প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নিয়ে অনেকেই নানা মনগড়া মন্তব্য করছেন। তিনি বলেন, ‘সাধারণত তিন মাসের আমদানি খরচ মেটানোর মতো রিজার্ভ থাকলেই চলে। বর্তমানে আমাদের পাঁচ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর মতো বৈদেশিক মুদ্রা মজুদ আছে।’
মহান বিজয় দিবসের প্রাক্কালে প্রধানমন্ত্রী আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় গণভবন থেকে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে এই কথা বলেছেন। বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতারসহ বিভিন্ন বেসরকারি টিভি চ্যানেল ভাষণটি সরাসরি সম্প্রচার করেছে।
৫১তম বিজয় দিবস সামনে রেখে জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বের বাজারে জ্বালানি ও পণ্যমূল্য কমলে দেশেও সমন্বয়ের অঙ্গীকার করেছেন। সেই সঙ্গে এটাও জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যমূল্য কমে আসছে।
আগে থেকে ধারণ করা ভাষণটি বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় প্রচার হয় দেশের সব সরকারি-বেসরকারি টেলিভিশন ও রেডিও চ্যানেলে।
জনগণকে বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা জানিয়ে শুরু করা এই ভাষণে গুরুত্ব পায় ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ব পরিস্থিতি। উঠে আসে বিশ্ববাজারে পণ্যমূল বৃদ্ধি, দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, রিজার্ভ, ব্যাংক নিয়ে প্রচারে টাকা তুলে নেয়া ইত্যাদি পরিস্থিতি।
সেই সঙ্গে তার সরকারের আমলের উন্নয়নের বর্ণনা, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আন্দোলনে সহিংসতা, সেই সরকারের আমলের পরিস্থিতিও তুলে ধরেন সরকারপ্রধান। জনগণকে প্রশ্ন রাখেন তারা উন্নত মর্যাদাশীল জীবনের ধারাবাহিকতা চায় নাকি দুর্বৃত্তায়নের দুর্বিসহ জীবনে ফিরতে চায়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বৈশ্বিক কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি পেয়েছিল। তা এখন অনেকটা স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। মূল্যস্ফীতিও হ্রাস পাচ্ছে। আমি আপনাদের আশ্বস্ত করতে চাই, বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলসহ কোনো জিনিসের দাম কমার সঙ্গে সঙ্গে আমরা তা সমন্বয় করব।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার জনগণের সরকার। মানুষের কল্যাণের জন্যই কাজ করাই আমাদের মূল লক্ষ্য। মানুষের ভোগান্তি হোক, কষ্ট হোক- তা আমরা কখনোই চাই না।’
কৃষি উৎপাদন বাড়ানোর তাগিদও দেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘মাটিতে বীজ ফেললেই যেখানে গাছ জন্মে, ফল হয়, সেখানে বাইরে থেকে কৃষিপণ্য আমদানি করতে হবে কেন? আমি আপনাদের অনুরোধ করছি, এক ইঞ্চি জমিও পতিত রাখবেন না।’
পণ্যমূল্য কেন বেড়েছে
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ এবং পশ্চিমাদের অর্থনৈতিক অবরোধ এবং পাল্টা অবরোধের কারণে আমাদের মতো উন্নয়নশীল ও আমদানিনির্ভর দেশগুলো সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেল, ভোজ্য তেল, গম, চিনি, ভুট্টা, ডাল, রাসায়নিক সারসহ প্রায় সকল ভোগ্যপণ্যের দাম অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।’
বিশ্ববাজারের পরিস্থিতির পাশাপাশি পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধিও পণ্যমূল্য বৃদ্ধির একটি কারণ বলে জানান তিনি। বলেন, ‘সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। পরিবহন খরচ বহু গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। যে জাহাজ ভাড়া ছিল ৮০০ ডলার, তার ভাড়া এখন ৩ হাজার ৮০০ ডলার; যে গম টনপ্রতি ২০০ ডলারে পাওয়া যেত, তা ৬০০ ডলারে কিনতে হচ্ছে। আবার নিজস্ব চাহিদা মেটানোর জন্য কোনো কোনো দেশ বিনা নোটিশে পণ্য রপ্তানি বন্ধ করে দিচ্ছে।’
সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করে পৃথিবীর যেখানেই চাহিদার পণ্য পাওয়া যাচ্ছে এবং যত দামই হোক, সেখান থেকেই সরকার তা সংগ্রহ করছে বলেও জানান শেখ হাসিনা।
পণ্যমূল বাড়ার কারণে গরিবের কষ্ট কমাতে সরকারের কী পদক্ষেপ সেটিও উঠে আসে ভাষণে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা এক কোটি পরিবারকে টিসিবির ফেয়ার প্রাইজ কার্ড দিয়েছি। এই কার্ডের মাধ্যমে পরিবারগুলো ৩০ টাকা কেজি দরে চাল ও সাশ্রয়ীমূল্যে ভোজ্য তেল, ডাল ও চিনি সংগ্রহ করতে পারছেন।
‘৫০ লাখ পরিবার ১৫ টাকা কেজি দরে মাসে ৩০ কেজি চাল কিনতে পারছে। অসহায় মানুষদের ভিজিডি ও ভিজিএফ-এর মাধ্যমে ৩০ কেজি করে চাল প্রতি মাসে বিনা মূল্যে দেওয়া হচ্ছে।’
‘রিজার্ভ প্রয়োজনের চেয়ে বেশি’
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নিয়ে অনেকেই নানা মনগড়া মন্তব্য করছেন বলেও অভিযোগ করেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘তিন মাসের আমদানি খরচ মেটানোর মতো রিজার্ভ থাকলেই চলে। বর্তমানে আমাদের পাঁচ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর মতো বৈদেশিক মুদ্রা মজুত আছে।’
বিশ্ববাজারে দাম কমার সঙ্গে সঙ্গে দেশে সমন্বয়
রিজার্ভ কেন বেড়েছিল এবং পরে তা কমে, তারও ব্যাখ্যা দেন সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, ‘করোনাভাইরাসের মহামারির সময় সব ধরনের ভারী যন্ত্রপাতি আমদানি, বিদেশ ভ্রমণ এবং অন্যান্য পণ্য আমদানি অনেকটা বন্ধ ছিল। সে সময় আমাদের রিজার্ভ বৃদ্ধি পেয়ে ৪৮ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়।
‘এই বিপুল পরিমাণ অর্থ অলস অবস্থায় না রেখে সেখান থেকে কিছু পরিমাণ অর্থ দিয়ে আমরা একটা বিশেষ তহবিল গঠন করেছি। সেই তহবিলের অর্থ দ্বারা কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
‘সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে এই ঋণ দেয়া হচ্ছে ২ শতাংশ হার সুদে। ঘরের টাকা সুদসহ ঘরেই ফেরত আসছে। এ অর্থ যদি বিদেশি ব্যাংক থেকে ঋণ হিসেবে নেয়া হতো তাহলে ৪/৫ শতাংশ হারে সুদসহ ফেরত দিতে হতো। আর তা পরিশোধ করতে হতো রিজার্ভ থেকেই।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ হ্রাস পাওয়ার আরেকটি কারণ হচ্ছে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে আমরা বেশি দামে জ্বালানি তেল, ভোজ্য তেল, গম, ডাল, ভুট্টাসহ অন্যান্য পণ্য ক্রয় করে স্বল্পমূল্যে সাধারণ মানুষের কাছে বিক্রি করছি।’
‘ব্যাংকের টাকা ঘরে এনে বিপদ বাড়াবেন না’
ব্যাংকে টাকা নেই বলে গুজব ছড়িয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করা হচ্ছে বলেও মনে করেন প্রধানমন্ত্রী। অযথা গুজবে কান না দেয়ার পরামর্শও দেন তিনি। বলেন, ‘বাংকে টাকার কোনো ঘাটতি নেই। উপার্জিত টাকা ঘরে রেখে নিজের বিপদ ডেকে আনবেন না।’
দেশে বিনিয়োগ, রেমিট্যান্সপ্রবাহ এবং আমদানি-রপ্তানি পরিস্থিতি সবকিছু স্বাভাবিক রয়েছে বলেও আশ্বস্ত করেন তিনি।
করোনা মহামারির পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ সারা বিশ্বে ‘ভয়ংকর অর্থনৈতিক যুদ্ধ’ শুরু হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘অর্থনৈতিক যুদ্ধের প্রভাব কোনো একক দেশের গণ্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না, ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বব্যাপী। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ-পরবর্তী অর্থনৈতিক অবরোধ-পাল্টা অবরোধ বিশ্ব অর্থনীতিকে বিপর্যস্ত করে তুলেছে।’
সংকটে ভয় না পাওয়ার পরামর্শও দেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘জনগণের সহায়তায় আমরা করোনাভাইরাস মহামারি সফলভাবে মোকাবিলা করেছি। বর্তমান বৈশ্বিক মন্দাও আমরা মোকাবিলা করব, ইনশা আল্লাহ। এ জন্য আপনাদের সহযোগিতা চাই।’
উন্নয়নের নতুন উচ্চতায় দেশ
২০০৯ সালের শুরুতে আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর দেশ আর্থসামাজিক উন্নয়নের এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে বলেও মনে করে প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আজকে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের কাতারে শামিল হতে পেরেছে। দেশ আজ খাদ্যশস্য-উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ।
‘চলতি বছর ৪ কোটি ৪ লাখ মেট্রিক টন চালসহ ৪ কোটি ৭২ লাখ মেট্রিক টন দানাদার শস্য উৎপাদিত হয়েছে। মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, সবজি, ফলসহ বিভিন্ন কৃষিপণ্য উৎপাদন ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।
‘দারিদ্র্যের হার ৪০ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশে নেমে এসেছে। মাথাপিছু আয় ৫৪৩ ডলার থেকে ২,৮২৪ ডলারে উন্নীত হয়েছে। সাক্ষরতার হার ৪৫ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৭৫.২ শতাংশ।
‘মাতৃমৃত্যু এবং শিশুমৃত্যুর হার হ্রাস পেয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার ধারাবাহিকভাবে সরকার পরিচালনায় আছে বলেই এসব অর্জন সম্ভব হয়েছে।’
গত জুনে পদ্মা সেতু এবং অক্টোবরে পায়রা সেতু, নভেম্বরে ২৫টি জেলায় একই দিনে ১০০টি সেতু উদ্বোধন, অনেকগুলো মহাসড়ক চার বা তার চেয়ে বেশি লেনে উন্নীত করার কথাও উঠে আসে ভাষণে।
চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল, ঢাকায় মেট্রোরেল এবং বিমানবন্দর-কুতুবখালী এক্সপ্রেসওয়ের একাংশ শিগগির খুলে দেয়া হবে বলেও জানান তিনি।
বলেন, ‘আমরা পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করছি এবং স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ উৎক্ষেপণ করেছি।’
২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত-স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তোলার অঙ্গীকারও করেন সরকারপ্রধান।
১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে বয়স্কসহ প্রান্তিক মানুষের জন্য বিভিন্ন ভাতা চালু, দ্বিতীয়বার এসে ভাতাভোগীর সংখ্যা এবং টাকার বাড়ানো, অন্য প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষাভাতা ও অন্যান্য সহায়তা দেয়ার কথাও তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। জানান, বিভিন্ন কর্মসূচিতে উপকৃত হচ্ছেন প্রায় সাড়ে চার কোটি মানুষ।
ভাষণে বিশেষভাবে উঠে এসে ভূমিহীন দেরকে বিনা মূল্যে ঘর প্রদানের কথা। বলেন, ‘মুজিববর্ষে আমরা ঘোষণা করেছি কোনো মানুষই আশ্রয়হীন থাকবে না।’ এ পর্যন্ত ৩৫ লাখ মানুষকে বিনা মূল্যে ঘর দিয়ে পুনর্বাসন করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
২ কোটি ৫৩ লাখ ছাত্র-ছাত্রীকে বৃত্তি ও উপবৃত্তি, মাধ্যমিক পর্যন্ত প্রতিবছর বিনা মূল্যে বই দেয়া, শতভাগ বিদ্যুতায়ন, সুপেয় পানি, স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা, গ্রামে গ্রামে ইন্টারনেট সংযোগ পৌঁছে দেয়ার কথাও বলেন শেখ হাসিনা। করোনা মহামারির সময় সময়োচিত পদক্ষেপে মানুষের জীবনের সঙ্গে অর্থনীতিকেও সচল রাখার সাফল্যও দাবি করেন প্রধানমন্ত্রী। জানান, আক্রান্তদের চিকিৎসায় বিভিন্ন হাসপাতালে বাড়ানো হয় ১৫ হাজার শয্যাসহ চিকিৎসা সুবিধা।
বিনা মূল্যে প্রায় ৩৪ কোটি টিকা দেয়া, এক যুগে ২২ হাজার ডাক্তার এবং ৪০ হাজার নার্স নিয়োগ, শিল্প উৎপাদন অব্যাহত রাখতে ২৮টি প্যাকেজের আওতায় ১ লাখ ৮৭ হাজার ৬৭৯ কোটি টাকার প্রণোদনা দিয়ে শ্রমিকদের বেতনভাতা নিশ্চিত করা, ৫০ লাখ প্রান্তিক মানুষকে দুই দফায় আড়াই হাজার টাকা করে নগদ সহায়তা বিতরণ, গরিবদের ঘরে বিনা মূল্যে খাদ্য পৌঁছে দেয়ার পদক্ষেপও উঠে আসে এই ভাষণে।
‘সাধারণ জনগণ কেন তাদের ভোট দিতে যাবেন?’
প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির কথাও উঠে আসে। তিনি বলেন, ‘বিএনপির শীর্ষ নেত্রী এতিমখানার অর্থ আত্মসাৎ মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত। আরেক শীর্ষ পলাতক নেতা অর্থ পাচার, দশ-ট্রাক অস্ত্র চোরাচালান ও একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় সাজাপ্রাপ্ত। সাধারণ জনগণ কেন তাদের ভোট দিতে যাবেন?
দেশের মানুষের ওপর আস্থা হারিয়ে বিএনপি-জামায়াত এখন বিদেশিদের কাছে দেশের বদনাম করার জন্য কিছু ভাড়াটিয়া লোক নিয়োগ করেছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। বলেন, ‘পাচারকৃত অর্থ ব্যবহার করছে আর দেশের বদনাম করে বেড়াচ্ছে।’
বিএনপি ২০০৬ সালে ১ কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটারসহ তালিকা করে নির্বাচনের চেষ্টা করে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বিএনপির দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও দুঃশাসনের কারণে দেশে ২০০৭ সালে জরুরি অবস্থা জারি হয় এবং নির্বাচন বাতিল হয়ে যায়।’
২০০৮ সালের নির্বাচনে তিন শ আসনের মধ্যে বিএনপির ৩০টি আসন পাওয়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘একইভাবে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনেও জনগণ বিএনপি-জামায়াত জোটকে ভোট দেয়নি। জনগণের দ্বারা প্রত্যাখাত হয়ে তারা এখন অগণতান্ত্রিক পথে ক্ষমতায় যাওয়ার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।’
বঙ্গবন্ধুর খুনিদের সপরিবার হত্যা, জিয়াউর রহমানের ক্ষমতায় এসে স্বাধীনতাবিরোধীদের রাজনীতিতে ফেরার সুযোগ দেয়ার প্রসঙ্গও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘পুনর্বাসিত হয়ে এরা আবার হত্যা ও সন্ত্রাসের রাজনীতি শুরু করে।’
বিএনপির মদতে দেশে জঙ্গি সংগঠন গড়ে উঠে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘২০০৪ সালের ২১ আগস্ট শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশে গ্রেনেড হামলা করে আমাকে এবং আমার দলের শীর্ষ নেতাদের হত্যা করতে চেয়েছিল।’
২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত জোটের আন্দোলনের কথু তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তাদের পেট্রোল বোমা হামলায় ৫০০ জন নিরীহ মানুষ নিহত হয় এবং ৩ হাজার ১৮০ জন দগ্ধ হয়। দগ্ধ শরীরের যন্ত্রণা আজও অনেকেই বয়ে বেড়াচ্ছেন।’
‘উন্নত জীবনের ধারাবাহিকতা না দুর্বিসহ জীবন?’
জনগণকে এই দুটির মধ্যে একটি বেছে নিতে হবে বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘২০০৯ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত আছে। জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত রয়েছে। সে কারণেই আজ বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় থাকলে কোনোদিনই বাংলাদেশ এত উন্নতি করতে পারত না। উন্নয়নশীল দেশ হতে পারত না।
‘এখন দেশবাসী আপনাদেরই বেছে নিতে হবে আপনারা কী চান – উন্নত মর্যাদাশীল জীবনের ধারাবাহিকতা না বিএনপি-জামায়াত জোটের দুর্বৃত্তায়নের দুর্বিসহ জীবন?’