সাতক্ষীরার শ্যামনগরে বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের শোকজ নোটিশ পেয়ে মোঃ আবুল বাসার (৫০) নামের একজন প্রধান শিক্ষক আত্মহত্যা করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বুধবার (৪ জানুয়ারি) বেলা দেড়টার দিকে উপজেলা সদরের গোপালপুর এলাকার ভাড়া বাসায় গাছের সাথে গলা দড়িতে ঝুলিয়ে আত্মহত্যা করেন তিনি। স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে শ্যামনগর থানা পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মৃতদেহ উদ্ধার করে। আত্মহননকারী প্রধান শিক্ষক মোঃ আবুল বাসার সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার কৈখালী গ্রামের মরহুম এন্তাজ আলী গাজীর ছেলে। তিনি কৈখালী এসআর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। বিদ্যালয় সদ্য গঠিত পরিচালনা পরিষদের শোকজ করার ঘটনায় মানসিক চাপে তিনি আত্মহত্যা করেছেন বলে পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন। তবে আগের কমিটি বিভিন্ন পদে নিয়োগের জন্য প্রায় পৌনে এক কোটি টাকা নিলেও তাদের চাকরি দেয়নি। নিয়োগ বঞ্চিতদের টাকা ফেরত দিতে না পারার ঘটনায় তিনি এমন দুর্ঘটনা ঘটিয়ে থাকতে পারেন বলে মন্তব্য করে দায় এড়ানোর চেষ্টা করেন বিদ্যালয়ের পরিচালনা পরিষদের সদস্যরা।
মৃতের ভাই মোঃ আবুল খায়ের জানান, গুরুত্বপূর্ণ অপারেশনের কারনে গত কয়েক দিন ধরে তার ভাই ছুটিতে ছিলেন। আকস্মিকভাবে মঙ্গলবার দুপুরে তিনি বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের বর্তমান কমিটির সভাপতির স্বাক্ষরিত একটি শোকজ নোটিশ হাতে পান। সেখানে অর্থ তসরুফের অভিযোগ এনে দ্রুত সময়ের মধ্যে বিভিন্ন চাকরি প্রার্থীর নিকট হতে আদায় হওয়া প্রায় পৌনে এক কোটি টাকা ফেরত না দিলে তাকে চাকরিচ্যুত করার হুমকি দেয়া হয়।
আবুল খায়ের আরও জানান, শোকজন নোটিশ প্রাপ্তির পর থেকে তার ভাই মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। এক পর্যায়ে বুধবার দুপুরে দুই ছেলে নানার বাড়ি থাকায় ও স্ত্রী অসুস্থ স্বামীর ঔষধ কিনতে বাসার বাইরে যাওয়ার সুযোগে তিনি গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেন। এঘটনায় তারা সভাপতিসহ পরিচালনা পরিষদের কয়েকজন সদস্যের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করবেন। তার দুই ছেলে উচ্চ ম্যাধমিক ও স্নাতক পর্যায়ে লেখপড়া করেন বলেও তিনি জানান।
এবিষয়ে বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সভাপতি কৈখালী ইউপি চেয়ারম্যান শেখ আব্দুর রহিম জানান, আগের কমিটির কাছে টাকা দিয়ে চাকরি না হওয়া কয়েকজনের অভিযোগের প্রেক্ষিতে প্রধান শিক্ষককে শোকজ করা হয়। তবে পূর্বেকার কমিটির সভাপতি সমুদয় টাকা হাতিয়ে নেয়ার পর চাকরি বঞ্চিতদের টাকা ফেরত দেয়া নিয়ে প্রধান শিক্ষক বেকায়দায় পড়েন। টাকা দিয়েও চাকরি না পাওয়া প্রার্থীরা সম্প্রতি টাকা ফেরত চাওয়ায় প্রধান শিক্ষক আত্মহত্যা করে থাকতে পারেন। বিগত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান ও বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সভাপতি পদের নির্বাচনে পরাজিত একজনপ্রার্থী কৌশলে ঘটনার দায় তার উপর চাপানোর চেষ্টা করছে বলেও তিনি দাবি করেন।
বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সাবেক সভাপতি প্রাক্তন চেয়ারম্যান রেজাউল করিম জানান, বিদ্যালয়ের দুই শিক্ষক আব্দুল মান্নান ও আব্দুল মজিদসহ বর্তমান সভাপতি প্রধান শিক্ষককে বিদ্যালয় থেকে সরাতে নানান ষড়যন্ত্র করছেন। আবুল বাসারকে অপসারণসহ মামলার হুমকি দিয়ে শোকজ করার মাধ্যমে পরোক্ষভাবে তাকে আত্মহত্যায় বাধ্য করা হয়েছে।
শ্যামনগর থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ নুরুল ইসলাম বাদল জানান, পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ওই শিক্ষকের মৃতদেহ উদ্ধার করে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার ময়না তদন্ত শেষে মরদেহ তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। তবে মৃতের পরিবার এ ঘটনায় অভিযোগ করলে পুলিশ পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেবে বলে জানান তিনি।