১৭ বছরের অপেক্ষা ঘুচিয়ে ভারতকে বিশ্বকাপ জেতালেন রোহিত শর্মা। আর বিশ্বকাপ জয়ের পরপরই, রোহিত শর্মা তার আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট থেকে অবসরের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করলেন, ঠিক যেমনভাবে বিরাট কোহলি কিছুক্ষন আগে তার অবসরের কথা জানিয়েছিলেন। ২৯ জুন ২০২৪, বার্বাডোসে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ভারতের জয়ী পারফরম্যান্সই মারকুটে এই ওপেনারের শেষ প্রদর্শন।
ম্যাচের পর একটি আবেগঘন সংবাদ সম্মেলনে রোহিত শর্মা তার অবসরের সিদ্ধান্ত শেয়ার করেন। তিনি বলেন, ‘এটিই আমার শেষ ম্যাচ ছিল। সত্যি বলতে, আমি এই ফরম্যাটে খেলার মুহূর্তগুলো উপভোগ করেছি। বিদায় বলার জন্য এর চেয়ে ভালো সময় আর হতে পারে না। আমি এই ফরম্যাটে আমার ভারতীয় ক্যারিয়ার শুরু করেছিলাম। এটাই করতে চেয়েছিলাম – কাপ জিততে এবং বিদায় জানাতে।”
ভারতীয় অধিনায়কের এই ঘোষণা আসে ঠিক সেই সময়, যখন বিরাট কোহলি, যিনি ম্যাচের সেরা খেলোয়াড় হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন, টি-টোয়েন্টি আন্তর্জাতিক থেকে তার অবসর ঘোষণা করেন। কোহলির ৭৬ রানের শক্তিশালী ইনিংস ভারতের শক্তিশালী স্কোর গড়তে এবং ফাইনালে জয় নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
রোহিত শর্মার উজ্জ্বল টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ার শুরু হয়েছিল ২০০৭ সালে তার অভিষেকের মাধ্যমে, এবং এরপর থেকে তিনি ফরম্যাটের অন্যতম সফল এবং প্রিয় খেলোয়াড় হয়ে উঠেছেন। তার নেতৃত্ব এবং ব্যাটিং দক্ষতা বছরের পর বছর ধরে ভারতের টি-টোয়েন্টি সাফল্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
এর আগে ক্যারিয়ারে প্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জেতার পর এ সংস্করণ থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন বিরাট কোহলি। ফাইনালে ৫৯ বলে ৭৬ রানের ইনিংস খেলে ম্যাচসেরার পুরস্কার নিতে এসে এ ঘোষণা দেন ভারতের সাবেক অধিনায়ক। দল হারলেও একই ঘোষণা দিতেন বলেও জানিয়েছেন ৩৫ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান।
টুর্নামেন্টে ফাইনালের আগে ৭৫ বলে ৭৫ রান করে চাপে ছিলেন কোহলি। ফাইনালে শুরুটা আক্রমণাত্মক করলেও অন্যপ্রান্তে দ্রুত উইকেট পড়ে যাওয়ার এক প্রান্ত ধরে রাখেন কোহলি। এ ইনিংসের কারণে ম্যাচসেরা হয়েছেন তিনি।
সে পুরস্কার নিতে এসে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের সঞ্চালক হার্শা ভোগলেকে কোহলি বলেন, ‘এটা আমার শেষ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ এবং এটি আমরা অর্জন করতে চেয়েছি। একদিন আপনার মনে হবে রানই করতে পারছেন না, তারপরে কিছু ঘটবে। ঈশ্বর মহান। এবং যে দিন গুরুত্বপূর্ণ, আমি দলের কাজটি করেছি। এখন অথবা কখনোই নয়-ভারতের হয়ে আমার শেষ টি-টোয়েন্টি—সবটুকু কাজে লাগাতে চেয়েছি।’
আদতেই কোহলি এমন ঘোষণা দিলেন কি না, ভোগলে সেটি নিশ্চিত হতে চেয়েছিলেন। কোহলি সেটি নিশ্চিত করে জানান, এখন পরবর্তী প্রজন্মের এগিয়ে আসার পালা। কোহলি বলেন, ‘ট্রফিটা উঁচিয়ে ধরতে চেয়েছি। পরিস্থিতিকে সম্মান জানাতে চেয়েছি জোর করার চেয়ে। এটা (অবসর) “ওপেন সিক্রেট” ছিল, এখন পরবর্তী প্রজন্মের দায়িত্ব নেওয়ার পালা। দুর্দান্ত কিছু খেলোয়াড় দলকে এগিয়ে নেবে এবং পতাকা উঁচু করে ধরবে।’
২০১০ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এ সংস্করণে অবসর নেওয়া কোহলি ক্যারিয়ারে ১২৫ ম্যাচ খেলে করেছেন ৪১৮৮ রান। রোহিত শর্মার পর এ সংস্করণে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক তিনি। ৪৮.৬৯ গড় ও ১৩৭.০৪ স্ট্রাইক রেটে ব্যাটিং করা কোহলি ভারতকে নেতৃত্ব দিয়েছেন ৫০টি ম্যাচে।
রোহিত শর্মা এবং বিরাট কোহলি উভয়ের অবসরের মাধ্যমে, ভারতীয় ক্রিকেটের একটি নতুন অধ্যায় শুরু হচ্ছে। এই দুই কিংবদন্তির অবদান ভারতীয় ক্রিকেট আজীবন মনে রাখবে।
উভয় খেলোয়াড়ই তাদের টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে সন্তুষ্টি এবং গর্ব প্রকাশ করেছেন।
ভারত যখন তার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ বিজয় উদযাপন করছে, তখন তারা তাদের দুই সর্বশ্রেষ্ঠ ক্রিকেটিং আইকনের বিদায়ও জানাচ্ছে।
খুলনা গেজেট/এইচ