দু’জন ছিলেন একসময় বেস্টফ্রেন্ড। ছিলেন রুমমেট। বাংলাদেশ ক্রিকেটে সাকিব আল হাসান ও তামিম ইকবালের এই বন্ধুত্বের কথা সবারই জানা। একই সঙ্গে সবাই এটাও এখন জানেন, বন্ধুত্বে চিড় ধরেছে । দু’জনের কোথাও মুখোমুখি হওয়া মানেই এখন তাই বাড়তি উত্তেজনা। বিপিএলের দ্বিতীয় দিনে আজ লড়াইয়ে নামছেন বাংলাদেশের ইতিহাসের আলোচিত এই দুই ক্রিকেটার। দিনের প্রথম খেলায় তামিমের ফরচুন বরিশালের বিপক্ষে মাঠে নামবে সাকিবের রংপুর রাইডার্স। গত দুই আসরে বরিশালের অধিনায়কত্ব করেন সাকিব। এবার দল বদলে তিনি খেলবেন রংপুরের হয়ে। সবারই ধারণা ছিল রংপুরেও অধিনায়কত্ব করবেন সাকিব।
ফ্র্যাঞ্চাইজি কর্তৃপক্ষ চাইলেও চাপ কমাতে অধিনায়কত্ব করতে রাজি হননি তিনি। তামিমও অধিনায়কত্বে আগ্রহী ছিলেন না। তবে শেষ পর্যন্ত ফ্র্যাঞ্চাইজির অনুরোধে অধিনায়কত্ব করছেন তিনি। ফলে ম্যাচে দেখা হলেও টসে দেখা হচ্ছে না তাদের। গত জুলাইয়ে আকস্মিক অবসর নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেন তামিম ইকবাল। এরপর নিউজিল্যান্ড সিরিজে খেললেও ফিটনেস ইস্যুতে বিশ্বকাপ দলে জায়গা পাননি তিনি। এরপর বিশ্বকাপে যাওয়ার আগে এক সাক্ষাৎকারে তামিমকে নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য করেন সাকিব। পাল্টা ভিডিওতে তামিম দাবি করেন তার ফিটনেসে সমস্যা নেই। তাদের দ্বন্দ্বটা সামনে আসে সবার। সাকিবের সঙ্গে বরিশালের সম্পর্কেরও শেষদিকে অবনতি হয়।
কোয়ালিফায়ারে হেরে বাদ পড়ার পর সাকিবকে দোষারোপ করে বিতর্কিত পোস্ট দেওয়া হয় দলটির ফেসবুক পেজ থেকে। পরে যদিও ক্ষমা চাওয়া হয় তবে রেশ ঠিকই থেকে যায়। ফলে সাকিবের জন্য তামিম ছাড়াও বরিশালের বিপক্ষে ম্যাচও আলাদা উত্তাপ ছড়াতে পারে। সাকিব এবং তামিম দুজনেরই বড় ফ্যানবেজ রয়েছে। ফলে আজ গ্যালারিতে দেশের ক্রিকেটের দুই সুপারস্টারের মুখোমুখি লড়াই বাড়তি রোমাঞ্চ তৈরি করবে। গত আসরে সাকিব ছিলেন বিধ্বংসী ফর্মে। ১৩ ম্যাচে ৩৭৫ রান করেন ১৭৪.৪১ স্ট্রাইক রেটে। সর্বশেষ বিপিএলে ৩০০-এর বেশি রান করা আর কেউই সাকিবের চেয়ে বেশি স্ট্রাইক রেটে ব্যাটিং করতে পারেননি। এর সঙ্গে বল হাতে শিকার করেন ১০ উইকেট। তামিম অবশ্য রান করলেও ধারাবাহিক ছিলেন না। ১০ ম্যাচে ৩৩.৩৫ গড় আর ১২২ স্ট্রাইক রেটে তার ব্যাট থেকে আসে ৩০২ রান। এবার আসর শুরুর আগে দুজনই আছেন অস্বস্তিতে।
সাকিবের সমস্যা চোখের আর তামিম দীর্ঘ বিরতির পর নামবেন মাঠে। দল হিসেবে রংপুরের ড্রেসিংরুম বরাবরই তারকায় ঠাসা থাকে। এবারও ব্যতিক্রম নয়। শ্রীলঙ্কান ফাস্ট বোলার মাতিশা পাতিরানা, পাকিস্তানের এহসানউল্লাহ, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ওপেনার ব্রেন্ডন কিং খেলবেন রংপুরের হয়ে। এছাড়া গত বিশ্বকাপে দুর্দান্ত খেলা আফগানিস্তানের অলরাউন্ডার আজমতউল্লাহ ওমরজাইকেও ধরে রেখেছে রংপুর। দলটির বিদেশি ক্রিকেটারদের সবাই আছেন দারুণ ফর্মে। যদিও এদের মধ্যে বেশিরভাগকেই আজ পাচ্ছে না রংপুর। তবে ইতিমধ্যে আফগান অলরাউন্ডার মোহাম্মদ নবী যোগ দিয়েছেন দলের সঙ্গে। দেশিদের মধ্যে রনি তালুকদার গত বিপিএলে ছিলেন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ (৪২৫) রান সংগ্রাহক। এবার সাকিব যোগ দেওয়াতে দলটি হয়ে উঠেছে আরও শক্তিশালী। অন্যদিকে তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহীম, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদদের নিয়ে বরিশাল দল অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ।
মেহেদী হাসান মিরাজ, সৌম্য সরকার, তাইজুল ইসলাম, খালেদ আহমেদ, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন, কামরুল ইসলামের মতো চেনা মুখ থাকবে দলটির ড্রেসিংরুমে। বিদেশিদের মধ্যে শোয়েব মালিক, পল স্টার্লিংরা বরিশালের ব্যাটিং শক্তি বাড়াবেন। তবে রংপুরের মতো বরিশালও শুরুর দিকে সব বিদেশিদের পাবে না। শেষের দিকে বরিশাল পাবে দক্ষিণ আফ্রিকার তারকা ব্যাটসম্যান ডেভিড মিলারকে। আর ১৭ই ফেব্রুয়ারি শুরু হতে যাওয়া পাকিস্তান সুপার লীগে (পিএসএল) যোগ দেবেন মালিক-জামানরা। লীগ পর্বের শেষের দিকে তাই বিকল্প বিদেশি খেলোয়াড় আনতে হবে বরিশালকে।