খুলনা, বাংলাদেশ | ৮ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৩ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ১০ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৮৮৬

বিএনপির মহাসমাবেশে : সংঘর্ষ আগুন প্রাণহানির একটি দিন

গেজেট ডেস্ক

শনিবার মহাসমাবেশ ঘিরে বিএনপি নেতাকর্মীর সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও হামলার ঘটনা ঘটেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাবার বুলেট, কাঁদানে গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়েছে পুলিশ। এতে এক পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া এক যুবদল নেতা সংঘর্ষ চলাকালে অসুস্থ হয়ে মারা গেছেন। তবে বিএনপির দাবি, সংঘর্ষে আহত হয়ে তিনি মারা গেছেন। সংঘাতের কারণে বিএনপির মহাসমাবেশ পণ্ড হয়ে যায়। এর প্রতিবাদে আজ রোববার সারাদেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে দলটি।

হাঙ্গামার সময় অ্যাম্বুলেন্স, পুলিশের গাড়িসহ আগুন দেওয়া হয়েছে অন্তত ৭৬টি যানবাহনে। ভাঙচুর চালানো হয় প্রধান বিচারপতির বাসভবনের ফটকেও। পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে পাঁচটি পুলিশ বক্স। সংঘর্ষে আহত হয়েছেন দুই শতাধিক। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জামায়াতের শতাধিক নেতাকর্মী চিকিৎসাধীন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে আহত ৪১ পুলিশ সদস্য চিকিৎসা নিচ্ছেন। দিনভর সংঘর্ষের ঘটনায় মধ্যরাত পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি। তবে বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে বিএনপির শতাধিক নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। নয়াপল্টন ও আশপাশের এলাকা তখনও থমথমে ছিল। রাজধানীর ফকিরাপুল মোড়ে বিএনপি সমর্থকদের হামলায় কনস্টেবল আমিনুল পারভেজ মারা যান। আর শামীম মোল্লা মুগদা থানা ওয়ার্ড যুবদল নেতা।

জাতীয় নির্বাচনের আগে ‘সরকার পতনের’ এক দফা দাবিতে নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে শনিবার মহাসমাবেশ ডেকেছিল বিএনপি। ২০ শর্তে তাদের অনুমতিও দেয় পুলিশ। কড়া নিরাপত্তার মধ্যে সকাল থেকেই নেতাকর্মী জড়ো হতে থাকেন নয়াপল্টনে। দুপুর ১২টার দিকে সমাবেশস্থলের অদূরে কাকরাইল মোড়ে সংঘর্ষের কারণে বিএনপির সমাবেশ পণ্ড হয়ে যায়। পরে সমাবেশস্থল থেকে হ্যান্ডমাইকে হরতালের ঘোষণা দেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশ ঘিরে দলটির নেতাকর্মীর সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনার পর নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় কার্যত ফাঁকা হয়ে যায়। আশপাশের অলিগলিতে অবস্থান নিয়ে পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ইটপাটকেল ছোড়াছুড়ি চলতে থাকে। সন্ধ্যার পর থেকে কার্যালয়ের সামনের এলাকাসহ আশপাশের সব মোড়ে রায়ট কার (দাঙ্গা দমনে ব্যবহৃত গাড়ি) নিয়ে অবস্থান করেন পুলিশ, র‍্যাব, বিজিবিসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। রাতে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কসহ নয়াপল্টন ও আশপাশের এলাকার পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে নেয় পুলিশ। ঢাকায় মোতায়েন করা হয় ১১ প্লাটুন বিজিবি সদস্য। এদিকে গতকাল রাত সাড়ে ১০টার দিকে জরুরি এক সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান বলেন, শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বিএনপি সহিংসতা চালিয়েছে। হরতালে নৈরাজ্য সৃষ্টি করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পুলিশের ওপর হামলাকারীদের শনাক্ত করে দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে। সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনার নিন্দা জানান কমিশনার।

যেভাবে ঘটনার শুরু

মহাসমাবেশ সামনে রেখে বিএনপি নেতাকর্মীরা শুক্রবার রাত থেকে নয়াপল্টনে অবস্থান করতে থাকেন। শনিবার সকালে কাকরাইল, বিজয়নগর মোড়সহ আশপাশের এলাকায় অবস্থান নেন দলটির নেতাকর্মীরা। দুপুর ১২টা পর্যন্ত সবকিছু শান্তিপূর্ণভাবেই চলছিল। সোয়া ১২টার দিকে সরকারদলীয় সমর্থকরা কয়েকটি পিকআপ ভ্যানে ও একটি বাসে প্রধান বিচারপতির বাসভবনের সামনের সড়ক পার হচ্ছিলেন। ওই সড়কে আগে থেকে জড়ো হওয়া বিএনপির নেতাকর্মীরা সরকার সমর্থকদের ‘ভুয়া ভুয়া’ বলে স্লোগান দিতে থাকেন।

হঠাৎ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর গাড়িতে ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু হয়। এর পরই উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। সরকারদলীয় এক কর্মীকে সেখানে মারধর করা হয়। পুলিশ এসে উভয় পক্ষকে শান্ত করার চেষ্টা করে। ১টার দিকে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে কাকরাইল মসজিদের সামনের সড়কে। বিক্ষুব্ধ বিএনপির সমর্থকরা সেখানে একটি পুলিশ বক্সে আগুন দেন। সড়কের কাগজপত্র ও ব্যানার জড়ো করে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। ভাঙচুর করা হয় রাস্তার বিভিন্ন পয়েন্টে বসানো সিসি ক্যামেরা। এ সময় কাকরাইলের সামনের সড়ক হয়ে সরকার সমর্থকদের তিনটি গাড়ি ও যুবলীগের কয়েকজন নেত্রী হেঁটে যাচ্ছিলেন। তাদের ওপর চড়াও হন বিএনপি নেতাকর্মীরা। এক গাড়িচালককে বেধড়ক পিটিয়ে রক্তাক্ত করা হয়। ঘটনাস্থলে তাঁর পরিচয় জানতে চাইলে একজন সাবেক মন্ত্রীর গাড়িচালক বলে জানান। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেখানে পুলিশ বাড়ানো হয়। মোতায়েন করা হয় দুটি আর্মার্ড পার্সোনেল ক্যারিয়ার (এপিসি)। এর পরই পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড, কাঁদানে গ্যাস ও ছররা গুলি ছুড়ে কাকরাইলের মসজিদের সামনের সড়ক থেকে নেতাকর্মীকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। ২টার দিকে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) কয়েকটি টহল গাড়ি এসে ওই এলাকায় অবস্থান নেয়।

পুরো এলাকা রণক্ষেত্র

এক পর্যায়ে কাকরাইল মোড় ছাড়াও পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীর সংঘর্ষ বিজয়নগর, আরামবাগ ও নয়াপল্টনে ছড়িয়ে পড়ে। সোয়া ১টার দিকে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের বাসভবনের ফটক ভাঙচুর করেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। গেট ভেঙে কেউ কেউ ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করেন। এ সময় বাসার ভেতরে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা ছররা গুলি ছোড়েন। পুলিশ ও বিএনপির নেতাকর্মীর মধ্যে এ সময় তুমুল সংঘর্ষ চলতে থাকে। ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ (আইডিইবি) ভবনে রাখা দুটি সরকারি গাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে। ভাঙচুর করা হয় আইডিইবি ভবনের ভেতরেও।

এ ছাড়া কাকরাইল মোড়ে ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালের পাশে বিজয়নগর নামে একটি টাওয়ারের নিচে পার্ক করা তিনটি মোটরসাইকেলে আগুন দেওয়া হয়। অগ্নিসংযোগ করা হয় সেখানকার পুলিশ বক্সেও। প্রধান বিচারপতির বাসভবনে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্য হাবিবুর রহমান বলেন, ৩০০ থেকে ৪০০ লোক গেটে ধাক্কা দিয়ে ভেতরে চলে আসে। আমরা ফায়ার শুরু করলে তারা স্থান ছাড়তে বাধ্য হয়। ঘটনার সময় প্রধান বিচারপতি বাসভবনে ছিলেন না বলে জানান তিনি। এরপর ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা-ডিবির প্রধান হারুন-অর রশিদ প্রধান বিচারপতির বাসভবন ঘুরে দেখেন। সেখানে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, বিনা উস্কানিতে যারা হামলা করেছে, সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে তাদের শনাক্ত করা হবে। কেউ কেউ ডিবির পোশাক পরেও পুলিশের গাড়িতে আগুন দিয়েছে। তাদের খোঁজা হচ্ছে।

গতকাল রাতে এক বিবৃতিতে প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলার ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন।

মহাসমাবেশ ভন্ডুল

দুপুরে কাকরাইল মসজিদের সামনের সড়কের সংঘর্ষ কিছু সময়ের ব্যবধানে বিজয়নগর ও শান্তিনগরে ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশ টিয়ার গ্যাসের শেল, সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়া শুরু করে। এতে বিএনপির নেতাকর্মীকে নয়াপল্টনের দলীয় কার্যালয়ের সামনে সড়ক পর্যন্ত ধাওয়া করতে করতে নিয়ে যায় পুলিশ। বিএনপির সমাবেশের কার্যক্রম শুরু হয়েছিল ছাত্রদল সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েলের বক্তব্যের মধ্য দিয়ে। দলের যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেলের বক্তব্য দেওয়ার সময় কাকরাইল মোড়ের কাছে সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ার শেল নিক্ষেপের শব্দ শোনা যাচ্ছিল সভা মঞ্চ থেকে। এতে বিএনপি মঞ্চের নেতাকর্মীরা দাঁড়িয়ে স্লোগান দিতে থাকে।

বেলা আড়াইটার দিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ যখন বক্তব্য দিচ্ছিলেন, সে সময় পুলিশের একটি দল সাঁজোয়া যান এগিয়ে যায় নয়াপল্টনের দিকে। সেখানে টিয়ার গ্যাসের শেল ছোড়া হয়। আমীর খসরুর বক্তব্যের পর পরই সভা মঞ্চের মাইক বন্ধ হয়ে যায় এবং বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ নেতারা বসে পড়েন। ১০ মিনিটের ব্যবধানে টিয়ার গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেডের তোপের মুখে পুরো এলাকা নেতাকর্মীশূন্য হয়ে পড়ে। বিএনপি মহাসচিবসহ স্থায়ী কমিটির সদস্যরা নেমে যান মঞ্চ থেকে।

তখনই রোববার সকাল-সন্ধ্যা হরতালের কর্মসূচি ঘোষণা দেন মহাসচিব। বিএনপি নেতারা মঞ্চ ছাড়ার পর সমাবেশ বন্ধ হয়ে যায়। কাকরাইল ও নাইটিংগেল মোড় থেকে পুলিশ সাঁড়াশি অভিযান শুরু করে। বিকেল ৪টার দিকে নয়াপল্টনের বিভিন্ন পয়েন্টে জড়ো হওয়ার চেষ্টা করে বিএনপি কর্মীরা। কাঁদানে গ্যাস থেকে রক্ষা পেতে বিভিন্ন এলাকায় নেতাকর্মীকে আগুন জ্বালাতে দেখা যায়। গতকাল বিকেলে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশনের আন্তর্জাতিক বাস ডিপো অফিস, কমলাপুর মোড়ের পুলিশ বক্স, ঢাকা দক্ষিণ সিটির আবর্জনা ব্যবস্থাপনা অফিসসহ একাধিক স্থাপনা ও যানবাহনে অগ্নিসংযোগ করেছে বিএনপি নেতাকর্মীরা। এ ছাড়া নয়াপল্টন ও কাকরাইল এলাকার বিভিন্ন সড়কে গাছগাছালিও বিচ্ছিন্ন করে।

পুলিশ হাসপাতালেও হামলা

রাজারবাগে কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। দুপুর ৩টা ১৫ মিনিটে খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণ করে। ফায়ার সার্ভিসের ডিউটি অফিসার রাফি আল ফারুক এ তথ্য জানিয়েছেন। ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. ফারুক হোসেন জানান, বিএনপি নেতাকর্মীরা পুলিশ হাসপাতালের বিভিন্ন যানবাহনে আগুন দিয়েছে। এতে অ্যাম্বুলেন্সসহ ২৬টি গাড়ি পুড়েছে।

বিজয়নগরে অলিগলিতে সংঘর্ষ

কাকরাইলের পর দুপুর ২টার দিকে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে বিজয়নগর এলাকায়। নাইটিংগেল মোড় থেকে পল্টনমুখী সড়কে এপিসি (আর্মার্ড পার্সোনেল ক্যারিয়ার) নিয়ে এগোতে থাকেন পুলিশ সদস্যরা। এ সময় তারা টিয়ার শেল (কাঁদানে গ্যাস) ছুড়ে বিএনপি নেতাকর্মীকে ছত্রভঙ্গ করে দেন। সেই সঙ্গে মুহুর্মুহু সাউন্ড গ্রেনেডের বিকট শব্দে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে পুরো এলাকা। মাঝে মাঝে রাবার বুলেটও ছোড়ে পুলিশ। তখন নেতাকর্মীরা মূল সড়কসংলগ্ন অলিগলিতে ঢুকে পড়েন। বিজয়নগর পানির ট্যাঙ্কের উল্টো পাশে আকরাম টাওয়ারের গলিতে গিয়ে দেখা যায়, বিএনপির কয়েকশ নেতাকর্মী সেখানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে অবস্থান করছে। এর মধ্যে গলির মাথায় চলে আসে পুলিশের সাঁজোয়া যান (এপিসি)।

সেখান থেকে আবারও টিয়ার শেল, রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়া হয়। তখন নেতাকর্মীরা দৌড়ে গলির ভেতরের দিকে ঢুকে যায়। একটু পরই তারা লাঠিসোটা ও ইটপাটকেল হাতে নিয়ে পুলিশকে ধাওয়া করে। এভাবে প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে থেমে থেমে চলে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া। এতে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী গুরুতর আহত হন। কয়েকজনকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে নিয়ে যান সহকর্মীরা। তাদের মধ্যে রয়েছেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের ছাত্রদল নেতা সজীব হোসেন, বিএনপিকর্মী রফিকুল ইসলাম, ভিপি মাসুম ও মো. লিটন।

আহত ছাত্রদল নেতা সজীব হোসেন জানান, নেতাকর্মীকে সড়ক থেকে সরিয়ে দিতে এলোপাতাড়ি রাবার বুলেট ছোড়ে পুলিশ। এতে তিনিসহ বেশ কয়েকজন আহত হন। তাঁর সঙ্গে থাকা নেতাকর্মীরা দাবি করেন, পুলিশ ও আওয়ামী লীগ কর্মীদের বাধার কারণে আহতদের হাসপাতালেও নিতে পারছেন না। অবশ্য একটু পরই একটি রিকশায় আহত সজীবকে হাসপাতালের উদ্দেশে নিয়ে যাওয়া হয়। পুলিশের ধাওয়া ও টিয়ার শেলের মুখে প্রধান সড়ক থেকে চলে আসা বিএনপি নেতাকর্মীর অবস্থান ছিল বিজয়নগর ও সেগুনবাগিচা এলাকার বিভিন্ন গলিতে।

এদিকে বিজয়নগর এলাকায় বিএনপি নেতাকর্মীর সঙ্গে এক পর্যায়ে যোগ দেয় জামায়াতের কয়েকজন নেতাকর্মী। তারা দলীয় স্লোগান দিয়ে পুলিশের ওপর হামলার জন্য বিএনপি নেতাকর্মীর ইন্ধন দিচ্ছিল।

পুলিশ হত্যা

সিটিটিসির সহকারী পুলিশ সুপার শফিকুল ইসলাম বলেন, বিজয়নগরে সংঘাত ছড়িয়ে পড়লে পারভেজ সেখানে যান। সেখানকার বক্স কালভার্ট রোডে সংঘর্ষ চলাকালে পুলিশ বক্সের ভেতরে ঢুকে পড়েছিলেন। পরে হামলাকারীরা বক্সে আগুন দিতে গেলে পারভেজ সেখান থেকে একাকী বের হয়ে পড়েন। এ সময় তাঁর অস্ত্র কেড়ে নিয়ে হামলা হয়। হত্যার উদ্দেশ্যে মাথায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপানো হয়েছে। পারভেজ ছাড়াও রাজধানীর কাকরাইল মোড় ও নয়াপল্টনে কয়েকজন পুলিশ সদস্যকে নির্দয়ভাবে পিটিয়েছে বিএনপির সমর্থকরা।

সন্ধ্যায় ঢামেক হাসপাতালে আহত পুলিশ সদস্যদের দেখতে গিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, ছাত্রদলের এক নেতা চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে পুলিশ সদস্যকে হত্যা করেছে। সংঘর্ষ চলাকালে পুলিশ অনেক ধৈর্য দেখিয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। আমাদের কাছে ছবি আছে, প্রমাণ আছে। প্রধান বিচারপতির বাসভবনের গেট ভেঙেছে তারা। তারা গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করেছে। হরতাল ডেকেছে তারা। জনগণের জানমালের ক্ষতি পুলিশ বরদাশত করবে না। পুলিশ আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে। এদিকে আহত পুলিশ সদস্যদের গতকাল রাতে দেখতে যান আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।

৭৬ গাড়িতে আগুন

শনিবার সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত ঢাকায় ৭৬ গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছে। ভাঙচুর করা হয় আরও কিছু যানবাহন। সকাল ১১টা ২০ মিনিটে রমনা পার্কের সামনের সড়কে বৈশাখী পরিবহনের একটি বাসে আগুন দেওয়া হয়। রাত পৌনে ১০টার দিকে কালশীতে ট্রাস্ট পরিবহনে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। কমলাপুরে আগুন দেওয়া হয় এশিয়া ও এস আলম পরিবহনের গাড়িতে। শাহজাহানপুরে বিআরটিসির দোতলা বাসে আগুন দেওয়া হয়। কমলাপুর রেলস্টেশনে পুলিশের টহল গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়।




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!