যশোরের ঝিকরগাছায় ৮ পিস ইয়াবা উদ্ধার মামলায় প্রায় সাড়ে ৬ বছর হাজতবাসের পর আসলাম (৩৫) নামের এক ব্যক্তির ছয় মাসের কারাদণ্ড হয়েছে। তার হাজতবাসকে সাজা বিবেচনা করে বৃহস্পতিবার যশোরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক গৌতম মল্লিক এ রায় দিয়েছেন।
এর আগে বিনা বিচারে জেল খাটার বিষয়টি আদালতের নজরে আনে বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের (ব্লাস্ট)। এরপর আদালতের নির্দেশে ১৯ অক্টোবর আসলামকে মুক্তি দেয়া হয়। আসামি আসলাম যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার রাজবাড়িয়া গ্রামের কাওসার আলী সরদারের ছেলে।
বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের প্যারালিগ্যাল টিমের আইনজীবী জান্নাতুল ফৌরদৌস জানান, মালেশিয়া প্রবাসী আসলাম ২০১৪ সালে দেশে ফেরেন। এরপর তিনি মাদকাসক্ত হয়ে পড়েন।
২০১৫ সালের ২৭ মে যশোরের ঝিকরগাছা রাজবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে ফাঁকা মাঠের পূর্ব পাশ থেকে পুলিশ ৮ পিস ইয়াবাসহ আসলামকে গ্রেপ্তার করে। এ মামলায় আদালত তাকে কারাগারে পাঠায়। পরিবারের লোকজন আর আসলামের খোঁজখবর নেয়নি। আইনজীবীও নিয়োগ করেনি। দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে বন্দি ছিলেন তিনি। কারাবন্দি অবস্থায় মানসিক ভারসাম্যহীনতারও শিকার হন তিনি।
এক পর্যায়ে ব্লাস্টের প্যারালিগ্যাল টিমের সঙ্গে আসলামের সাক্ষাৎ হয়। এরপর তার পরিবারের লোকজনের ঠিকানা উদ্ধার করা হয়। তথ্য সংগ্রহ করে ব্লাস্ট বরাবর তার পক্ষ থেকে আইনজীবী নিয়োগের আবেদন করা হয়।
বিনা বিচারে ৬ বছর ৫ মাস হাজতখাটার বিষয়টি অবগত করে গত ১৮ অক্টোবর আদালতে জামিন আবেদন করা হয়। এরপর আদালত তার জামিন মঞ্জুর করেন। ১৯ অক্টোবর যশোর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পান আসলাম। এরপর ২১ অক্টোবর আদালতে দোষ স্বীকার করে আবেদন করেন আসলাম। তার হাজতবাসকে সাজা হিসেবে বিবেচনা করে আদালতে আবেদন করেন আসলামের আইনজীবী। বৃহস্পতিবার (২৮ অক্টোবর) সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত আসলামের হাজতবাসকে সাজা হিসেবে বিবেচনা করে ছয় মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন।
আসলামের ভাই আবু বক্কর বলেন, ‘আসলাম মালেশিয়ায় ছিল এক বছর। এরপর বাড়ি ফিরে আসে। এলাকার খারাপ লোকের সঙ্গে চলাচল করত। এক পর্যায়ে নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। তাকে নিষেধ করলে উল্টো আমাদের ওপর ক্ষিপ্ত হত। নেশার আসর থেকে পুলিশ তাকে আটক করে। প্রথম দিকে আমরা খোঁজখবর নিতাম। পরে আর নিতে পারিনি। আমরা ভাইয়েরা সবাই গরিব। নিজেদের সংসারই ঠিকমতো চলে না। কয়েকদিন আগে আসলামকে আমাদের বাড়িতে দিয়ে গেছে পুলিশ। আসলাম অসুস্থ, ভুল বকে। তার চিকিৎসা করানোর মতো টাকা আমাদের নেই। পৈত্রিক সম্পত্তি বিক্রি করে আসলাম নেশার পেছনে শেষ করেছে। তারপরও চিকিৎসার চেষ্টা করবো।’
খুলনা গেজেট/ এস আই