শহর, বন্দর, গ্রাম, গঞ্জ, হাটে, মাঠে, বিলবোর্ড, সিনেমা ও সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন বাল্য বিয়েকে না বলুন। জেলা, উপজেলা, পুলিশ প্রশাসন, শিক্ষক, এনজিও, কাজী ধর্মীয় নেতা ও জনপ্রতিনিধিরা ব্যস্ত বাল্য বিয়ে থামাতে। দাতা গোষ্ঠীও টাকা ঢালছে এ প্রকল্পে। তবুও থামছেনা বাল্য বিয়ে। মহানগরীর চেয়ে গ্রামে বাল্য বিয়ে বেশী। এ চিত্র খুলনার।
করোনা মহামারীতে মধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় গ্রামে বাল্য বিয়ের হিড়িক পড়ে। বিশেষ করে আত্মমর্যাদা রক্ষার্থে অভিভাবকরা বিয়ে দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। করোনাকালে এ বিয়ে থামানোর লোক ছিল কম। অপ্রাপ্ত বয়স্ক মেয়েদের স্বাস্থ্যহানির আশঙ্কায় বাল্য বিয়ে থামাতে রাষ্ট্র পর্যায়ে উদ্যোগ গ্রহণ হয়। করোনা দুর্যোগের সময়ে সে উদ্যোগ ভাটা পড়ে। উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও মহিলা অধিদপ্তরের প্রচেষ্টায় জেলায় ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে ৬২ টি, ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে ৫৮ টি এবং ২০২১-২০২২ অর্থ বছরে ৬০ টি বাল্য বিয়ে বন্ধ হয়। মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর সূত্র জানায়, এ অঞ্চলে নবম ও দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বিয়ে দেওয়ার জন্য অভিভাবকরা বেশ ব্যস্ত হয়ে পড়েন। ব্যক্তিগত পর্যায়ে সম্পর্ক গড়ে ওঠায় আত্মমর্যাদা রক্ষার্থে অভিভাবকরা অপ্রাপ্ত বয়সের সন্তানদের বিয়ের ব্যবস্থা করে আসছে। এ কুফল তুলে ধরে সচেতনতা বাড়াতে এনজিও’র মধ্যে ব্রাক, জেজেএস এবং রুপান্তর গত কয়েক বছর ধরে বেশ তৎপর।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এ বছরের গত আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে মহানগরীতে বাল্য বিয়ের ঘটনা ঘটেনি। গেল দু’ মাসের মধ্যে তেরখাদা উপজেলায় ৬ টি, দিঘলিয়া উপজেলায় ৩ টি, রূপসা উপজেলায় ২ টি, ডুমুরিয়া উপজেলায় ৪ টি, বটিয়াঘাটা উপজেলায় ২ টি, দাকোপ উপজেলায় ৩টি পাইকগাছা উপজেলায় ৪ এবং কয়রা উপজেলায় ১ টি বাল্য বিয়ে বন্ধ হয়। প্রশাসন বাল্য বিয়ের কবল থেকে দিঘলিয়া উপজেলার কেয়া খাতুন, সাব্বির চৌধুরী, আরতী রায়, তেরখাদা উপজেলার সোনিয়া খাতুন, রোকসানা আর্ণিকা, আদুরী বেগম, আমেন খাতুন, আশা লতা রায়, রূপসা উপজেলায় লিজা সুলতানা, তানিয়া খাতুন, ডুমুরিয়া উপজেলায় সুমনা পারভীন, মানসুরা খাতুন, মারিয়াম সুলতানা মারিয়া, লিমা খাতুন, বটিয়াঘাটা উপজেলায় তারা রায়, বিউটি মন্ডল, দাকোপ উপজেলায় নাসরিন খাতুন, কল্যানী সরকার, তমা খাতুন, পাইকগাছা উপজেলায় লাইলী আক্তার মেঘলা, রিয়া আক্তার, সুরাইয়া আক্তার, মারিয়া খাতুন ও কয়রা উপজেলায় রিয়াকে রক্ষা করে। তারা শিক্ষা জীবন অব্যাহত রেখেছে।
মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর, খুলনার উপ-পরিচালক হাসনা হেনার অভিমত সচেতনতার কারণে প্রতিবেশীদের সহযোগীতায় বাল্য বিয়ে রোধ করা সম্ভব হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশী ভুমিকা নিচ্ছে ১০৯ নম্বর টেলিফোন ও পুলিশ প্রশাসন। তিনি জানান, অনেক ক্ষেত্রে বাল্য বিয়ের খবর প্রশাসনের কাছে পৌঁছায় না। তবে মহানগরীর তুলনায় খুলনায় এ ধরণের বিয়ের তৎপরতা বেশী।
খুলনা গেজেট/এসজেড