খুলনা, বাংলাদেশ | ২৫ মাঘ, ১৪৩১ | ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

Breaking News

  আজ থেকে গাজীপুরসহ সারা দেশে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ শুরু : স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

বাহাত্তরের সংবিধানেই ফ্যাসিবাদের বীজ: সংস্কার কমিশন

গেজেট ডেস্ক

রাষ্ট্র সংস্কারের অংশ হিসেবে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত ছয় সংস্কার কমিশনের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। শনিবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ওয়েবসাইটে প্রতিবেদনগুলো প্রকাশ করা হয়েছে।প্রথম ধাপে যে ছয়টি কমিশন গঠন করেছিল, সংবিধান সংস্কার কমিশন তার একটি।

অধ্যাপক আলী রীয়াজের নেতৃত্বাধীন এই কমিশন গত ১৫ জানুয়ারি প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে তাদের প্রাথমিক প্রতিবেদন দিয়েছিল। আজ পাঁচটি খণ্ডে তাদের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন কমিশনের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।

এতে বাংলাদেশ বিভিন্ন সময়ে ক্ষমতাসীনদের অগণতান্ত্রিক প্রবণতা ও ফ্যাসিবাদী দৃষ্টিভঙ্গির জন্য ১৯৭২ সালে রচিত দেশের প্রথম সংবিধানের ‘দুর্বলতাকে’ দায়ী করেছে কমিশন।তারা বলছে, ‘ফ্যাসিবাদের বীজ ৭২ সালের সংবিধানের মধ্যেই নিহিত ছিল।’

প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘বাংলাদেশ রাষ্ট্রের পরবর্তীকালের অগণতান্ত্রিক প্রবণতা ও শেষপর্যন্ত ফ্যাসিবাদের বীজ ৭২ সালের সংবিধানের মাঝেই নিহিত ছিল। এরই ফলাফল হল প্রতিটি আমলেই ক্ষমতার পূঞ্জীভবন আরও ঘনীভূত হয়েছে, আমলাতান্ত্রিকতা আরও প্রকট রূপ পেয়েছে, বিচারবিভাগ ক্রমশ বেশি বেশি হারে দলীয়করণের শিকার হয়েছে, জবাবদিহিতার অভাবে ক্ষমতাসীনদের আর্থিক দুর্নীতি আরও প্রবল চেহারা নিয়েছে।’

এতে বলা হয়, ‘একইভাবে ব্যক্তিকেন্দ্রিকতা দল, রাষ্ট্র ও সমাজে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির বিকাশকে রুদ্ধ করেছে, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকেও ধ্বংস করেছে। এভাবে ১৯৭২ সালে একজন একক ব্যক্তি ও একটি দলকে কেন্দ্রে রেখে যে সংবিধান প্রণয়ন করা হয়েছিল, তা শেষ পর্যন্ত উত্তরোত্তর স্বৈরতন্ত্রী চেহারা ধারণ করতে করতে অবশেষে বাংলাদেশজুড়ে একটি ফ্যাসিবাদী শাসন কায়েম করেছে।’

সংসদের মেয়াদ চার বছর করার পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী পদে সর্বোচ্চ দুইবার দায়িত্ব পালনের সুযোগ রাখাসহ দেশের সাংবিধানিক নাম এবং সংসদীয় কাঠামোতে পরিবর্তনের মতো সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।

১৪৪ পৃষ্ঠার এ প্রতিবেদনের সুপারিশে বলা হয়, একজন ব্যক্তি জীবদ্দশায় সর্বোচ্চ দুইবার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সুযোগ পাবেন। প্রধানমন্ত্রী পদের মেয়াদ হবে ৪ বছর করে। এ সময় তিনি রাজনৈতিক দলের প্রধান বা সংসদ নেতা হতে পারবেন না।

পাঁচ খণ্ডের এ প্রতিবেদনের প্রথমেই রয়েছে ভূমিকা, পর্যবেক্ষণ ও সুপারিশগুলোর সারসংক্ষেপ।এটি তিন অধ্যায়ে সন্নিবেশিত করা হয়েছে।প্রথম অধ্যায়ে রয়েছে বিদ্যমান সংবিধানের পর্যালোচনা, দ্বিতীয় অধ্যায়ে রয়েছে সুপারিশসমূহ ও তৃতীয় অধ্যায়ে রয়েছে সুপারিশের যৌক্তিকতা।

দ্বিতীয় খণ্ডে ১২১ দেশের সংবিধানের পর্যালোচনার ফল রাখা হয়েছে; তৃতীয় খণ্ডে রাজনৈতিক দল, সিভিল সোসাইটিসহ ব্যক্তির মতামতের সারাংশ রয়েছে; চতুর্থ খণ্ডে কার্যাবহ এবং পঞ্চম খণ্ডে রাজনৈতিক দলের থেকে সংবিধান সংস্কারের সুপারিশ রয়েছে।

গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে স্বৈরাচার আওয়ামী সরকারের পতনের পর ৮ আগস্ট গঠিত হয় অন্তর্বর্তী সরকার।এই সরকারের দায়িত্ব নেন অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনুস। এরপর রাষ্ট্রের বিভিন্ন খাতে সংস্কারের জন্য ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠন করে দেন প্রধান উপদেষ্টা। এসব কমিশনকে ৯০ দিন বা তিন মাসে অর্থাৎ ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়। এরপর নির্ধারিত সময়ের ১৫ দিন পর গত ১৫ জানুয়ারি সংবিধান, নির্বাচন কমিশন, পুলিশ সংস্কার ও দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক এই চারটি সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টার কাছে পেশ করা হয়। অপরদিকে জনপ্রশাসন ও বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন গত ৫ ফেব্রুয়ারি প্রতিবেদন জমা দেয়।

খুলনা গেজেট/ টিএ




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!