বুধবার (২৭ মার্চ) সকাল ৯টা।বাগেরহাট জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের স্বাভাবিক কাজকর্ম শুরু হয়নি। এরই মধ্যে কার্যালয়ের শতাধিক নারী-পুরুষের ভীড়।ব্যানার নিয়ে দাড়িয়েছেন বাগেরহাট সদর উপজেলার ষাটগম্বুজ ইউনিয়নের কবিরাজের খাল, হরিবউল্লা ও পাচউয়াখালী নামের তিনটি খালের বাঁধ অপসারণের দাবিতে। বিভিন্ন সময় স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনকে অবহিত করেও কাজ না হওয়ায় বাধ্য হয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন করেন ষাটগম্বুজ ইউনিয়নের সায়ড়া, পূর্ব সায়ড়া ও লক্ষিখালী গ্রামের কৃষকরা। জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত আবেদনও করেন তারা। দ্রুততম সময়ের মধ্যে খালের অবৈধ বাঁ ও নেট-পাটা অপসারণের আশ্বাস দেন জেলা প্রশাসক মোহাঃ খালিদ হোসেন।
আশ্বাসে খুশি হয়ে ঘরে ফেরেন কৃষকরা। এদিন দুপুর নাগাদ বাগেরহাট সদর উপজেলার সহকারি কমিশনার (ভুমি) এম সাইফুল্লাহ পুলিশ, গ্রাম পুলিশ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে খালগুলো বাঁধ কাটতে যান। খবর পেয়ে স্থানীয় শতাধিক নারী-পুরুষ স্বতস্ফূর্তভাবে খালগুলোর অবৈধ কয়েকটি বাঁধ ও শতাধিকনেট-পাটা অপসারণ করেন।সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় খাল উন্মুক্তু হওয়ায় খুশি কৃষক ও স্থানীয়রা।
স্থানীয় বিউটি বেগম নামের এক নারী বলেন, খালগুলো প্রায় মৃত ছিল। বছর দেড়েক আগে কাটা হয়। এরপরই ক্ষমতাবান লোকজন খাল দখল করে মাছ চাষ শুরু করে। আমরা খালে নামতে পারতাম না, জমিতে পানি দিতে পারতাম না। আবার তাদের প্রয়োজনে ইচ্ছেমত লবন পানি ঢুকাতে। এখন বাঁধ কেটে খাল উন্মুক্ত করা হয়েছে, আমাদের অনেক সুবিধা হবে। খালের পানি ব্যবহারের পাশাপাশি পাড়ে সবজি করে খেতে পারব।
বাঁধ কাটায় অংশ নেওয়া অমিত কুমার মৈত্র বলেন, ওরা পাটা ও বাঁধ দিছিল, আমরা বাঁ ও পাটা কেটে দিয়েছি। এরপরে বাঁধ দিতে আসলে, কিভাবে শায়েস্তা করতে হয় তা গ্রামবাসী জানে। আমাদের সাথে প্রশাসন রয়েছে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য দুলাল রঞ্জন বলেন, সকালে জেলা প্রশাসকের কাছে বাঁধ অপসারণের দাবি জানাতে গেছিলাম। কিন্তু এত দ্রুত কাজ হবে বুঝতে পারিনি। এসিল্যান্ড সাহেবকে দেখে সবাই স্বতস্ফূর্তভাবে বাঁধ অপসারণে অংশ নিয়েছে। ষাটগম্বুজ ইউনিয়নে আরও খাল রয়েছে, যেসব খালে অবৈধভাবে মাছ চাষ করা হয়। সেসব খালও যদি দখল মুক্ত করা যায় তাহলে এলাকাবাসী উপকৃত হবে।
বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মোহাঃ খালিদ হোসেন বলেন, স্থানীয়দের আবেদনের প্রেক্ষিতে তিনটি খালের বাঁধ ও নেট-পাটা অপসারণ করা হয়েছে। এছাড়াও জেলায় যেসব খালে অবৈধ বাঁধ ও নেট-পাটা রয়েছে সেসব পর্যায়ক্রমে অপসারণ করা হবে। এজন্য সকলকে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করার অনুরোধ করেন জেলার এই শীর্ষ কর্মকর্তা।
বছর দেড়েক আগে পানি উন্নয়ন বোর্ড খাল তিনটি খনন করেছিল। এরপর থেকেই প্রভাবশালীদের দখলে ছিল প্রবাহমান খালগুলো।
খুলনা গেজেট/কেডি