এক অভাবনীয় দৃশ্য। সুদৃশ্য মসজিদের চারপাশে ত্রিশ একর বিস্তৃত আঙিনা জুড়ে সারিবদ্ধ ভাবে ইফতারে বসেছে পঁয়ত্রিশ হাজারের বেশি মানুষ। মদিনার পর এটিই একসাথে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তর ইফতার আয়োজন।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের শেখ যায়েদ গ্র্যান্ড মসজিদে প্রতি বছরের ন্যায় এবছর ও চলছে ইফতার আয়োজন। এখানে প্রতিদিন ৩৫ হাজারেরও বেশি রোজাদার বিনামূল্যে ইফতার করেন। দেশটির স্থপতি শেখ জায়েদ বিন সুলতান আল নাহিয়ানের নামে ১৯৯৬ সালে আবুধাবিতে ৩০ একর জায়গা জুড়ে নির্মাণ করা হয়েছে শেখ যায়েদ মসজিদ। সৌন্দর্য ও বিশালতায় বিশ্বের শীর্ষ দশ মসজিদের মধ্যে অন্যতম এই শেখ যায়েদ মসজিদ। এখানে ৪২ হাজার মুসল্লি একসাথে নামাজ আদায় করতে পারে। রয়েছে সকল আধুনিক সুবিধা।
ইফতারের দুই ঘন্টা পূর্বে রোজাদাররা আসতে শুরু করে। পরিবহন নির্ভর এই শহরে মসজিদের চারিদিকের রাস্তায় দীর্ঘ লাইনে সারিবদ্ধভাবে গাড়ী আসতে থাকে।মহিলা রোজাদারদের ১ হাজার ৫’শ সহ মোট ৮ হাজার ৩৭৯টি পার্কিং স্পেস নির্ধারণ করা আছে। ইলেক্ট্রিক গাড়ীর জন্য রয়েছে আরো ৭০টি চার্জিং পয়েন্ট। ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ, অভ্যর্থনা, দিকনির্দেশনা থেকে খাবার পরিবেশন পর্যন্ত পুলিশের সাথে একদল প্রশিক্ষিত স্বেচ্ছাসেবক দল নিরলস পরিশ্রম করে। ধনী-গরিব বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষ সামিল হয় এই আয়োজনে। আমন্ত্রিত মেহমান,বিদেশি কূটনৈতিক ও বিশিষ্ট সম্মানিত মানুষের পৃথক জোন, রয়েছে পরিবার, স্ত্রী- সন্তান, বয়স্ক-বাবা-মাকে সাথে নিয়ে একসাথে ইফতারের ফ্যামিলি জোন। অনেক মানুষের সাথে দোয়া করলে কবুল হয় এই আশায় ধনী-গরীব, শ্রমিক-পেশাজীবি একই সাথে সারিবদ্ধ হয়ে বসেন সবাই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে।দেশটির রাজ পরিবারের সদস্যরা সামিল হন সাধারণ মানুষের সারিতে। কখনো দেশটির প্রেসিডেন্ট সকলকে চমকে দিয়ে জনসাধারণের কাতারে বসে খাবার গ্রহণ করেন।প্রত্যেকের জন্য সুদৃশ্য বক্সে খাবার পরিবেশন করা হয়। খেজুর,আপেল,কমলা,কলা ছাড়া বিরিয়ানি,সালাদ,সবজি,স্যুপ দেওয়া হয়। পানীয় হিসেবে পরিবেশন করা হয় ফলের জুস, দুধ ও বোতলজাত পানি। জানা যায়, এ মসজিদের ইফতার আয়োজনে প্রতিদিন ব্যবহার করা ১২ টন মুরগির মাংস, ছয় টন ভেড়ার মাংস এবং অন্য দ্রব্যাদি যেমন চাল, সবজি, টমেটো ও পেঁয়াজ মিলিয়ে ৩৫ টন। আর এতো বড় আয়োজনে শেফ ও রান্নার সহকর্মীদের তালিকাও অনেক দীর্ঘ। তাদের পরিশ্রমও সীমাহীন।ইফতার আয়োজনটি সফল করার জন্য প্রতিদিন দায়িত্ব পালন করেন দেশটির সশস্ত্র বাহিনী কর্মকর্তা ক্লাব এবং হোটেলের প্রায় এক হাজার কর্মী। এ ইফতার প্রস্তুতকারী দলের মধ্যে রয়েছেন ৩৫০ জন শেফ, ১৬০ জন স্টুয়ার্ড এবং ৪৫০ জন সেবাদানকারী কর্মী। তারা দেশের স্বাস্থ্যবিধি মেনে একত্রিত হয়ে প্রতিদিন ইফতার তৈরি করে আসছেন মসজিদটির জন্য।
আবুধাবির সশস্ত্র বাহিনী কর্মকর্তা ক্লাব ও হোটেলের নির্বাহী শেফ কারস্টেন গটসচাল্ক বলেন, প্রতিদিনই ইফতারের এক ঘণ্টা আগে থেকে রোজাদারদের সামনে আমরা খাবারের বাক্স বিতরণ করি । আমরা খাবারের মান উন্নত করেছি। পাশাপাশি বাক্সসহ রান্নাঘরের বিভিন্ন সরঞ্জামাদি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রেখে স্বাস্থ্যসম্মতভাবে খাবার পরিবেশন করছি। বিতরণের জন্য দেশের রেড ক্রিসেন্টের এক হাজার ৫শ জন স্বেচ্ছাসেবক কাজ করেন বলে তিনি জানান।
আবুধাবির বাংলাদেশি কমিউনিটির সাহিত্য সংগঠক আবু তৈয়ব চৌধুরী বলেন, আমি ভাগ্যবান যে, এতো বড় একটি মাহফিলে আমার ইফতার করার সুযোগ হলো। যেখানে ধনী গরীব সকল শ্রেণী পেশার মানুষ একসাথে বসে ইফতার করছে। জীবনে হয়তো এতো বড় সুযোগ আর নাও পেতে পারেন বলে উল্লেখ করেন তিনি।
আবুধাবিতে নির্মাণ শ্রমিকের কাজে নিয়োজিত বাংলাদেশের আব্দুর রহিম বলেন, আমার কর্মস্থল শেখ জায়েদ গ্র্যান্ড মসজিদের কাছে। তাই রোজা এলে প্রায় প্রতিদিনই দেশের সবচেয়ে বড় এ ইফতার আয়োজনটিতে অংশ নিই। খোলা আকাশে এখানের খাবার অনেক ভালো লাগে। তাছাড়া খাবার দেওয়ার প্রক্রিয়াও অনেক সুন্দর।
গত বছর রমজান মাসে মসজিদে দর্শনার্থীর সংখ্যা প্রায় ১৬ লাখ ৪ হাজার ১৭০জন।যার উল্লেখযোগ্য মানুষ মুসলিম রোজাদার। তাছাড়া আকর্ষণীয় গঠনশৈলী ও সৌন্দর্যের কারণে বহু অমুসলিম পর্যটক মসজিদটি দেখতে আসে।
খুলনা গেজেট/ টিএ