কোটা সংস্কার আন্দোলনকে সমর্থন করে বাগেরহাটে শিক্ষার্থীদের আঁকা গ্রাফিতি, দেওয়াল চিত্র ও লিখন মুছে দেওয়া হচ্ছে। মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) দুপুরে শহরের বাগেরহাট সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের দেওয়ালে লেখা ও আঁকা মুছে ফেলতে দেখা যায় ৮-১০ জনকে। এ সময় তাঁদের পাশেই ছিলেন বিদ্যালয়টির কয়েকজন শিক্ষক।
প্রতক্ষদর্শীরা বলেন, দুপুর ১২টার দিকে বিদ্যালয়টির দেওয়ালে কোটা আন্দোলনের পক্ষে শিক্ষার্থীদের লেখা ও আঁকা মুছতে শুরু করেন কয়েক জন। সেখানে পুরো দেওয়ালে রং করা হচ্ছে না। তুলি-ব্রাশের সাহায্যে কেবল যে সব স্থানে লেখা ও আঁকা ছিল তা রং দিয়ে ঢেকে দেওয়া হচ্ছে। এই কাজে অংশ নেওয়ারা নিজেদের বাগেরহাট সককারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের কর্মচারি পরিচয় দিয়ে বলেন, প্রতিষ্ঠান প্রধানের নির্দেশে এগুলো মোছা হচ্ছে।
গত ১৯ জুলাই দেশের বিভিন্ন স্থানে ছাত্র হত্যার প্রতিবাদে ও আন্দোলনে সমর্থন জানিয়ে বাগেরহাট সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী নিজ বিদ্যালয়ের দেওয়ালে নানা স্লোগন লিখে প্রতিবাদ জানায়। ‘বুকের ভিতর দারুণ জড়, বুক পেতেছি গুলি কর’, ‘দমায় রাখতে পারেনি, পারবে না’, ‘বিদ্যালাভে লোকসান, নাহি অর্থ নাহি মান, হীরক রাজা বুদ্ধিমান’, ‘রক্তের দাম চাই’সহ ১৯ জুলাইয়ের লেখার পাশাপাশি এদিন গেল দু’তিন দিনে আঁকা গ্রাফিতি গুলোও মুছে ফেলতে দেখা যায়।
ওই সড়ক দিয়ে যাতায়াত করা কয়েকজন পথচারি বলেন, মঙ্গলবার সকাল ৯টার দিকে ৮-১০ জন তরুণী বিদ্যালয়ের দেওয়ালে ‘আমার ভাই মরলো কেন?’, ‘দিনে আটক, রাতে নাটক’, ‘গুলি করে আন্দোলন, বন্ধ করা যাবে না’সহ বিভিন্ন স্লোগনের পাশাপাশি দেওয়াল চিত্র আঁকতে শুরু করেন। এর কিছু সময়ের মাঝে সাদা পোশাকে আসা পুলিশের এক সদস্য সেখানে দেওয়ালের ছবি তোলেন। সে সময় কয়েক জন তরুণী পাশে লুকিয়ে যান। একটু অপেক্ষার পর মোটরসাইকেলে আসা পুলিশের আরেক সদস্য তাঁকে নিয়ে যান। পরে ওই তরুণিরা আবারও সেখানে এসে কিছু সময় আঁকা আঁকি করে। এরই মাঝে বেলা ১১টার দিকে পুলিশের একটি গাড়ি সেখানে আসে। তবে তারই আগে দেওয়াল চিত্র আঁকা ও লেখা তরুণীরা ওই এলাকা ত্যাগ করেন।
বাগেরহাট সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাইদুর রহমান মুঠোফোনে বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার জানা নেই।’
পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় দুই বাসিন্দা বলেন, দুপুরের পর ডিএসবি’র (জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার) পরিচয় দেওয়া এক ব্যক্তি তাঁর মোবাইলে থাকা লেখা ও আঁকায় অংশ নেওয়া মেয়ে শিক্ষার্থীদের ছবি দেখিয়ে তাদের পরিচয় জানতে চেয়েছেন।
দেওয়ালে লেখা-আঁকা মুছতে থাকাদের একজন নিজেকে বালিকা বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী পরিচয় দেওয়া মো. তহিদুল ইসলাম। দেওয়াল লিখন ও গ্রাফিতি মোছার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা তো আমার প্রতিষ্ঠান প্রধান ভালো জানে। তিনি আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন ওয়ালের লেখনী মুছতে।’
বাগেরহাট সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মমতা রানী বিশ্বাস বলেন, ‘ অনেক আগে থেকে দেওয়ালে কোন কিছু লেখাই নিষেধ। দেওয়াল লেখা থাকলে দেওয়ালটা অপরিস্কার দেখায়, এই জন্য মুছে দেওয়া হচ্ছে।’
খুলনা গেজেট/এএজে