ক্রিকেটকে আরও সূক্ষ্ম ও রোমাঞ্চকর প্রতিযোগিতায় পরিণত করার জন্য নিত্যনতুন প্রযুক্তির ব্যবহার দেখা যায়। তেমনই একটি নতুন পদ্ধতি দেখা যাবে মেয়েদের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে। আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) থেকে শুরু হতে যাওয়া এই প্রতিযোগিতায় আইসিসির প্রথম কোনো ইভেন্ট হিসেবে ‘স্মার্ট রিপ্লে’ পদ্ধতি দেখা যাবে। যার জন্য ম্যাচের ভেন্যুতে ন্যূনতম ২৮টি ক্যামেরা সক্রিয় থাকবে।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের মাটিতে আগামীকাল ৩ অক্টোবর থেকে শুরু হবে নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। যদিও এই টুর্নামেন্ট হওয়ার কথা ছিল বাংলাদেশে। পরে রাজনৈতিক পালাবদলের পর সৃষ্ট পরিস্থিতিতে সেটি মধ্যপ্রাচ্যের দেশটিতে সরিয়ে নেওয়া হয়। এবারের টুর্নামেন্টটি দিয়ে মেয়েদের ক্রিকেট নতুন যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছে। যেখানে ছেলেদের সমান অর্থ পুরস্কার রেখেছে আইসিসি। মেয়েদের গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের তুলনায় এবার মোট প্রাইজমানি তিন গুণেরও বেশি বাড়িয়ে ৭.৯৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বরাদ্দ করা হয়েছে।
মেয়েদের বিশ্বকাপে এবার প্রথমবার ব্যবহার করা হবে স্মার্ট রিপ্লে পদ্ধতি। এর আগে এই প্রযুক্তির ব্যবহার দেখা গিয়েছিল ইংল্যান্ডের ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ ‘দ্য হান্ড্রেড’ এবং ২০২৪ আইপিএল আসরে। এবার সেটি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও প্রথমবার প্রয়োগ করা হবে। এ নিয়ে এক বিবৃতিতে আইসিসি জানিয়েছে, ‘প্রতিটি ম্যাচ কভারে ন্যূনতম ২৮টি ক্যামেরা কাজ করবে এবং নানা আঙ্গিকে বিশ্লেষণ ও দৃশ্যায়নের মানও থাকবে উন্নত।’
‘প্রতিটি ম্যাচে ডিসিশন রিভিউ সিস্টেম (ডিআরএস) থাকবে, এর সঙ্গে হক-আই স্মার্ট রিপ্লে সিস্টেম টিভি আম্পায়ারদের বিভিন্ন এঙ্গেলের ফুটেজ ও বিশ্লেষণ সরবারাহ করবে। যা আরও যথার্থ ও স্বচ্ছ করে তুলবে তাদের সিদ্ধান্তকে’, আরও বলা হয় সেই বিবৃতিতে। গত আইপিএলে এই প্রযুক্তির ব্যবহারের পর বেশ আলোচনা শুরু হয়। যা দেখে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও অত্যাধুনিক এই পদ্ধতি আনার প্রয়োজনীয়তা বোধ করে আইসিসি। এ ছাড়া এবারের বিশ্বকাপে আম্পায়ারিং ও ম্যাচ অফিসিয়াল হিসেবে কেবল নারীদের রাখা হয়েছে।
কাজ করবে যেভাবে
স্মার্ট রিপ্লে পদ্ধতিতে টিভি আম্পায়াররা দুজন হক-আই অপারেটরের কাছ থেকে ফুটেজ পাবেন, যা তারা বিশ্লেষণ করবেন একই রুমে বসেই। হক-আই তাদের আটটি উচ্চগতির ক্যামেরা দিয়ে মাঠ থেকে এসব ফুটেজ সংগ্রহ করবে। এর আগে টিভি ব্রডকাস্ট পরিচালক থার্ড আম্পায়ার এবং হক-আই আম্পায়ারদের মাঝে সংযোগ স্থাপনকারী হিসেবে কাজ করতেন। এখন আর সেটির প্রয়োজন হবে না। আগের চেয়ে এখন টিভি আম্পায়াররা আরও বেশি দৃশ্য পাবেন, যা দেখতে পাবেন বিচ্ছিন্নভাবে বিন্যস্ত-স্ক্রিন ইমেজে।
এভাবে স্টাম্পিং আউটের কোনো আবেদন উঠলে, স্মার্ট রিপ্লে পদ্ধতি অনুসারে হক-আই অপারেটর থেকে বিন্যস্ত-স্ক্রিন ইমেজ দেখতে পারবেন টিভি আম্পায়ার। যদি বল ব্যাট অতিক্রম করার মাঝে কোনো ফাঁকা দেখা যায়, টিভি আম্পায়াররা আল্ট্রা-এজ (কট বিহাইন্ড হয়েছেন কি না তা জানতে) চাইবেন না। সেক্ষেত্রে সরাসরি স্টাম্পিংয়ের পার্শ্ব-রিপ্লে দেখবেন তারা। ওই সময় টিভি আম্পায়ার যদি ব্যাট-বলের মাঝে স্পষ্ট ফাঁকা দেখতে না পান তখন তারা আল্ট্রা-এজ প্রযুক্তি দেখতে চাইতে পারেন।
স্টাম্পিং আউটের ক্ষেত্রে টিভি আম্পায়ার তিনটি ভিন্ন ফ্রেমে পার্শ্ব ও সামনাসামনি রিপ্লে দেখতে পারেন। এক্ষেত্রে সামনাসামনি দেখানো ফুটেজ বেশি গুরুত্বপূর্ণ, যা স্টাম্প-বেল পড়েছে কি না তার যথার্থ ছবি দেখাবে। এর আগে স্টাম্প-ক্যামেরার মাধ্যমে পার্শ্ব-রিপ্লের মাধ্যমে এ ধরনের আউটের পরীক্ষা করা হতো। কিন্তু সেটির গতি তুলনামূলক কম (প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ৫০ ফ্রেম প্রদর্শন)। অন্যদিকে, হক-আই ক্যামেরা প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ৩০০ ফ্রেম দেখাতে পারে, যা অনেক দ্রুত আম্পায়ারকে সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করবে।
খুলনা গেজেট/এএজে