ভারতে ক্ষমতাসীন বিজেপির দুই নেতা কর্তৃক মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সা.) এর অবমাননা স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে পারছে না বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ সাধারণ মানুষ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে তীব্র সমালোচনা চলছে। অনেকে মহানবী (সা.) এর প্রতি ভালবাসা ও শ্রদ্ধা জানিয়ে পোস্টও দিচ্ছেন।
মুসলিম বিশ্বে তীব্র সমালোচনা ও ভারতীয় পণ্য বর্জনের হুমকির প্রেক্ষিতে দেশটির ক্ষমতাসীনরা ঐ দুই নেতাকে সাময়িক বহিষ্কার করলেও ক্ষোভ প্রশমিত করতে তা যথেষ্ট নয় বলে দৃশ্যত মনে হচ্ছে। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যে বেশ বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছে ভারত। অনেক দেশে সেখানে কর্মরত ভারতীয় দূতকে ডেকে অসন্তোষের কথা জানিয়ে দিয়েছে।
বাংলাদেশের প্রধান বিরোধীদল বিএনপির এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সঃ) কে নিয়ে ভারতীয় জনতা পার্টির দু’জন নেতা যে অবমাননাকর মন্তব্য করেছেন তা বাংলাদেশসহ বিশ্বের মুসলমানদের অনুভূতিতে আঘাত এবং তীব্র ক্ষোভের সঞ্চার করেছে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে প্রতিবাদমূখর এখন সারা বিশ্বের মুসলমানরা।
বিবৃতিতে বলা হয়, ভারতীয় এক টেলিভিশন বিতর্কে মহানবী (সঃ) এবং তাঁর স্ত্রী হযরত আয়েশা (রাঃ) কে নিয়ে নুপুর শর্মার মন্তব্য এবং সেটিকে সমর্থন করে তার সহকর্মীর টুইট করার বিষয়টি অন্যান্যদের মতো বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি’র দৃষ্টিগোচর হয়েছে। অন্যের বিশ্বাস ও ধর্মকে আঘাত করে নুপুর শর্মার আক্রমণাত্মক মন্তব্য সংকীর্ণতা ও চরম ধৃষ্টতার শামিল। তাদের মন্তব্যে জনসমাজে বিভাজন রেখা সুস্পষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
এহেন মন্তব্য সম্পূর্ণরুপে মানুষের ধর্মীয় স্বাধীনতাকে অবজ্ঞা করা, যা সর্বজনীন মৌলিক ও মানবাধিকারের পরিপন্থি। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি এই অমর্যাদাপূর্ণ মন্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে।
এদিকে মহানবী (সা.) কে নিয়ে আপত্তির মন্তব্যের প্রতিবাদে রাজধানী ঢাকাতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগর উত্তর। আজ বুধবার সকালে এ বিক্ষোভ মিছিল করে তারা। মিছিলটি মহাখালী রেল গেইট থেকে শুরু হয়ে নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে টাঙ্গাইল বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়। সমাবেশে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, ভারতের একটি উগ্রবাদী গোষ্ঠী এখন দেশটিতে ইসলাম, ইসলামী মূল্যবোধ ও ইসলামী স্মারকগুলোকে বিশেষভাবে টার্গেট করেছে।
সে ধারাবাহিকতায় ক্ষমতাসীন বিজেপির মুখপাত্র নুপুর শর্মা ও নবীন কুমার জিন্দাল মহানবী (সা.) ও উম্মুল মোমেমিন হযরত আয়েশা (রা.) কে নিয়ে আপত্তিকর কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করে ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ করেছেন। তিনি অবিলম্বে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্যের জন্য অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করে ভারত সরকারকে মুসলিম উম্মাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনার আহবান জানান।
অন্যনদিকে মহানবী (সা.) কে নিয়ে আপত্তির মন্তব্যের প্রতিবাদে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশে আগামী শুক্রবার সারাদেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা দিয়েছে।
মহানবী (সা.)কে নিয়ে বিজেপি নেতাদের কটূক্তির পর মুসলিম দেশগুলোও অতীতের নিরবতা ভঙ্গ করে এবার নড়েচেড়ে বসেছে। কাতার, কুয়েত, তুরস্ক, মিশর, ইরাক, মালয়েশিয়া ও ইরান ভারতের দূতদের তলব করে বিষয়টির তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে। এছাড়া ওআইসি, সৌদি আরব ও পাকিস্তান এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে জাতিসংঘ পর্যন্ত বিবৃতি দিয়েছে। সংস্থাটির মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরাঁস বিবৃতিতে বলেছেন, জাতিসংঘ কখনও ধর্মে ধর্মে বিভেদ করে না। নুপুর শর্মার বক্তব্য তিনি শোনেননি, তবে এ সম্পর্কিত যাবতীয় বিতর্ক তিনি জানেন। জাতিসংঘ কখনোই এই বিষয়গুলো অনুমোদন করে না বলে তিনি জানান।
খুলনা গেজেট/ এস আই