বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, ‘আমরা নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে নয়, স্থিতিশীল রাখতে চাই। আমরা অভিযান চালিয়ে প্রচুর ব্যবসায়ীকে ধরেছি। অনেকের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে। অনেককে জেলেও পাঠানো হয়েছে। তবে, এমন কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চাই না, যাতে বাজারে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়।’
সচিবালয়ের গণমাধ্যম কেন্দ্রে আজ সোমবার বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরাম (বিএসআরএফ) আয়োজিত ‘বিএসআরএফ সংলাপ’-এ এসব কথা বলেন বাণিজ্যমন্ত্রী। সংগঠনের সভাপতি তপন বিশ্বাসের সভাপতিত্বে সংলাপের উপস্থাপনা করেন সাধারণ সম্পাদক মাসউদুল হক।
এ সময় অন্যদের মধ্যে সংগঠনের যুগ্ম সম্পাদক মেহদী আজাদ মাসুদ, সাংগঠনিক সম্পাদক আকতার হোসেন, অর্থ সম্পাদক মো. শফিউল্লাহ সুমন, সদস্য ইসমাইল হোসাইন রাসেল, হাসিফ মাহমুদ শাহ উপস্থিত ছিলেন।
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, ‘এ মুহূর্তে পেঁয়াজের দাম একটু চড়া। তবুও দাম মানুষের নাগালের মধ্যেই আছে। কৃষক যদি পেঁয়াজের দাম ২৫ টাকা পায়, তাহলেও মোটামুটি পোষানো সম্ভব হয়। পরে সেটির সঙ্গে ট্রান্সপোর্টসহ কিছু কস্টিং যুক্ত হয়। আমরা কিছু কিছু ভালো কাজ করতে পেরেছি। আমরা ৬০ বিলিয়ন রপ্তানি করতে পারব বলে আশা করছি। ২০২৪ সালে ৮০ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করতে পারব বলে আশা করছি। ১৫০টির ওপর দেশে ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্য পাঠাতে পারছি। অন্যদিকে, ইথিওপিয়া ৯০ শতাংশ এসব পণ্য বাইরে থেকে আমদানি করে। পোশাক খাতে আরও ১০ লাখ কর্মী যুক্ত হবে বলে আশা করছি।’
ভোজ্যতেলের দাম বৃদ্ধির বিষয়ে টিপু মুনশি বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা জানতেন, ঈদের পর দাম বাড়বে। তারা সে সুযোগ নিয়েছে। তবে আমাদের ভুল হয়েছে টানা দুই মাস তেলের দামটা নির্ধারণ করিনি। যদি করতাম তাহলে তারা সুযোগটা নিতে পারত না। এ সময়ের মধ্যে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দামটা বেড়েছিল, তাই সেটি আগে ফিক্স করলে সমস্যাটা হতো না।’
ব্যবসায়ীরা সরকারকে নিয়ন্ত্রণ করে কিনা জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘সরকারের বাজার নিয়ন্ত্রণ করা উচিত না। আমরা ব্যবসায়ীবান্ধব। আমরা আন্তর্জাতিক বাজারের দাম অনুযায়ী দাম ফিক্সআপ করে দেই। সে অনুযায়ী বাজারে দামটা থাকলে বাজার স্থিতিশীল থাকবে।’
পেঁয়াজের বিষয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘পেঁয়াজের আইপি বন্ধ করে কৃষি মন্ত্রণালয়। কৃষকেরা যাতে দাম পান, সেটি দেখতে হবে। আমরা দেখছি, কৃষকেরা যাতে অন্তত ২৫ টাকা পান। বাকি ট্রান্সপোর্টসহ অন্য খরচ মিলে ঢাকার মানুষ ৪৫ টাকায় যাতে খেতে পারে। কৃষকেরা যাতে দাম পান এবং ভোক্তারাও যাতে কম দামে পেঁয়াজ কিনতে পারে, সেটি আমরা দেখছি।
বর্ডার হাট সম্পর্কে টিপু মুনশি বলেন, ‘মমতা ব্যানার্জির সঙ্গে এ বিষয় নিয়ে কথা বলেছিলাম। আশা করছি তিন-চারটি প্রোপাজাল দেব। মিজোরামে গিয়েও আলোচনা হয়েছে। ছোট রাজ্য হলেও তারা এটি খুব পজিটিভলি দেখছে। একটা সাজেকের কাছাকাছি, আরেকটি ২০ থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এটি নিয়ে দ্রুত দেখতে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘রাশিয়া-ইউক্রনের যুদ্ধ অনেকটা প্রভাব ফেলেছে আমাদের খাদ্যপণ্যের ওপর। সেজন্য সবাইকে সাশ্রয়ী হতে হবে। সামনের দিকে কিছুটা সংকট রয়েছে। ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আশপাশের শ্রীলঙ্কার অবস্থা দেখে অনেকে প্রচার করছে যে, সেরকম অবস্থা হতে পারে। সে রকম কোনো আশঙ্কা নেই। আমরা নিজেরাই শ্রীলঙ্কাকে ঋণ দিয়েছি।’
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আন্তর্জাতিক অবস্থা ভালো থাকলে দেশের অবস্থাও ভালো থাকে। আমরা বৈশ্বিক সমস্যার মধ্যে আছি। তেল, চিনি, ডালের দাম নিয়ে একটু সমস্যা হচ্ছে। তেলের ৯০ ভাগ আমাদের আমদানি করে আনতে হয়। আন্তর্জাতিক বাজারে দামের প্রভাব হলে আমাদের দেশেও দাম বেড়ে যায়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে কয়েকটি পণ্য আছে, যেগুলো আমরা মনিটর করি। ঈদের আগে তেলের দাম নিয়ে অনেক কথা এসেছে। আমাদের মন্ত্রণালয় প্রতি মাসে একবার বসে। ট্যারিফ কমিশন এই প্রাইজিংটা করে। সবকিছু অ্যাভারেজ করে দামটা নির্ধারণ করা হয়। আমাদের একটা বিশেষ কারণ ছিল, ঈদের মাসটাতে আমরা দামটা বাড়াতে চাইনি। ব্যবসায়ীদের বলেছিলাম, এ সময়টা ম্যানেজ করেন। তাই, যে সময়ে দামটা ফিক্স করা হয়, সেখানে কিছুটা বিলম্ব হয়। যেহেতু তারা ভেবেছিল, ঈদের পর দামটা বাড়বে, সেজন্য অনেকে তেল জমিয়ে রেখেছিল।’