খুলনা, বাংলাদেশ | ৮ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৩ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  অ্যান্টিগা টেস্ট: প্রথম দিনে ওয়েস্ট ইন্ডিজ তুলল ২৫০, বাংলাদেশ পেল ৫ উইকেট

বাগেরহাটে বনায়নের গাছ রক্ষার অযুহাতে কৃষকদের সবজি কর্তন, ১০ লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি

নিজস্ব প্রতিবেদক, বাগেরহাট

বাগেরহাট সদর উপজেলার কোমরপুর এলাকায় ভৈরব নদীর পাড়ে সামাজিক বনায়নের গাছ রক্ষার অযুহাতে শতাধিক কৃষকের বিভিন্ন ধরণের সবজি গাছ কেটে ফেলেছেন প্রতিপক্ষরা। রবিবার (২৭ আগস্ট) বিকেলে জেএমকে সামাজিক বনায়ন সমিতির সভাপতি অশোক কুমার ভৌমিক ও সদস্য আলতাফ শেখের নেতৃত্বে ৩০-৩৫ জন রামদা ও ছুরি নিয়ে এই গাছ কেটেছে। এতে ১০ লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেছেন কৃষকরা।

কৃষকরা জানান, ভৈরব নদীর পশ্চিম পাশে কোমরপুর এলাকায় নিজ মালিকানা ও সরকারি জমি লিজ নিয়ে মৎস্য ঘের করতেন কাটাখালী গ্রামের শতাধিক কৃষক। কয়েক বছর আগে পানি উন্নয়ন বোর্ড ভৈরব নদী খনন করেন। খননের পর থেকে মৎস্য ঘের সংলগ্ন নদীর তীরে কৃষকরা নানা রকম সবজির আবাদ করতেন তারা। ২০২০-২১ অর্থ বছরে সামাজিক বন বিভাগ এই নদীর পাড়ে ২০ হাজার ফলজ ও বনজ গাছ রোপন করে। বনায়নের পরেও সামাজিক বন বিভাগের অনুমতিতে প্রায় ৫ কিলোমিটার বাঁধের উপর স্থানীয় কৃষকরা ঢেড়স, লাউ, করল্লা, ডাটা, বরবটি, লাফা, সিম, ধুন্দলসহ নানা ধরণের সবজি চাষ করেন। কিন্তু জেএমকে সামাজিক বনায়ন সমিতির সভাপতি অশোক কুমার ভৌমিক ও তার সদস্যরা কৃষকদেরকে গাছ লাগাতে নিষেধ করতেন। তাদের নিষেধ না মানায় সমিতির সভাপতি অশোক কুমার ভৌমিকের নেতৃত্বে কৃষকদের সব গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। অশোক কুমার ভৌমিকের বিচার ও ক্ষতিপূরণ দাবি করেছেন কৃষকরা।

কৃষক শেখ এনায়েত বলেন, বন বিভাগের অনুমতি স্বাপেক্ষে নিজেদের মৎস্য ঘের সংলগ্ন ভৈরব নদীর তীরে ঢেড়স, লাউ, করল্লা, ডাটা, বরবটি, লাফা, সিম, ধুন্দলসহ নানা ধরণের সবজি লাগিয়েছিলাম। কিন্তু গাছ রক্ষার অজুহাতে জেএমকে সামাজিক বনায়ন সমিতির সভাপতি অশোক কুমার ভৌমিক ও তার লোকজন আমাদের গাছগুলো কেঠে ফেলেছে। আমার ঘেরের চকিঘরও (বাসা) ভেঙ্গে ফেলেছে তারা। মূলত গাছ রক্ষা তাদের মূল উদ্দেশ্য নয়, আমরা যাতে সবজি এবং ঘেরে মাছ চাষ না করতে পারি এজন্য তারা এটা করেছে। আমরা ক্ষতিপূরণ চাই।

জামিলা বেগম নামের এক নারী কৃষক বলেন, সবজি লাগিয়ে আমরা কিছু আয় করতাম। কিন্তু অশোক কুমার ভৌমিকের তা সহ্য হয়নি। এ কারণেই তারা আমাদের সবজি গাছ কেটে ফেলেছে।

অবসর প্রাপ্ত সেনা সদস্য কৃষক মোঃ কাওছার আলী মোড়ল বলেন, বেশিরভাগ গাছে ফুল এসেছিল, ফলও হয়েছিল কিছু গাছে। কেটে আমাদের শেষ করে দিয়েছে। কৃষকদের ১০ লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়েছে।

শেখ নজরুল ইসলাম নামের এক কৃষক বলেন, ফলন্ত গাছ কাটায় যে কষ্ট পেয়েছি, আমার গলা কেটে ফেললেও এত কষ্ট পেতাম না।

সঞ্জয় নন্দি নামের আরেক কৃষক বলেন, বন বিভাগ লাগিয়েছে ফলজ ও বনজ গাছ। আমাদের সবজি গাছ তাদের গাছের কোন ক্ষতি করেনি। কিন্তু আমাদের গাছ কাটল কেন। তাছাড়া বন বিভাগ তো আমাদেরকে সবজি চাষ করতে নিষেধ করেনি।

ভৈরব নদীর তীরে করা এই বনায়ন পাহাড়া দেওয়ার জন্য সামাজিক বন বিভাগের পক্ষ থেকে রুহুল আমিন ও সোবহান শেখ নামের দুই পাহাড়াদার রয়েছেন। গাছ কাটার বিষয়ে তাদেরকেও কিছু বলা হয়নি বলে জানান রুহুল আমিন। তিনি বলেন, বন বিভাগের পক্ষ থেকে গাছ পাহাড়া দেই। সমিতির লোকজন সবজি গাছ কাটবে এটা আমাকে বলেনি।

বারুইপাড়া ইউনিয়নের ৫ নং (কাটাখালি) ওয়ার্ডের সদস্য আবু সাইদ বলেন, গাছ কাটায় কাটাখালী এলাকার শতাধিক কৃষক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। তদন্তপূর্বক দোষীদের বের করে শাস্তি এবং কৃষকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি করছি।

সমিতির সভাপতি অশোক কুমার ভৌমিক বলেন, বন বিভাগের নির্দেশে আমরা সবজি গাছ কেটেছি। গাছ রক্ষার জন্যই এই গাছ কাটা হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।

তবে বন বিভাগ বলছে, কৃষকদের সবজি ও ফসল কাটতে কাউকে বলা হয়নি। সমিতির সভাপতি নিজের ইচ্ছায় এই গাছ কেটেছে।

সামাজিক বন বিভাগ বাগেরহাটের ষাটগম্বউজ এসএফএনটিসি এর ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা চিন্ময় মধু বলেন, কৃষকদের সবজি কাটতে কাউকে অনুমতি দেওয়া হয়নি। তবে গাছ কাটার একটি খবর পেয়েছি। দুই পক্ষকে খবর দেওয়া হয়েছে, আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা হবে বলে জানান তিনি।

 

খুলনা গেজেট/ বিএম শহিদুল




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!