খুলনা, বাংলাদেশ | ৭ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২২ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ৪ দিনের সরকারি সফরে ঢাকায় পৌঁছেছেন বাইডেনের বিশেষ প্রতিনিধি দল
  পাকিস্তানে যাত্রীবাহী গাড়িতে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত ৪৫

বিভিন্ন মামলায় আটকে আছে ব্যাংকের ১ লাখ ৭৮ হাজার ৭০১ কোটি টাকা

গেজেট ডেস্ক

প্রভাবশালীদের সুপারিশ আর অনিয়ম-অব্যবস্থাপনাসহ বিভিন্ন উপায়ে ঋণ নিয়ে ফেরত দিচ্ছেন না বহু গ্রাহক। ফলে দিন দিন বাড়ছে মন্দ ঋণের বোঝা আর সমস্যায় পড়ছে ব্যাংকগুলো। আইনি বাধ্যবাধকতার কারণে খেলাপি ঋণ আদায়ে মামলা করলেও নিষ্পত্তি হচ্ছে খুব কম। আবার যেগুলো নিষ্পত্তি হচ্ছে সেগুলোর পাওনা অর্থও ঠিকঠাক আদায় হচ্ছে না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আদালতে এই মুহূর্তে ব্যাংক খাতের ৭২ হাজার ৭১২টি মামলা নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে। বিভিন্ন ব্যাংকের ১ লাখ ৭৮ হাজার ৭০১ কোটি টাকা আটকে আছে এসব মামলায়।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক ছয় মাস পরপর এসব মামলার হালনাগাদ তথ্য সংবলিত প্রতিবেদন তৈরি করে। সবশেষ প্রতিবেদনে গত জুন মাস পর্যন্ত আপডেট তথ্য রয়েছে।

ছয় মাসের ব্যবধানে বিচারাধীন মামলা বেড়েছে ৩৭১টি। এর বিপরীতে নতুন করে ১১ হাজার ৩৮৩ কোটি টাকা আটকে পড়েছে
প্রতিবেদনে অর্থঋণ আদালত ও দেউলিয়া মামলার তথ্য দেওয়া আছে। সাধারণত যেসব খেলাপি ঋণ আদায়ের সম্ভাবনা কম থাকে, সেগুলো আদায়ের জন্য আদালতে মামলা করে ব্যাংকগুলো।

২০২৩ সালের জুন শেষে অর্থঋণ আদালতে ৭২ হাজার ৫৪০টি বিচারাধীন মামলার বিপরীতে আটকে আছে এক লাখ ৭৮ হাজার ২৭০ কোটি টাকা। ছয় মাস আগে ডিসেম্বর শেষে অর্থঋণ আদালতে ৭২ হাজার ১৮৯টি বিচারাধীন মামলার বিপরীতে আটকে ছিল এক লাখ ৬৬ হাজার ৮৮৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ ছয় মাসের ব্যবধানে বিচারাধীন মামলা বেড়েছে ৩৭১টি। এর বিপরীতে নতুন করে ১১ হাজার ৩৮৩ কোটি টাকা আটকে পড়েছে।

এক বছর আগে (জুন-২০২২) অর্থঋণ আদালতে ৬৯ হাজার ৩৬৯টি মামলার বিপরীতে আটকা ছিল এক লাখ ৫৩ হাজার ৩৩১ কোটি টাকা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশ আবাসিক মিশনের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ব্যাংকগুলো খেলাপির অর্থ আদায় করতে পারছে না বলে আদালতে যাচ্ছে। কিন্তু, সেখানে দিনের পর দিন মামলাগুলো ঝুলে আছে। নিষ্পত্তি হচ্ছে না, ফলে সংখ্যা বাড়ছে; এটা বাড়তেই থাকবে। ব্যাংকাররা যেটা করে, দীর্ঘদিন মামলা ঝুলে থাকার পর খেলাপি ঋণগুলো রাইট আপ করে দেয় অর্থাৎ আর্থিক প্রতিবেদন ভালো দেখাতে তা মুছে ফেলে। এতে মূলধন ঘাটতি সৃষ্টি হচ্ছে, ব্যাংকের ভিত্তি দুর্বল হয়ে যাচ্ছে।

এসব সমস্যা থেকে উত্তরণের উপায় কী হতে পারে— জানতে চাইলে অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, যেখানে মামলা হচ্ছে সেখানে নিষ্পত্তির সক্ষমতা কম। যেটুকু নিষ্পত্তি করতে পারে আইনের ফাঁক-ফোকরের কারণে দীর্ঘসূত্রিতায় পড়ে যায়। এছাড়া এখানে অনেক স্বার্থও জড়িত থাকে। কারণ, অনেক প্রভাবশালী এখান থেকে সুবিধা নেন। আবার যারা আইনজীবী থাকেন তারাও অনেক ক্ষেত্রে চান না খুব দ্রুত মামলাগুলো নিষ্পত্তি হোক। এমন সব বহুমুখী সমস্যার কারণে নিষ্পত্তি বাড়ানো যাচ্ছে না।

তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঋণ খেলাপিদের একের পর এক সুবিধা দিয়ে যাচ্ছে। ফলে প্রভাবশালী গ্রাহক ঋণের অর্থ ফেরত দিচ্ছে না সুবিধার আশায়। যখন সুবিধা নেওয়ার আর সুযোগ থাকে না তখন আদালতে গিয়ে একটা রিট করে দিচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে সবকিছু স্থগিত হয়ে যাচ্ছে। যদি খেলাপি গ্রাহকদের প্রথমবার সুবিধা দেওয়া না হতো তাহলে এ অবস্থায় যেত না। শঙ্কার বিষয়, এখনো কেন্দ্রীয় ব্যাংক মন্দ গ্রাহকদের নানা সুবিধা দিয়ে যাচ্ছে!

এ অর্থনীতিবিদ বলেন, আদালত বা বিচারক বাড়িয়ে বা কর্মীদের বিদেশ পাঠিয়ে প্রশিক্ষণ-প্রযুক্তি সহায়তা দিয়ে কোনো লাভ হবে না। যতক্ষণ না পর্যন্ত প্রভাবশালীর প্রভাব ঠেকাতে না পারবে ততদিন এ সমস্যার সমাধান হবে না। প্রভাবশালীর প্রভাব ঠেকাতে হলে রাজনৈতিক সদিচ্ছা প্রয়োজন। এটা সরকারের পক্ষ থেকে আসতে হবে। আর এসব উদ্যোগ সরকার কীভাবে নেবে, এটা সরকারই ভালে বলতে পারে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, স্বাধীনতার পর থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত অর্থঋণ আদালতে বিভিন্ন ব্যাংকের করা মামলার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে দুই লাখ ২৮ হাজার ৪২৮টি। এসব মামলার বিপরীতে দেশের ঋণ খেলাপিদের কাছে ব্যাংকগুলোর পাওনা টাকার পরিমাণ দুই লাখ ৭০ হাজার ৪৮৯ কোটি।

ছয় মাস আগে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে মামলার সংখ্যা ছিল দুই লাখ ২২ হাজার ৩৪৮টি। এর বিপরীতে পাওনা টাকার পরিমাণ ছিল দুই লাখ ৪৯ হাজার ১৮৪ কোটি। সেসময় মোট আদায়ের পরিমাণ ছিল ২১ হাজার ৮৩ কোটি টাকা। সেই হিসাবে ছয় মাসের ব্যবধানে নতুন করে মামলা বেড়েছে ছয় হাজার ৮০টি, দাবি করা টাকার পরিমাণ বেড়েছে ২১ হাজার ৩০৫ কোটি এবং তার বিপরীতে আদায় বেড়েছে মাত্র দুই হাজার ২৪৬ কোটি টাকা।

চলতি বছরের জুন পর্যন্ত রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর অর্থঋণ আদালত ও দেউলিয়া মামলার সংখ্যা ১৪ হাজার ৫৯২টি; যেখানে আটকা আছে ৭৬ হাজার ৩২০ কোটি টাকা। বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোর মামলা রয়েছে ৪৪ হাজার ৬৫৫টি, এর বিপরীতে আটকে রয়েছে ৯৬ হাজার কোটি টাকা। এছাড়া বিদেশি ব্যাংকে ৮ হাজার ৫৩১টি মামলায় আটকা ৩ হাজার ৯২০ কোটি এবং বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোতে ৪ হাজার ৯৩৪টি মামলায় আটকা আছে ২ হাজার ৪৫১ কোটি টাকা।

অর্থঋণ আদালতের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, মামলার দীর্ঘসূত্রিতার অন্যতম কারণ অনেক ব্যাংক মামলা করার পর নিয়মিত খোঁজ খবর রাখে না। বাদী ও আসামি উপস্থিত না থাকায় মামলা বছরের পর বছর ঘুরতে থাকে। পরিবর্তন হতেই থাকে শুনানির তারিখ। ২০ বছর ধরে মামলার খবর না রাখারও নজির আছে। এমন কাজ করেছে একাধিক বেসরকারি ও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক। এসব ঘটনার পেছনে ব্যাংক ও গ্রাহকের যোগসাজশ রয়েছে বলে জানান তিনি।

খুলনা গেজেট/কেডি




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!