ভারতের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের নেত্রী ও দলটির অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট সোনিয়া গান্ধী এবং তার ছেলে ও দলীয় এমপি রাহুল গান্ধীকে সমন পাঠিয়েছে ভারতের অর্থনৈতিক গোয়েন্দা ও আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)।
ভারতের আলোচিত ‘ন্যাশনাল হেরাল্ড কেইস’ দুর্নীতি মামলার অভিযুক্ত হিসেবে এই দু’জনকে সমন পাঠানো হয়েছে বলে বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন কংগ্রেসের জ্যেষ্ঠ নেতা ও মুখপাত্র রণদীপ সিং সুর্জেওয়ালা।
সুর্জেওয়ালা বলেন, ‘সোনিয়া গান্ধী ও রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে ন্যাশনাল হেরাল্ড পত্রিকার তহবিল থেকে মুদ্রা সরানো ও তা বিদেশে পাচারের অভিযোগ এসেছে। আগামী ৮ জুন ইডির কার্যালয়ে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে।’
পাশপাশি, এ ঘটনাকে বিজেপির ‘ষড়যন্ত্র’ বলে উল্লেখ করে সুর্জেওয়ালা বলেন, ‘একসময়ে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসকরা ন্যাশনাল হেরাল্ড পত্রিকাকে দমিয়ে রাখার চেষ্টা করেছিল, আজ মোদি নেতৃত্বাধীন সরকার কংগ্রেস নেতৃত্বকে দমানোর চেষ্টা করছে; আর এ কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে ইডিকে।’
ভারতের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ লোকসভার কংগ্রেস এমপি অভিষেক মনু সিংভি পৃথক এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, আগামী ৮ জুন সোনিয়া গান্ধী ইডি কার্যালয়ে উপস্থিত হবেন, তবে রাহুল গান্ধীর উপস্থিতির দিন পেছাতে ইডি বরাবর আবেদন করা হবে।
১৯৩৮ সালে ভারতের কয়েকজন স্বাধীনতা সংগ্রামীকে সঙ্গে নিয়ে ‘ন্যাশনাল হেরাল্ড’ প্রতিষ্ঠা করেন কংগ্রেসের সাবেক প্রেসিডেন্ট পন্ডিত জওহরলাল নেহেরু। প্রতিষ্ঠার অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই এই ইংরেজি দৈনিক কংগ্রেসের মুখপাত্র হয়ে ওঠে। স্বাধীনতার পরও বেশ দাপটের সঙ্গে চলছিল ন্যাশনাল হেরাল্ড। ইংরেজির পাশাপাশি হিন্দি ও উর্দু ভাষার সংস্করণও বের হতো এ পত্রিকার।
প্রতিষ্ঠার ৭০ বছর পর, ২০০৮ সালে প্রায় ৯০ কোটি রুপি ঋণের বোঝা নিয়ে বন্ধ হয়ে যায় ন্যাশনাল হেরাল্ড।
ন্যাশনাল হেরাল্ড ও তার দুই অঙ্গসংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড জার্নালস লিমিটেড (এজেএল) এবং ইয়াং ইন্ডিয়া লিমিটেডের (ওয়াইআইএল) পরিচালনা পর্ষদে ছিলেন কংগ্রেসন নেত্রী সোনিয়া গান্ধী ও রাহুল গান্ধী।
২০১২ সালে ভারতীয় জনতা পার্টির জ্যেষ্ঠ নেতা ও আইনজীবী সুব্রামানিয়ান স্বামী ন্যাশনাল হেরাল্ড, এজেএল ও ইয়াং ইন্ডিয়ার তহবিল তছরুপ ও মুদ্রাপাচারের অভিযোগ আনেন সোনিয়া গান্ধী ও রাহুল গান্ধীসহ পর্ষদের আরও ৪ সদস্যের বিরুদ্ধে।
অভিযোগে বলা হয়, অভিযুক্ত আসামিরা ন্যাশনাল হেরাল্ড তহবিলের প্রায় ২ হাজার কোটি রুপির তহবিল তছরুপ ও মুদ্রাপাচারের সঙ্গে যুক্ত।
দুই বছর তদন্তের পর ২০১৪ সালে ভারতের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআিই আদালতে জমা দেওয়া প্রতিবেদনে জানায়, এ ঘটনায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অপরাধের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। সিবিআইয়ের প্রতিবেদনের পর আদালত সেই মামলা খারিজও করে দেয়।
তার পরের বছর, ২০১৫ সালে মামলাটি পুনরুজ্জীবিত করতে আদালতে আবেদন করে ভারতের কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রণালয়ের এক্তিয়ারভুক্ত আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। সেখানে বলা হয়, এই মামলা ইডি নিজে তদন্ত করতে চায়।
এ আবেদনে সাড়া দিয়ে মামলা পুনরুজ্জীবিত করেন আদালত। পাশপাশি তা পরিচালানার দায়িত্বও দেওয়া হয় ইডিকে।