ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, ‘সার্চ কমিটি আমাদের আমন্ত্রণ জানিয়ে সবার কথাই মন দিয়ে শুনেছেন। আমাদের সবার একটা বিষয়েই জোর ছিল যে আগের কোনো সরকারের বিশেষ সুবিধাভোগীরা যেন নতুন নির্বাচন কমিশনে সুযোগ না পায়।
‘বিশেষ সুবিধা বলতে, যারা বিভিন্ন সরকারের মেয়াদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়েছেন বা সরাসরি সরকারের ঘনিষ্ঠ লোক বলে পরিচিত এমন কাউকে বোঝানো হয়েছে।’ বলেন আসিফ নজরুল
নির্বাচন কমিশন গঠনের লক্ষ্যে সার্চ কমিটির সদস্যরা বিশিষ্টজনদের সঙ্গে প্রথমদফায় বৈঠক শেষ করেছেন। শনিবার (১২ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১টার পর সুপ্রিম কোর্টের কনফারেন্স রুমে এ বৈঠক শুরু হয়ে চলে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত। বৈঠক শেষে বেরিয়ে ড. আসিফ নজরুল সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।
ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, যারা রিটায়ার্ড করার পর বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পক্ষে বা বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন সরাসরি, তারা যেন কোনভাবেই কমিটির সুপারিশের না আসে। যাদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট সম্পর্ক আছে তারা যেন সুপারিশে না আসে এ বিষয়টি বলেছি।
এছাড়া এই নির্বাচন কমিশনের যারা আসবে তাদের যেন সুষ্ঠু নির্বাচন করার একটি মন-মানসিকতা, সাহসিকতা ও ব্যক্তিত্ব থাকে। একই সঙ্গে আমরা বলেছি সব নাম যেন আগেই প্রকাশ করা হয়। কমিশন যদি ৩০ জনের নাম প্রস্তাব করে তার মধ্যে যদি দেখা যায়, সে কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষে বক্তব্য দেয় বা সরকারি চাকরিতে থাকা অবস্থায় টক শোতে অংশ নিয়েছে, একটা নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের পক্ষে-বিপক্ষে বলেছে। এরকম ব্যক্তিদের নাম যদি তালিকায় থাকে তাহলে এটা আগে প্রকাশ করলে জনগণ তাদের প্রতিক্রিয়া জানাতে পারবে। আমাদের সুপারিশ হলো তাদের যেন বাদ দেওয়া হয়।’
তিনি বলেন, আমাদের কাছে মনে হয়েছে সার্চ কমিটি সবার কথা মন দিয়ে শুনেছেন। কিন্তু কতটুকু রাখবে সেটা নাম প্রকাশের পরে আমরা বুঝতে পারবো। আমাদের এখান থেকে কেউ কোনো নাম প্রস্তাব করেনি। শুধু বলেছি কিসের ভিত্তিতে নেওয়া উচিত, কিসের ভিত্তিতে না নেওয়া উচিত। বৈঠকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে যে, নির্বাচন ব্যবস্থার একটি ক্রাইসিসের মধ্যে আছে। এই অনুসন্ধান কমিটির একটি বিশাল দায়িত্ব রয়েছে। এই অনাস্থাটাকে ফিরিয়ে আনা। সুষ্ঠু এবং অবাধ নির্বাচনের মাধ্যমে যেন সত্যিকারের জনপ্রতিনিধিত্ব পায় সরকার।
এক প্রশ্নের জবাবে আসিফ নজরুল বলেন, এটা আস্থা ও অনাস্থার ব্যাপার না। আপনারা যদি আগের অনুসন্ধান কমিটিগুলো দেখেন, আগের অনুসন্ধান কমিটি যে নির্বাচন কমিশন প্রডিউস করেছিল, তারা কি করেছে আপনারা তো দেখেছেন। এখানে শতভাগ আস্থা রাখার কোনো জায়গা নেই। এছাড়া এ অনুসন্ধান কমিটির গঠন নিয়েও সমাজে কিছু ভিন্ন মত ছিল। আমাদের কথা হল, বৃক্ষ কী তার ফলেই পরিচয়। আলটিমেটলি কি কমিশন গঠিত হয় কোন ১০ জনের নাম তারা প্রস্তাব করেন সেটাই এখন আমাদের দেখার বিষয়। এটার ভিত্তিতেই আমরা বলতে পারব আমাদের আস্থার জায়গা কতটুকু প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
বৈঠকে সভাপতিত্ব করেছেন সার্চ কমিটির প্রধান আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান। সার্চ কমিটির সদস্যদের মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামান, মহা-হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক মুসলিম চৌধুরী, সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান সোহরাব হোসাইন, সাবেক নির্বাচন কমিশনার মুহাম্মদ ছহুল হোসাইন এবং কথাসাহিত্যিক অধ্যাপক আনোয়ারা সৈয়দ হক প্রথম বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
খুলনা গেজেট/এনএম