মধ্যরাত পর্যন্ত নাটকীয়তা এবং পর্দার আড়ালে রাজনৈতিক টানাপোড়েনে ‘জুলাই অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র’ থেকে পিছিয়ে এসেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। অন্তর্বর্তী সরকারই জাতীয় ঐকমত্যে ঘোষণাপত্র তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ঘোষণাপত্র দিতে না পারলেও আজ মঙ্গলবার বিকেলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ‘মার্চ ফর ইউনিটি’ নামে জমায়েত হবে। দেওয়া হবে ঘোষণাপত্রের প্রস্তাবনা।
সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সূত্রে জানা গেছে, আগামী ১৫ জানুয়ারি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতীয় ঐকমত্যে জুলাই অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র পাঠ করবেন। রাজনৈতিক দল এবং ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের শক্তিগুলোকে নিয়ে এ ঘোষণা দেওয়া হবে।
সোমবার রাত দেড়টায় রাজধানী বাংলামোটরে রূপায়ন টাওয়ারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের সদস্যসচিব আরিফ সোহেল বলেন, “জুলাই-আগস্টে সংগঠিত গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতার স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে আবির্ভূত জনআকাঙ্খা তথা ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ ও নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত কায়েমের প্রতিশ্রুতির ভিত্তিতে নতুন বাংলাদেশ এক ঐতিহাসিক পটভূমিতে আবির্ভূত হয়েছে। হাজারও শহীদ ও আহত যোদ্ধাদের আত্মত্যাগের স্বীকৃতি ও জনআকাঙ্খার দলিলস্বরূপ ‘জুলাইয়ের ঘোষণাপত্র’ অত্যাবশ্যক ছিল। এই ঘোষণাপত্র প্রণয়নের ঐতিহাসিক দায় জুলাই গণঅভ্যুত্থানের নেতৃত্বদানকারী সংগঠন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ওপর বর্তায়। নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও আমরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, বাংলাদেশের ছাত্র-জনতার পক্ষে এই ঐতিহাসিক ঘোষণাপত্রের প্রণয়ন ও ঘোষণার দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলাম।’
আরিফ সোহেল বলেন, ‘আমাদের উদ্যোগের ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের আপামর ছাত্র-জনতার মধ্যে স্বতঃস্ফূর্ত ও ইতিবাচক সাড়া সঞ্চারিত হয়েছে। এমন অবস্থায় ছাত্র-জনতার আহ্বানে রাষ্ট্রীয় পর্যায় থেকে জাতীয় ঐক্যমতের ভিত্তিতে জুলাই ঘোষণাপত্র প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ছাত্র-জনতা এই সময়পোযোগী উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় আজ (মঙ্গলবার) বিকেল ৩টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ‘মার্চ ফর ইউনিটি’ কর্মসূচি ঘোষণা করা হলো। বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণের প্রতি আমাদের উদাত্ত আহ্বান- আপনারা যে উদ্দীপনায় সংগঠিত হয়েছেন, সেই ধারাবাহিকতা বজায় রেখে এ কর্মসূচিতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করবেন।’
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্যসচিব আখতার হোসেন, মুখপাত্র সামান্তা শারমিন, মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহবায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ, মুখ্য সংগঠক আব্দুল হান্নান মাসউদ, নির্বাহী কমিটির সদস্য রিফাত রশীদ, দপ্তর সেল সম্পাদক জাহিদ আহসান প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে সারজিস আলম বলেন, ‘জুলাই ঘোষণাপত্রটি ঘোষণার কথা ছিল। ইতোমধ্যে আমরা দেখেছি, সরকার তার জায়গা থেকে পুরো বাংলাদেশকে ঐক্যবদ্ধের জায়গায় এনেছে। রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে জুলাই ঘোষণাপত্রটি আসা উচিত। প্লাটফর্ম থেকে রাষ্ট্র যখন এই দায়িত্ব নিয়ে নেয়, আমরা এটিকে সাধুবাদ জানাই। রাষ্ট্র ও সরকার ঐক্যের জায়গায় এনে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হয়, জাতীয় ঐক্য টেকসই হয়।’
খুলনা গেজেট/এইচ