বর্তমান পরিস্থিতিতে জনগণের চাহিদা ও আকাঙ্ক্ষা পূরণে ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকার বাজেট অবাস্তব নয়, তবে প্রস্তাবিত এই বাজেট বাস্তবায়নে সুশাসনই বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন।
জাতীয় সংসদে বৃহস্পতিবার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় এ মন্তব্য করেন তিনি।
জসিম উদ্দিন বলেন, ‘দেশের অর্থনীতির পরিকাঠামো বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বাজেটের আকারও প্রতিবছর বাড়ছে। তবে বাজেট বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ হচ্ছে সুশাসন, যথাযথ মনিটরিং, বিনিয়োগ ও উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে ব্যবসা-বাণিজ্যবান্ধব রাজস্ব ব্যবস্থাপনা সৃষ্টি। যেখানে বাজেট বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব আদায়ে দক্ষতা, স্বচ্ছতা, জবাবদিহি এবং তদারকের মান ক্রমাগতভাবে বাড়ানো দরকার। এজন্য চূড়ান্ত বাজেটে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা ও পরিকল্পনা নিশ্চিত করা জরুরি।’
এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, ‘প্রস্তাবিত বাজেটে করোনাভাইরাস মহামারি মোকাবেলায় অর্থনৈতিক পুর্নগঠন, ভ্যাক্সিনেশন ও স্বাস্থ্য সেবা কার্যক্রম জোডরদার করা, কৃষি, খাদ্য, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং কর্মসংস্থানকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এছাড়া টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি ২০৩০), প্রেক্ষিত পরিকল্পনা (২০২১-২০৪১), এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় গৃহিত কার্যক্রম ও অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার অগ্রগতির ধারাবাহিকতায় এই বাজেট প্রণীত হয়েছে।’
প্রস্তাবিত বাজেটে কর্মহীনতা ও আয়-হ্রাস নিয়ন্ত্রণে সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের আওতা বাড়ানো হয়েছে। এফবিসিসিআই সভাপতি মনে করছেন, বয়স্ক ভাতা কর্মসূচি, প্রতিবন্ধী ভাতা কর্মসূচি, বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতার ভাতা কর্মসূচির আওতা বাড়ানো ইতিবাচক।
এছাড়া বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ অন্যান্য অবকাঠামো উন্নয়নের বিষয়ে বাজেটে যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে তা বিনিয়োগ, শিল্পায়ন এবং কর্মসংস্থান প্রক্রিয়াকে গতিশীল করবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
জসিম উদ্দিন বলেন, ‘এসব অবকাঠামো উন্নয়নের ক্ষেত্রে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) আরও ভূমিকা রাখবে।
‘দক্ষতা উন্নয়নেও নজর দেয়া হয়েছে। মানব সম্পদের সার্বিক উন্নয়ন করা হলে স্বাভাবিকভাবে উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে।’
এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, ‘দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে রাজস্ব আদয়ের লক্ষ্যমাত্রা তেমন বৃদ্ধি করা হয়নি। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড নিয়ন্ত্রিত রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা, যা গত বছরের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার (৩ লাখ ১ হাজার কোটি টাকা) তুলনায় মাত্র ৯.৬৩ শতাংশ বেশী। তাই রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে ইন্টিগ্রেটেড ও অটোমেশন প্রক্রিয়া নিশ্চিত করা জরুরি।’
প্রস্তাবিত বাজেটে ঘাটতি মেটাতে স্থানীয় ব্যাংক ব্যবস্থার পরিবর্তে যথাসম্ভব সুলভ সুদে বৈদেশিক উৎস হতে অর্থায়নের প্রচেষ্টা বাড়ানোর পরামর্শ দিচ্ছেন এফবিসিসিআই সভাপতি।
তিনি বলেন, ‘বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও দেশীয় শিল্প সুরক্ষায় বাজেটে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এসব দিক ইতিবাচক হলেও ৫ শতাংশ অগ্রিম আয়কর (এআইটি) ব্যবসায়িক খরচ বাড়িয়ে দিচ্ছে। আমরা অগ্রিম আয়কর (এআইটি) বিলুপ্ত করার জন্য প্রস্তাব করেছিলাম, কিন্তু এ বিষয়ে বাজেটে কোনো প্রতিফলন দেখা যায়নি। অগ্রীম আয়কর যথাযথ সমন্বয় রিফান্ড না হওয়ায় পরিচালনা ব্যয় বৃদ্ধি পায়। পদ্ধতিগত জটিলতা নিরসন করে অগ্রীম আয়কর যথাসময়ে সমন্বয়ের জন্য পদক্ষেপ নেয়া জরুরি।’
খুলনা গেজেট/ এস আই