বিশ্ব অর্থনীতিতে যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক আরোপের প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ বিনিয়োগকারীদের নিরাপদ বিনিয়োগের আশ্রয়স্থল স্বর্ণের দিকে ঠেলে দিয়েছে। এর ফলে স্বর্ণের দাম রেকর্ড ৩ হাজার ২০০ ডলারের উপরে উঠে গেছে।
চলতি সপ্তাহে বিনিয়োগের ‘স্বর্গরাজ্য’ স্বর্ণের মর্যাদা আরও স্পষ্ট হয়ে উঠে, যখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের ঘোষণায় মার্কিন স্টক, বন্ড ও ডলারের দামে তীব্র দরপতন ঘটে। বিশ্বব্যাপী মন্দার আশঙ্কা ওয়াল স্ট্রিটকেও গ্রাস করে। উচ্চ মাত্রার নতুন শুল্ক ৯০ দিনের জন্য স্থগিত ঘোষণা করা হলেও ঝুঁকি ও অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে। চীনের আমদানি পণ্যের ওপর শুল্ক আরও বাড়িয়ে কমপক্ষে ১৪৫ শতাংশ আরোপের বিষয়টি বিনিয়োগকারীদের প্রভাবিত করেছে।
সাংহাইভিত্তিক মূল্যবান ধাতু গবেষক লিউ ইউক্সুয়ান বলেন,বাজারে স্বর্ণ এখন সবচেয়ে ভালো জায়গা। নজিরবিহীন বাণিজ্য উত্তেজনা মার্কিন ডলারের প্রতি আস্থা হারিয়েছে। এর পরিবর্তে অন্যান্য সুরক্ষা সম্পদের দিকে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বেড়েছে।
এদিকে আন্তজার্তিক সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধের প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ বাড়ার পর শুক্রবার মার্কিন ডলারের দাম কমতে শুরু করে। এর মধ্যে বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগের নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে স্বর্ণের দাম রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে। ডলার ও মার্কিন ট্রেজারিগুলোর দাম কমে যাওয়ার পর স্বর্ণের দাম নতুন উচ্চতায় পৌঁছে গেছে। মার্কিন সরকারি বন্ডের বিক্রি আবার শুরু হয়েছে। বিনিয়োগকারীরা সুইস ফ্রাঙ্ক এবং স্বর্ণের মতো নিরাপদ আশ্রয়স্থল সম্পদের দিকে ঝুঁকছেন।
এই প্রথমবারের মতো সোনার দাম প্রতি আউন্সে ৩ হাজার ২০০ ডলারের উপরে উঠে গেছে। অন্যদিকে সুইস ফ্রাঙ্ক সর্বোচ্চ উচ্চতায় পৌঁছেছে। শুক্রবারও এশিয়ার শেয়ারবাজারে পতন ঘটেছে। শুক্রবার এশিয়ার শেয়ারবাজারে প্রথম দিকের লেনদেনে স্বর্ণের দাম ১.৪ শতাশ পর্যন্ত বেড়েছে।
দেশের বাজারেও স্বর্ণের সর্বোচ্চ দাম:
এদিকে বিশ্ব বাজারে দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশের বাজারেও স্বর্ণের দাম সর্বোচ্চ দরে পৌঁছেছে। প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম বেড়েছে সর্বোচ্চ ২ হাজার ৪০৩ টাকা। এর ফলে ভালো মানের ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম পড়বে ১ লাখ ৫৯ হাজার ২৭ টাকা। দেশের বাজারে এটিই এখন পর্যন্ত স্বর্ণের সর্বোচ্চ দাম। বৃহস্পতিবার রাতে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, স্থানীয় বাজারে তেজাবি স্বর্ণের (পিওর গোল্ড) দাম বেড়ে যাওয়ায় দাম সমন্বয় করা হয়েছে।
নতুন দাম শুক্রবার থেকে কার্যকর:
দেশের বাজারে নতুন দাম শুক্রবার (১১ এপ্রিল) থেকে কার্যকর হবে। বাজুসের নতুন সিদ্ধান্তের ফলে শুক্রবার থেকে দেশের বাজারে হলমার্ক করা প্রতি ভরি (১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) ২২ ক্যারেট মানের স্বর্ণ ১ লাখ ৫৯ হাজার ২৭ টাকা, ২১ ক্যারেট ১ লাখ ৫১ হাজার ৭৯৫ টাকা, ১৮ ক্যারেট ১ লাখ ৩০ হাজার ১১২ টাকায় বিক্রি হবে। এ ছাড়া সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম বেড়ে হবে ১ লাখ ৭ হাজার ৩৪৪ টাকা।
আগের দিন বৃহস্পতিবার পর্যন্ত প্রতি ভরি ২২ ক্যারেট স্বর্ণ ১ লাখ ৫৬ হাজার ৬২৪ টাকা, ২১ ক্যারেট ১ লাখ ৪৯ হাজার ৪৯৮ টাকা, ১৮ ক্যারেট ১ লাখ ২৮ হাজার ১৪১ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির স্বর্ণ ১ লাখ ৫ হাজার ৬৬৪ টাকায় বিক্রি হয়েছে। শুক্রবার থেকে প্রতি ভরি ২২ ক্যারেট স্বর্ণে ২ হাজার ৪০৩ টাকা, ২১ ক্যারেটে ২ হাজার ২৯৭ টাকা, ১৮ ক্যারেটে ১ হাজার ৯৭১ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির স্বর্ণে ১ হাজার ৬৮০ টাকা দাম বাড়বে।
৮ এপ্রিল রাতে স্বর্ণের দাম ভরিপ্রতি ১ হাজার ২৪৮ টাকা কমানোর কথা জানিয়েছিল বাজুস। এতে বলা হয়, বিশ্ববাজারে কমার কারণে দেশেও কিছুটা কমেছে স্বর্ণের দাম। সবচেয়ে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি (১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) স্বর্ণের দাম এক হাজার ২৪৮ টাকা কমিয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে এক লাখ ৫৬ হাজার ৬২৪ টাকা।
বাজুস বলেছে, স্থানীয় বাজারে তেজাবী স্বর্ণের (পাকা স্বর্ণ) দাম কমার পরিপ্রেক্ষিতে এই দাম কমানো হয়েছে। টানা চারদফা বাড়ার পর এবার কিছুটা কমেছে মূল্যবান এই ধাতুর দাম। আগামীকাল বুধবার থেকে নতুন দাম কার্যকর হবে।
এতদিন দেশের বাজারে ভালো মানের এক ভরি স্বর্ণের দাম ছিল এক লাখ ৫৭ হাজার ৮৭২ টাকা। গত ২৯ মার্চ থেকে এ দর ছিল। এটি ছিল স্বর্ণের সর্বোচ্চ দর। এ দর কমে এখন হয়েছে এক লাখ ৫৬ হাজার ৬২৪ টাকা।
নতুন দাম অনুযায়ী, প্রতি ভরি ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দর এক লাখ ৪৯ হাজার ৪৯৭ টাকা, ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি এক লাখ ২৮ হাজার ১৪১ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম এক লাখ ৫ হাজার ৬৬৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
সূত্র: ব্লুমবার্গ
খুলনা গেজেট/জেএম