খুলনা, বাংলাদেশ | ১৫ আশ্বিন, ১৪৩১ | ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  দেশে ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ৫ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১১৫২
  সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স বৃদ্ধির বিষয়ে কমিটি গঠন, ৭ কর্মদিবসের মধ্যে কমিটি পরামর্শ দিবে: জনপ্রশাসন সচিব
  কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার ফিলিপনগর ইউপি চেয়ারম্যান মো. নঈম সেন্টুকে গুলি করে হত্যা

বিনা অপরাধে ছয় সাজা ট্রেন চালক আজাদের, দুর্বিষহ জীবন

বাপী দে

ছিলেন শিক্ষক, লেখেন কবিতাও। এক সময়ে স্বছন্দে বেঁচে থাকার জন্য শিক্ষাকতা পেশা ছেড়ে যুক্ত হন রেলওয়েতে। এলএম গ্রেডে যুক্ত হয়ে শুরু করেন ট্রেন চালনা। স্ত্রী, দুই সন্তান নিয়ে ভালোই কাটছিল কবি ও ট্রেন চালক মো. আবুল কালাম আজাদের দিন। কিন্তু সেই সুখ আর স্থায়ী হয়নি। চাকুরি জীবনের ১৭ বছর পর মধ্য বয়সে তুচ্ছ ঘটনায় তিনি বিনা অপরাধে সাজা পেয়ে পথে বসতে চলেছেন। আর্থিক অনটন, সামজিক বিড়ম্বনায় মানসিক ও শারীরিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছেন ।

এই রেল চালকের বিরুদ্ধে প্রথমে চলন্ত ট্রেন থেকে ৩-৪টি বস্তা ফেলে ৩০ লিটার জ্বালানি পাচার ও তছরুপ দেখিয়ে এই ট্রেন চালককে সাময়িক বরখাস্তসহ ৫টি গুরুতর সাজা দিয়েছে উর্দ্ধতন কর্তারা। অথচ রেলের জ্বালানি তেলের হিসেবে ওইদিন চালক বাড়তি ১৬ লিটার জ্বালানি সঞ্চয় করেন।

২০০৫ সালের ১৬ মে রেলে চাকুরি শুরু করা ভুক্তভোগী আবুল কালাম আজাদ এ ঘটনায় সুবিচার চেয়ে প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল আদালত খুলনায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। তিনি তাঁর বিরুদ্ধে অবিচারের প্রতিকার চান।

মামলার এজাহার ও ভুক্তভোগীর সূত্রে জানাগেছে, ২০২২ সালের ৩ আগস্ট ৩০ ওয়াগণ বিশিষ্ট ৩০/৫৯ লোডট্রেন চালকের দায়িত্ব পান। তিনি ট্রেনে গিয়ে সেখানে ৩টি ব্রেকিংস্টক যুক্ত দেখতে পান। যারমধ্যে একটি ব্রেকিংস্টক অকার্যকর। যা ট্রেন পরিচালনার ক্ষেত্রে অনিরাপদ ও ঝুঁকিপূর্ণ। তিনি বিষয়টি উদ্ধর্তন মালবাহী ট্রেনটি খুলনা জংশন ছাড়তে দু’ঘন্টা দেরী হয়। এ ঘটনা নিয়ে ট্রেন গার্ড বিশ্বজিৎ অধিকারী ও কর্মরত সিপাহী গৌতম কুমার সঙ্গে বসচা হয়।

এ ঘটনার জেরে একই দিন রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী খুলনার উপ-পরিদর্শক (এসআই) নিকট চেঙ্গুটিয়া স্টেশন পার হওয়ার পর চলন্ত অবস্থায় ট্রেনের ইঞ্জিন থেকে ৩/৪ টি সাদা বস্তা মুখ বন্ধ অবস্থায় ফেলতে দেখেছেন বলে ট্রেন চালক আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেন। ৩০টি ওয়াগন বিশিষ্ট ট্রেনটিতে দায়িত্বরত ইঞ্জিন থেকে গার্ড ব্রেকের দুরত্ব ছিল প্রায় এক কিলোমিটার। এই অভিযোগটি বাংলাদেশ রেলওয়ের রাজশাহী সদরের কমান্ড্যান্টের কাছে পাঠানো হয়। ১৭ আগস্ট রেলওয়ের পাকশী সহকারী যন্ত্র প্রকৌশলী মো. আব্দুল জলিল তদন্ত প্রতিবেদনের উল্লেখ করে আবুল কালাম আজাদকে কারণ দর্শানো নোটিশ দেন। ওই নোটিশেও ট্রেনটি ঈশ্বরদীতে পৌঁছার পর ৩০ লিটার জ্বালানি বরাদ্দ অপেক্ষা বেশী পাওয়ার উল্লেখ করা হয়। আবার একই চিঠিতে ৩০ লিটার জ্বালানি পাচার বা তছরুপে অভিযুক্ত করা হয়। যা ওই কর্মকর্তার স্ববিরোধীতা।

অপরদিকে প্রতিবেদকের কাছে আসা রেলওয়ের জ্বালানি হিসেব রেজিস্টারে ট্রেন চালক আবুল কালাম আজাদ ওইদিন (৩ আগস্ট) ১৬ লিটার জ্বালানি সঞ্চয় করেন। আর আগস্ট মাসে তিনদিনে তাঁর সঞ্চয় ৩০ লিটার জ্বালানি। কিন্তু এতো তথ্য প্রমাণের পর এ ঘটনার গঠিত কমিটির তিন তদন্ত কর্মকর্তা মোহা. গোলাম মোস্তফা, মো. আব্দুর রউফ, মোঃ রফিকুল ইসলাম রেলচালক আবুল কালাম আজাদ ও চালক সহকারী মো. ইকবাল হোসেনকে ৩০ লিটার জ্বালানি পাচার ও তছরুপের জন্য দায়ী করে প্রতিবেদন দেন।

আর ২০২২ সালের ৪ ডিসেম্বর রেলওয়ে পাকশীর বিভাগীয় যন্ত্র প্রকৌশলী আশীষ কুমার মন্ডল নিজ ক্ষমতাবলে আবুল কালাম আজাদকে চার মাসের জন্য বরখাস্ত, পদাবনতসহ গুরুতর ৫টি শাস্তি প্রদান করেন। অন্যান্য শাস্তির মধ্যে রয়েছে, বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি চার বছরের জন্য স্থগিত, এলএম গ্রেড-২ থেকে এএলএম গ্রেড-১ পদে পদাবনত, বেতন ১৩তম গ্রেড থেকে ১৬তম গ্রেডে অবনমন ও খুলনা লোকোসেড থেকে পার্বতীপুর লোকোসেডে বদলী, পাকশীতে সকাল বিকেল হাজিরা প্রদান।

২০২৩ সালের ৬ আগস্ট মিথ্যা অভিযোগে শাস্তি প্রদানের প্রতিকার চেয়ে ভুক্তভোগী আবুল কালাম আজাদ আশীষ কুমার মন্ডলসহ ৬ জনকে বিবাদী করে খুলনার প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল আদালতে একটি মামলা দায়ের করেছেন।

ট্রেন চালক মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমি প্রতিহিংসার শিকার হয়েছি। সৎভাবে জীবন যাপনের জন্য শিক্ষকতা ছেলে রেলে চাকুরি নিয়েছিলাম। কিন্তু কোন অপরাধ না করেও গুরুতর সাজা পেয়েছি। আর্থিক, মানষিকভাবে আর বাঁচতে পারছি না। সামাজিকভাবেও হেয় প্রতিপন্ন হচ্ছি। অর্থ কষ্ট ও দ্রব্যমূল্যের উর্দ্ধগতিতে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছি। আমি শুধু ন্যায় বিচার ও ক্ষতিপূরণ চাই।

অবশ্য এ বিষয়ে কথা বলার জন্য রেলওয়ে পাকশীর বিভাগীয় যন্ত্র প্রকৌশলী আশীষ কুমার মন্ডলের মুঠোফোনে  যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোনটি তোলেননি।

খুলনা গেজেট/কেডি




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!