় বাহিনী এবং তাদের সহযোগীদের দ্বারা সংঘটিত হয়েছে।’
আলজাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, গত মাসে ছাত্র বিক্ষোভে ২০০ জনেরও বেশি মানুষের হত্যার বিচার দাবিতে বাংলাদেশে বিক্ষোভকারীরা আবারও রাস্তায় নেমেছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের ওপর আরও চাপ সৃষ্টি করে ছাত্র নেতারা দেশব্যাপী আইন অমান্য আন্দোলনের আহ্বান জানানোর পর শনিবার বড় ধরনের বিক্ষোভ হয়।
ঢাকা থেকে আলজাজিরার প্রতিনিধি তানভীর চৌধুরী বলেছেন, গাজীপুর ও কুমিল্লা জেলায় বিক্ষোভকারী ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। তিনি বলেন, এই ছাত্র আন্দোলন একটি গণআন্দোলনে পরিণত হয়েছে। সরকারকে পদত্যাগ করার আহ্বান জানিয়ে শনিবারের বিক্ষোভে সর্বস্তরের মানুষ যোগ দেন। টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনেও অসহযোগ আন্দোলনের ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়।
রয়টার্সের প্রতিবেদনের শিরোনাম হলো– ‘শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবিতে বাংলাদেশে হাজার হাজার মানুষের বিক্ষোভ।’ গত মাসে চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা নিয়ে বিক্ষোভ চলাকালে সহিংসতায় দেড় শতাধিক মৃত্যুর (সরকারি হিসাবে) জন্য বিচার দাবি করেন আন্দোলনকারীরা।
ভারতের স্ক্রল সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের ছাত্র-নেতৃত্বাধীন বিক্ষোভ ‘স্বৈরাচারী সরকার’কে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য গণঅভ্যুত্থানে রূপ নিয়েছে। ২০০ জনের বেশি লোক মারা যাওয়ার পর এখন বিক্ষোভকারীদের একটাই দাবি– প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে।
খুলনা গেজেট/এইচ