খুলনা, বাংলাদেশ | ৫ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২০ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  গোপালগঞ্জ বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রক্টর নিয়োগ নিয়ে ছাত্রদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া
  ৭ দিনের জন্য আন্দোলন স্থগিত করেছেন তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা
  ইউনাইটেড হাসপাতালের চেয়ারম্যানসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা
  ৪০তম ব্যাচের ক্যাডেট এসআইদের সমাপনী কুচকাওয়াজ স্থগিত

বানের পানিতে সিলেটের নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত

গেজেট ডেস্ক

সীমান্তের ওপার থেকে বরাক নদী জকিগঞ্জের অমলসিদে দুই ভাগ হয়ে সুরমা ও কুশিয়ারা নদী নাম নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এই তিন নদীর মোহনায় একটি বাঁধ ভেঙে সিলেটের সীমান্তবর্তী উপজেলার ৪ ইউনিয়নে নতুন এলাকা প্লাবিত করেছে। বৃহস্পতিবার রাতে বাঁধ ভাঙার ফলে সিলেটে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। বন্যা পরিস্থিতি দীর্ঘায়িত হওয়ায় পানিবন্দি মানুষের দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে।

শুক্রবার নগরীতে পঞ্চম দিনে পানি কমলেও বিশুদ্ধ পানির ও রান্না করা খাবারের সংকট তীব্র হয়েছে। বন্যার পানিতে নগরীর মেন্দিবাগ এলাকায় অবস্থিত সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট প্লাবিত হয়েছে। পাশাপাশি চারটি পাম্প তলিয়ে যাওয়ায় পানি সরবরাহ করা যাচ্ছে না। এমন অবস্থায় কয়েকটি এলাকার পানিবন্দি মানুষ বিশুদ্ধ পানির সংকটে পড়েছেন। নগরীর শাহজালাল উপশহর এলাকায় বিদ্যুৎ বিভ্রাটের জন্য মানুষের দুর্ভোগ কয়েকগুণ বৃদ্ধি হয়েছে।

সিসিকের নির্বাহী প্রকৌশলী (পানি) আবদুস সোবহান জানান, ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট প্লাবিত হওয়ায় ময়লা পানি প্রবেশ করেছে। অন্যদিকে পানি সরবরাহের জন্য স্থাপন করা পাম্পগুলোও পানির নিচে থাকায় চারটি পাম্প বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে কিছু পাম্প চালু রয়েছে। সেগুলো দিয়ে এখনো যেসব এলাকার অবস্থা কিছুটা ভালো, তাদের পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, দুই হাজার লিটারের ভ্রাম্যমাণ পানির ট্যাংক দিয়ে কাউন্সিলরদের মাধ্যমে বিশুদ্ধ খাবার পানি সরবরাহ করা হচ্ছে।

সিসিকের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান জানান, পানিবন্দি নগরবাসীর জন্য পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, খাবার স্যালাইন ও শুকনো খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে। এ ছাড়া ১৩টি আশ্র কেন্দ্রে রান্না করা খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে। তবে রান্না করা খাবার খুবই অপ্রতুল বলে জানিয়েছেন আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়া মানুষ।

নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়া শুরু হয়েছে। অনেক বাসাবাড়িতে পানিবন্দি মানুষ পেটের পীড়ায় ভুগছেন। নগরীর যতরপুরের বাসিন্দা সুবির ঘোষ জানান, তার বাসার পার্শ্ববর্তী তিনটি বাসায় ডায়রিয়া দেখা দিয়েছে। পানি একটু কমায় চার দিন পর বাসা থেকে মোটরসাইকেল নিয়ে জরুরি কাজে বেরিয়েছি। তবে সীমান্ত এলাকায় বাঁধ ভাঙার খবরে আতঙ্ক বাড়ছে।

জকিগঞ্জ উপজেলার বারোঠাকুরী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মহসিন মর্তুজা টিপু জানান, বাঁধ ভেঙে বৃহস্পতিবার রাত থেকে প্রবল বেগে এলাকায় পানি ঢুকছে। এতে বারোঠাকুরী, কসকনকপুর, কাজলশাহ ও সুলতানপুর ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ নতুন করে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। ৩৫ ফুট লম্বা বাঁধটি কয়েক দিন ধরেই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় ছিল। স্থানীয়রা রাত-দিন চেষ্টা করে বালির বস্তা দিয়ে বাঁধ রক্ষার চেষ্টা করলেও শেষ রক্ষা হলো না।

এই বাঁধ ভাঙার কারণে জকিগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, কানাইঘাট, গোলাপগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জ, সদর ও নগরীর পানি আরও বৃদ্ধির আশঙ্কা করা হচ্ছে। জকিগঞ্জে তিন নদীর মোহনার বাঁধ ভাঙায় বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতির আশঙ্কা করে পানি উন্নয়ন বোর্ড, সিলেটের উপ-সহকারী প্রকৌশলী নিলয় পাশা জানান, এ পর্যন্ত ৩০-৩৫টি জায়গায় বাঁধ ভেঙেছে। যে গতিতে পানি আসছে, তাতে সবগুলো বাঁধই ঝুঁকিতে রয়েছে। পানি না কমলে এগুলো সংস্কার করাও যাবে না।

সিলেট জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, জেলার ১৩ উপজেলার মধ্যে ১০টি উপজেলার ৮৬টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়ে পড়েছে। এতে পানিবন্দি অবস্থায় আছেন ১৫ লাখ মানুষ। ২ হাজার ৪২১ হেক্টর আউশ ধানের বীজতলা, ১ হাজার ৭০৪ হেক্টর বোরো ধান ও ১ হাজার ৩৩৪ হেক্টর গ্রীষ্মকালীন সবজি বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। এছাড়া ৬৪০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্যাকবলিত হয়ে পড়ায় অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ রয়েছে।

বৃহস্পতিবার বিকেলে বিভাগীয় কমিশনার ড. মুহাম্মদ মোশাররফ হোসেন জেলা প্রশাসক মো. মজিবুর রহমান জকিগঞ্জ উপজেলার বন্যা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও ত্রাণ বিতরণ করেন। জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান জানান, পুরো জেলায় ৩২৬টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে ৭ হাজার ৩৪৯ মানুষ আছেন। এদের মধ্যে পর্যাপ্ত ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে।

খুলনা গেজেট/ টি আই




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!