সাতক্ষীরায় বিচারক ছেলের প্রভাব খাটিয়ে এক ব্যক্তির ইজারাকৃত দুই বিঘার মৎস্য ঘেরে হামলা, ভাংচুর ও লুটপাট করা হয়েছে। লুটপাটে বাধা দেওয়ায় একই পরিবারের তিনজনকে পিটিয়ে জখম করা হয়েছে। শুক্রবার (১৮ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ৬টা থেকে সাড়ে ৮টা পর্যন্ত সদর উপজেলার ব্রহ্মরাজপুর ইউনিয়নের কামারডাঙা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। আহতদের সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
আহতরা হলেন, সাতক্ষীরা সদর উপজেলার কামারডাঙা গ্রামের প্রভাস সরকারের স্ত্রী ভাদ্দুরি সরকার, তার ছেলে তাপস সরকার ও তাপসের স্ত্রী শম্পা সরকার।
সাতক্ষীরা শহরের উত্তর কাটিয়ার শেখ মোদাচ্ছেব আলীর মেয়ে সেলিনা খাতুন জানান, আল আরাফাত শুভ’র আড়াই বছর বয়সে ভাই আব্দুর রহিম মারা যান। এর কিছুদিন পর শুভকে চাচা আব্দুস সালাম মন্টুর কাছে রেখে অন্যত্র বিয়ে করেন শুভ’র মা। একপর্যায়ে চাচা মন্টু, চাচী ও তার (সেলিনা) কাছে বড় হতে থাকে শুভ। শুভ’র পৈতৃক দুই বিঘা জমি নাবালকের অভিভাবক হিসেবে ব্রহ্মরাজপুর ইউনিয়নের কামারডাঙা গ্রামের রাজেন্দ্রনাথ সরকারের ছেলে ভদ্রকান্ত সরকারের কাছে ১৮ বছর আগে থেকে লীজ দিয়ে আসছিলো। শুভ’র জমির পাশে তাদেরই শরিকের ছয় বিঘা জমি কয়েক বছর আগে কেনেন মাছখোলা সরদার বাড়ির রশিদ সরদারের ছেলে আতাউর রহমান। এরপর থেকে ভদ্রকান্ত ও আতাউর রহমানের জমির সীমানা নিয়ে বিরোধ চলে আসছিলো। গত বছর আব্দুস সালাম মণ্টু তার ভাইপো শুভ এর আভিভাক হিসেবে বার্ষিক ১৫ হাজার টাকা লীজে তিন বছর মেয়াদী এক চুক্তিপত্রের মাধ্যমে ভদ্রকান্ত সরকারের সঙ্গে নতুন করে চুক্তির মেয়াদ বাড়ান। এ জন্য মন্টু ৯০ হাজার টাকা নেন ভদ্রকান্তের কাছ থেকে। ভদ্রকান্ত সরকারের ওই জমি তার চাচাত ভাই তাপস সরকার দেখাশুনা করতো। জমির সীমানা নিয়ে বিরোধ দেখা দেওয়ায় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে মামলা করেন আতিয়ার রহমান। মামলা করে বিবাদীপক্ষ মন্টু, ভদ্রকান্ত সরকার ও তার শরীকেদের আদালতে না যাওয়ার জন্য ভয় দেখিয়ে আতিয়ার রহমান তার পক্ষে একতরফা রায় করিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ নেন। আগামি ১০ নভেম্বর আদালত পরবর্তী দিন ধার্য করেন।
সেলিনা খাতুন জানান, চলতি বছরের ১৯ আগষ্ট আল আরাফাত শুভকে বাড়ি থেকে তুলে এনে নিজেদের মত প্রস্তত করে ছেলে আতিকুর সামাদের নামে লেখা দলিলে ভদ্রকান্তের কাছে ইজারা দেওয়া দুই বিঘা জমি জোরপূর্বক সাক্ষর করিয়ে নেন আতাউর রহমান। এ সময় ব্রহ্মরাজপুর ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সংগ্রহ করা শুভ’র জন্মনিধন কার্ড ব্যবহার করা হয়। এ সময় তিনি ঢাকা থেকে ফিরে প্রতিবাদ করেন। দলিল করে নেওয়ার পর শুভ’র হাতে ১০ লাখ ৫০ হাজার টাকা দিয়ে তারা চলে যান। এ সময় মাছ ধরে নেওয়ার জন্য ভদ্রকান্ত সরকারকে চলতি বছরের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়।
কামারডাঙা গ্রামের ভদ্রকান্ত সরকার জানান, শর্ত ভঙ্গ করে শুক্রবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে আতাউর রহমান ২৫/৩০ জন ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী নিয়ে তাকে উচ্ছেদ করতে ওই দুই বিঘা জমির বেড়িবাঁধ কেটে দিয়ে নিজের ঘেরের সঙ্গে মিশিয়ে দেন। ভেঙে দেওয়া হয় ঘেরের বাসা। জাল টেনে ধরা হয় কয়েক হাজার টাকার মাছ। মাছ ধরতে বাধা দেওয়ায় চাচাত ভাই তাপস সরকার, তার স্ত্রী শম্পা সরকার ও মা ভাদ্দুরী সরকারকে লাবনা, শাবল ও বাঁশের লাঠি দিয়ে পিটিয়ে জখম করা হয়। শম্পা সরকারকে পানিতে ডুবিয়ে হত্যার চেষ্টা করা হয়। এমনকি থানায় মামলা না নেওয়ার জন্য তদ্বির তাগাদা শুরু করেছেন তার বিচারক ছেলে। তাকে মামলা না করার জন্য বলা হয়েছে। ফলে তারা মামলা করতে ভয় পাচ্ছেন।
প্রত্যক্ষদর্শী কামারডাঙা গ্রামের মনিরুল ইসলাম, আমিরুল ইসলাম, সুধীর বিশ্বাস ও আনন্দ বিশ্বাস জানান, নিজের বিচারক ছেলের প্রভাব খাটিয়ে শুক্রবার সকালে আতাউর রহমান ভাড়াটিয়া লোকজন নিয়ে ভদ্রকান্ত সরকারের ইজারা নেওয়া মাছের ঘেরে লুটপাট করেছে। লক্ষাধিক টাকার মাছ ক্ষতি করা হয়েছে। আহত তিনজনকে উদ্ধার করে তারা সদর হাসপাতালে ভর্তি করেছেন।
এ ব্যাপারে মাছখোলা সরদার পাড়ার আতাউর রহমানের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
সাতক্ষীরা সদর থানার পুলিশ পরিদর্শক শফিকুল ইসলাম জানান, বিষয়টি তিনি শুনেছেন। তবে শুক্রবার বিকেল চারটা পর্যন্ত এ নিয়ে থানায় কোন লিখিত অভিযোগ করা হয়নি।
খুলনা গেজেট/এএজে