মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারী শহিদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদনের মধ্য দিয়ে রবিবার (২৬ মার্চ) খুলনায় যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদযাপন করা হয়।
দিবসটি উপলক্ষ্যে সূর্যোদয়ের সাথে সাথে গল্ল¬ামারী শহিদ স্মৃতিসৌধে পুষ্পমাল্য অর্পণ করা হয়। প্রত্যুষে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ লাইনে ৩১বার তোপধ্বনির মধ্যদিয়ে দিবসের শুভ সূচনা করা হয়। সূর্যোদয়ের সাথে সাথে সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত এবং বেসরকারি ভবন ও প্রতিষ্ঠানসমূহে জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং শহরের প্রধান প্রধান সড়ক ও সড়ক দ্বীপসমূহ জাতীয় পতাকা দ্বারা সজ্জিত করা হয়।
গল্ল¬ামারী শহিদ স্মৃতিসৌধে পুষ্পমাল্য অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন মহানগর ও জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড, শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান, কেসিসি’র মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক, বিভাগীয় কমিশনার মোঃ জিল্লুর রহমান চৌধুরী, পুলিশ কমিশনার মোঃ মাসুদুর রহমান ভূঞা, রেঞ্জ ডিআইজি মঈনুল হক, জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসির আরেফীন, সরকারি-বেসরকারি দপ্তর, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, আওয়ামী লীগ এবং এর অংগ ও সহযোগি সংগঠন, প্রেসক্লাব, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দসহ সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা।
সকাল আটটায় খুলনা জেলা স্টেডিয়ামে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন খুলনার বিভাগীয় কমিশনার মোঃ জিল্লুর রহমান চৌধুরী। পরে একই স্থানে বীর মুক্তিযোদ্ধা, পুলিশ, আনসার-ভিডিপি, বিএনসিসি, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, কারারক্ষী, বাংলাদেশ স্কাউট, রোভার স্কাউট, নৌ-স্কাউট, গার্লস গাইডের অংশগ্রহণে বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও পুরস্কার বিতরণ করা হয়। বিভাগীয় কমিশনার প্রধান অতিথি হিসেবে কুচকাওয়াজে সালাম গ্রহণ করেন। পুলিশ কমিশনার মোঃ মাসুদুর রহমান ভূঞা, খুলনা রেঞ্জ ডিআইজি মঈনুল হক, খুলনার জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসির আরেফীন এবং পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহবুব হাসান এসময় উপস্থিত ছিলেন।
সিনেমা হলসমূহে ও উন্মুক্তস্থানে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র প্রদর্শন/প্রামাণ্য চলচ্চিত্র/দুর্নীতি বিরোধী তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। দুপুরে হাসপাতাল, জেলখানা, বৃদ্ধাশ্রম, এতিমখানা ও শিশু পরিবারসমূহে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হয়। জাতির শান্তি ও অগ্রগতি কামনা করে বাদযোহর মসজিদে বিশেষ মোনাজাত এবং মন্দির, গীর্জা, প্যাগোডা ও অন্যান্য উপাসনালয়ে বিশেষ প্রার্থনা এবং খুলনা কালেক্টরেট জামে মসজিদে দোয়া ও মিষ্টি বিতরণ করা হয়। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বিআইডব্লিউটিএ রকেট ঘাটে নৌ-বাহিনীর জাহাজ জনসাধারণের দর্শনের জন্য উম্মুক্ত রাখা হয়। শহিদ হাদিস পার্কে মুক্তিযুদ্ধ ভিক্তিক চলচ্চিত্র/প্রামাণ্য চলচ্চিত্র প্রদর্শন এবং খুলনার সকল পার্ক, জাদুঘর, গণহত্যা জাদুঘর শিশুদের জন্য বিনা টিকিটে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত উন্মুক্ত রাখা হয়।
বিকালে খুলনা জেলা শিল্পকলা একাডেমি অডিটোরিয়ামে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহিদ পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা ও ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক নেতৃত্ব এবং দেশের উন্নয়ন’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান বলেন, মুক্তিযোদ্ধারা একবারই জন্মায়। তাঁরা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। যতদিন বাংলাদেশ থাকবে ততদিন জাতি মুক্তিযোদ্ধাদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে। তিনি বলেন, অনেক ত্যাগ ও রক্তের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের মহান স্বাধীনতা। এই স্বাধীনতাকে যেকোন মূল্যে অক্ষুন্ন রাখতে হবে। জাতির পিতার আন্দোলন-সংগ্রামের কারণে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি। বঙ্গবন্ধু সবসময় রাজনৈতিক স্বাধীনতার পাশাপাশি একটি সুখী-সমৃদ্ধশালী দেশ গড়ার স্বপ্ন দেখতেন। তাঁর সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ গড়বো এই হোক আমাদের আজকের দিনের শপথ।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বিভাগীয় কমিশনার মোঃ জিল্লুর রহমান চৌধুরী, পুলিশ কমিশনার মোঃ মাসুদুর রহমান ভূঞা, খুলনা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি মোঃ ইকবাল, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ হানুরুর রশীদ, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহবুব হাসান, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আলমগীর কবীর ও সরদার মাহাবুবার রহমান। খুলনার জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসির আরেফীনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) পুলক কুমার মন্ডল। বীর মুক্তিযোদ্ধা নূর ইসলাম বন্দ ও মকবুল হোসেন মিন্টু বক্তব্য রাখেন। এসময় মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার, বীর মুক্তিযোদ্ধা, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
দিবসটি উপলক্ষ্যে খুলনা বেতার বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার এবং স্থানীয় সংবাদপত্রগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করে। এছাড়াও দিবসটি পালন উপলক্ষে রাজনৈতিক দল, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করে।
২৬ শে মার্চ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস-২০২৩ উপলক্ষে রবিবার সকালে খুলনা প্রেসক্লাবের আয়োজনে ক্লাবের হুমায়ুন কবীর বালু মিলনায়তনে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার শুরুতে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে দাঁড়িয়ে ১মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন খুলনা প্রেসক্লাবের সভাপতি এস এম নজরুল ইসলাম। সভা পরিচালনা করেন ক্লাবের যুগ্ম-সম্পাদক মাহবুবুর রহমান মুন্না। আলোচনা সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন খুলনা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মকবুল হোসেন মিন্টু, ফারুক আহমেদ ও এস এম জাহিদ হোসেন, ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোঃ সাহেব আলী ও মল্লিক সুধাংশু, সহ-সভাপতি মোঃ মুন্সি মাহবুব আলম সোহাগ, সহকারী সম্পাদক সুনীল কুমার দাস, কার্যনির্বাহী সদস্য মো: শাহ আলম ও মোঃ আব্দুল হালিম, খুলনা সাংবাদিক ইউনিয়নের সদস্য আসাদুজ্জামান খান রিয়াজ, ক্লাব সদস্য দিলীপ কুমার বর্মন প্রমুখ।
এর আগে স্বাধীনতা দিবসের প্রথম প্রহরে খুলনা প্রেস ক্লাবের নেতৃবৃন্দ গল্লামারী শহীদ স্মৃতিসৌধে পুষ্পমাল্য অর্পণের মাধ্যমে বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
নর্থ ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটিতে যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস-২০২৩ এর অনুষ্ঠানমালা উদযাপিত হয়েছে। এ দিন সকালে জাতীয় পতাকা উত্তোলণের মাধ্যমে ২৬ মার্চের অনুষ্ঠান শুরু হয়। এরপর সকাল সাড়ে ১০ টায় বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীবৃন্দ গল্লামারী স্মৃতিসৌধে পুষ্পার্ঘ অর্পণ করেন।
সকাল সাড়ে ১১ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন মিলনায়তনে স্বাধীনতা দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে এক আলোচনা সভা ও মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে জীবন উৎসর্গকারী সকল শহীদদের আত্মার মাগফিরাম কামনা করে দু’আ অনুষ্ঠিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মোঃ ইনজামাম উল হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সায়েন্স এ্যান্ড টেকনোলজি অনুষদের ডীন প্রফেসর ড. মোঃ নওশের আলী মোড়ল। প্রধান অতিথি তার বক্তব্যে বলেন, বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হলে আমরা স্বাধীনতার স্বাদ পেতাম না। তার আদর্শ কে ধারণ করে আমাদেরকে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। তার স্বপ্ন বাস্তবায়নে আমাদেরকে সর্বদা সজাগ থাকতে হবে। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে নিহত সকল শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিশ^বিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ডীন ড. মোঃ রউফ বিশ^াস, রেজিস্ট্রার মুহম্মদ শরিফুল ইসলাম।
উপস্থিত ছিলেন বিশ^বিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের বিভাগীয় প্রধানগণ, সহকারি প্রক্টরবৃন্দ, শিক্ষার্থী, শিক্ষকমন্ডলী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মিনা অছিকুর রহমান দোলন। দু’আ পরিচালনা করেন মাওঃ আব্দুল মুমীন নোমানী।