পতিত সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া হত্যাকারীদের আড়াল করার চেষ্টা করেছে বলে অভিযোগ করেছেন তার ছেলে ড. রেজা কিবরিয়া। সোমবার (২৭ জানুয়ারি) গণমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাতকারে তিনি দাবি করেন।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে যাদেরকে হত্যাকাণ্ডে জড়িত উল্লেখ করে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে তারা কেউ এর সাথে জড়িত নয়। তিনি ঘটনার পুনঃতদন্ত করে প্রকৃত দোষীদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী করেন।
রেজা কিবরিয়া বলেন, ওই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে শেখ হাসিনা সরাসরি জড়িত কিনা সেটা আমি নিশ্চিত নই। তিনি জড়িত থাকতেও পারেন। তবে এটা আমি নিশ্চিত যে, তিনি হত্যাকারী এবং হত্যার মদতদাতাদের আড়াল করার চেষ্টা করেছেন। এটা তিনি সচেতনভাবেই করেছেন।
তিনি বলেন, হত্যার সাথে জড়িতদের আড়াল করে যারা জড়িত নয় তাদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। এই হত্যাকাণ্ডে বিএনপির কিছু নেতাদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। তারা কেউ এর সাথে জড়িত নন। হবিগঞ্জের সাবেক এমপি আবু জাহির, সাবেক এমপি আব্দুল মজিদ খান ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সদস্য ডা. মুশফিক হুসেন চৌধুরী মিলে আমার পিতা শাহ এএসএম কিবরিয়াকে গ্রেনেড হামলা চালিয়ে হত্যা করেছেন। সাবেক সরকারের উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান এ হত্যাকাণ্ডের অর্থ যোগান দিয়েছেন।
তিনি বলেন, আমি আমার পিতার হত্যাকাণ্ডের পুনঃতদন্ত চাই। আমি বিশ্বাস করি সঠিকভাবে তদন্ত করা হলে কারা এর সাথে জড়িত এবং কারা মদতদাতা বেরিয়ে আসবে। এর পিছনে শেখ হাসিনার কোন হাত ছিল কিনা সেটাও জাতি জানতে পারবে।
এদিকে আমাদের হবিগঞ্জ প্রতিনিধি হারুনুর রশিদ চৌধুরী জানান, বাবার মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে রোববার গণমাধ্যমে বক্তব্য দিয়েছেন ড. রেজা কিবরিয়া। সেখানে তিনি বলেছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের আর্থিক পৃষ্ঠপোষকতায় হবিগঞ্জের সাবেক এমপি আবু জাহির, সাবেক এমপি আব্দুল মজিদ খান ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সদস্য ডা: মুশফিক হুসেন চৌধুরী আমার পিতাকে মিলে হত্যা করেছে।
ড. রেজা কিবরিয়া বলেন, বিভিন্ন কারণে আমার বাবার সাথে সালমান এফ রহমানের শত্রুতা ছিল। সে তার ব্যাংকের দুর্নীতি ও শেয়ার মার্কেটের কেলেঙ্কারির জন্য আমার বাবার উপর ক্ষেপেছিল। সে কারণে সালমান এফ রহমান এ হত্যাকান্ডে পুরো ফান্ডিং করেছে।
রেজা কিবরিয়া বলেন, হত্যাকাণ্ডে জড়িত এরা সবাই শেখ হাসিনার প্রিয় লোক। তাই হত্যা মামলার সুষ্ঠু তদন্ত হয়নি। অসমাপ্ত তদন্তের ভিত্তিতে সুষ্ঠু বিচার হতে পারে না। আমি আশাবাদী এ সরকারের সময়ে না হয় ভবিষ্যতে একটা বিচার হবে। শুধু কিবরিয়া হত্যা নয়, হাজার হাজার পরিবার স্বজন হারানোর বিচার পায়নি। আমরা সেই বিচারের অপেক্ষায় রইলাম।
সাবেক অর্থমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতা শাহ এ এম এস কিবরিয়ার ২০তম মৃত্যুবার্ষিকী ২৭ জানুয়ারি। হবিগঞ্জ সদর উপজেলার বৈদ্যের বাজারে গ্রেনেড হামলায় নির্মমভাবে নিহত হন তিনি। শাহ এএমএস কিবরিয়ার মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ঢাকা ও হবিগঞ্জে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- হবিগঞ্জের বৈদ্যের বাজারে স্মৃতিস্তম্ভে পুস্পস্তবক অর্পণ, শোক র্যালি, দোয়া মাহফিল ও আলোচনা সভা।
প্রসঙ্গত, ২০০৫ সালের এদিনে হবিগঞ্জ সদর উপজেলার বৈদ্যের বাজারে স্থানীয় আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় যোগ দেন শাহ এএমএস কিবরিয়া। সভা শেষে ফেরার সময় দুর্বৃত্তদের গ্রেনেড হামলায় তিনি ও তার ভাতিজা শাহ মঞ্জুর হুদাসহ মোট ৫ জন নিহত হন। এতে আহত হন ৪৩ জন। এ ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে পৃথক দু’টি মামলা দায়ের করা হয়।
এ হত্যাকাণ্ডের বিচার শুরু হয়েছে প্রায় ৮ বছর আগে। কিন্তু নানা কারণে বিচারকার্যে দীর্ঘসূত্রিতা সৃষ্টি হয়েছে। এ অবস্থায় বিচার নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন নিহতদের স্বজন ও স্থানীয়রা। বর্তমানে উক্ত মামলা সিলেট স্পেশাল ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন।
খুলনা গেজেট/এএজে