খুলনা, বাংলাদেশ | ৮ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৩ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  রাজধানীতে ফার্মগেটে বণিজ্যিক ভবনে আগুন, নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের ৫ ইউনিট কাজ করছে
  গাজীপুরের শ্রীপুরে পিকনিকের বাস বিদ্যুতায়িত হয়ে ৩ শিক্ষার্থী নিহত
  ঝিনাইদহে ২ ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে ট্রাক চালকের মৃত্যু

বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমলেও বাংলাদেশে বেড়েছে কেন?

গেজেট ডেস্ক

বাংলাদেশে এ বছরের মার্চ থেকে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে সমন্বয় করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কিন্তু, দেখা যাচ্ছে গত মাসে বিশ্ববাজারে কমলেও দেশটিতে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে। চলতি মাসের এক তারিখ থেকে নতুন দাম কার্যকর হয়। ৩০শে মে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি থেকে জানা যায়, ডিজেল ও কেরোসিনের দাম ৭৫ পয়সা এবং পেট্রোল ও অকটেনের দাম বাড়ানো হয়েছে আড়াই টাকা করে।

এতে ডিজেল ও কেরোসিনের মূল্য দাঁড়ায় লিটারে ১০৭ টাকা ৭৫ পয়সা। আর, পেট্রোল ও অকটেনের দাম হয় লিটার প্রতি যথাক্রমে ১২৭ ও ১৩১ টাকা।

অথচ, গত চৌঠা জুন বিশ্বব্যাংকের ‘কমোডিটি প্রাইস’ (দ্রব্য মূল্য) সংক্রান্ত প্রতিবেদন বলছে, মে মাসের শুরুতে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম প্রতি ব্যারেলে প্রায় ছয় ডলার করে হ্রাস পেয়েছে।

জ্বালানিতে ভর্তুকি প্রথা থেকে বের হয়ে আসার জন্য মার্চের প্রথম সপ্তাহ থেকে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির ‘দাম সমন্বয়’ শুরু করে সরকার। এ পর্যন্ত মোট চার বার মূল্য সমন্বয় করা হয়েছে। যেখানে বিশ্ববাজারের সঙ্গে মিল রেখে দুই দফা দাম কমেছে। আবার, দুই দফায় বেড়েছেও। কিন্তু, হ্রাস-বৃদ্ধির ক্ষেত্রে সবসময় আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সাদৃশ্য দেখা যাচ্ছে না কেন?

বিপিসি কী বলছে?

বাংলাদেশে জ্বালানি তেল আমদানি ও বাজারজাত করে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)।

প্রতিষ্ঠানটি সূত্রে জানা যায়, প্রায় সব ধরনের জ্বালানি নিয়ে কারবার করলেও করপোরেশনের মূল ব্যবসা ডিজেলের। ডিজেলের দাম ৭৫ পয়সা বাড়িয়েও কোনো লাভ হচ্ছে না বলে দাবি বিপিসি চেয়ারম্যান মো. আমিন উল আহসানের।

বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেন, উল্টো আগের মুনাফা থেকে ৫১২ কোটি টাকা অতিরিক্ত ব্যয় করতে হচ্ছে।

তার দাবি, বিশ্ববাজারে কমার পরেও দেশে জ্বালানি তেলে মূল্য না কমার পেছনে ডলারের ক্রলিং পেগ (নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে ডলারের বিনিময় হার ওঠা নামা) পদ্ধতিই দায়ী।

আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কিছুটা কমেছে স্বীকার করে তিনি বলেন, সমন্বয় করেও ভোক্তা পর্যায়ে রিফ্লেকশন পড়েনি, কারণ এই সময়ে টাকার বিপরীতে ডলারের মূল্যমান পাল্টে গেছে।

“১১০ টাকা করে এলসি খুলেছি, কিন্তু পেমেন্ট করতে হচ্ছে ১১৭ টাকায়,” যোগ করেন মি. আহসান।

ডিজেলের দাম সাত টাকা বাড়ালে ডিজেলের বিপণন ব্রেক ইভেনে (আয়-ব্যয় সমান) থাকতো, বলছেন বিপিসি চেয়ারম্যান।

“অন্তত পাঁচ শতাংশ লাভ থাকলে ব্যবসা সাসটেইনেবল (টেকসই) হয়। ব্রেক ইভেনে থাকলে তো সাসটেইনেবিলিটি থাকে না। গত মাসে আমাদের জিরো মার্জিন ছিল,” বলেন তিনি।

বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য

ডলারের দামের কারণটিকে যৌক্তিক মনে করেন ভোক্তাদের অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি অধ্যাপক গোলাম রহমান।

তবে, প্রত্যেক মাসে সমন্বয় করাটাকে সমর্থন করেন না বলে জানালেন বিবিসি বাংলাকে।

জ্বালানি তেলের দরের সাথে পরিবহন ব্যয়সহ উৎপাদন খাতের ব্যয়ও জড়িত।

অধ্যাপক রহমান বলেন, “সবকিছুতে একইসঙ্গে অ্যাডজাস্টমেন্ট সম্ভব হয় না।”

“যখন তেলের দাম বাড়ে, তখন সবকিছুর দাম বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু যখন তেলের দাম কমে, তখন আর সবকিছুর দাম কমায় না,” বিবিসি বাংলাকে বলেন তিনি।

আন্তর্জাতিক বাজারের বিপরীতে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি ডলারের কারণে হতে পারে বলে মানলেও, বাংলাদেশের একজন জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ম. তামিম, বিপিসিকে নিয়ে তার সংশয়ের কথা জানিয়েছেন।

“বিপিসি এমন একটি অস্বচ্ছ প্রতিষ্ঠান, তাদের কোনো কথা বিশ্বাস করা কঠিন। কীভাবে করা হচ্ছে, কত দাম ধরা হচ্ছে সেটা আমরা জানি না,” বলেন তিনি।

তার পরামর্শ, যেহেতু আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করার ফর্মুলা দেয়া হয়েছে, সেই কাজটা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) করতে পারে।

কবে কমবে?

জ্বালানি তেলের দাম আন্তর্জাতিক বাজার ছাড়াও পরিবহন খরচ অর্থাৎ জাহাজ ভাড়ার মতো বিষয়ের ওপর নির্ভরশীল।

বিপিসি চেয়ারম্যান মো. আমিন উল আহসান জানান, জাহাজ ভাড়া আপাতত স্থিতিশীল আছে।

“বাজার মূল্য যদি কমতে থাকে, আগামী মাসের মূল্য সমন্বয়ের পর অল্প হলেও রিফ্লেকশন (প্রতিফলন) দেখা যাবে বলে আমি আশাবাদী,” বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।

আগে জ্বালানি তেলে সরকার ভর্তুকি দিতো।

আইএমএফের সাম্প্রতিক শর্তের কারণে জ্বালানিতে আর ভর্তুকি না দেয়ার নীতিগত সিদ্ধান্তের কথা উল্লেখ করে মি. আহসান বলেন, দাম আরো কমাতে গেলে সরকারকে ভর্তুকি দিতে হতো। কিন্তু, নীতিগত কারণে সেটা সম্ভব নয়।

ফলে, জুলাই মাসের মূল্য সমন্বয়ের দিকেই চোখ রাখতে হবে ভোক্তাদের।

বিশ্ববাজারে দাম বৃদ্ধিকে কারণ হিসেবে উল্লেখ করে ২০২২ সালের অগাস্টে জ্বালানি তেলের মূল্য এক লাফে প্রায় ৫০ শতাংশ বাড়ায় বাংলাদেশ সরকার।

ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ৮০ টাকা থেকে ৩৪ টাকা বাড়িয়ে ১১৪ টাকা করা হয়। এছাড়া, অকটেনে লিটার প্রতি ৪৬ টাকা এবং পেট্রলে ৪৪ টাকা বাড়ানো হয় সেসময়।

এমন নজিরবিহীন বৃদ্ধির কারণে জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়ে। এর প্রভাবে বাজারের জিনিসপত্রের পাশাপাশি, বেড়ে যায় পরিবহন খরচও।

তখন সরকারি বিজ্ঞপ্তিতে জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদকে উদ্ধৃত করে বলা হয় “পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সে অনুযায়ী জ্বালানি তেলের মূল্য পুনর্বিবেচনা করা হবে।

এর ধারাবাহিকতায় আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে সমন্বয় করে বাংলাদেশে জ্বালানি তেলের দাম নির্ধারণ করার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। যেটাকে, জ্বালানি তেলের স্বয়ংক্রিয় মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতি বা অটোমেটেড প্রাইসিং ফর্মুলা বলে উল্লেখ করা হয়।

এই ফর্মুলায় আন্তর্জাতিক বাজার থেকে যে দামে তেল আমদানি করা হবে, তার সাথে সামঞ্জস্য রেখেই তেলের মূল্য নির্ধারণ করার কথা।

সূত্র : বিবিসি বাংলা

খুলনা গেজেট/এএজে




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!